আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমন বিয়ে আগে দেখেনি খাগড়াছড়ির মানুষ

my country creat me a ginipig এমন বিয়ে আগে দেখেনি খাগড়াছড়ির মানুষ আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি পাহাড়ে বিয়ে মানেই উৎসবের আমেজ। স্বজন প্রতিবেশীদের আনন্দ ফূর্তি। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরবে বর-কনে। খাওয়া-দাওয়াও হবে নিজেদের শত বছরের রীতি অনুযায়ী। গান-বাজনা ইত্যাদিতে মুখর থাকবে বাড়ি।

কিন্তু হেলিকপ্টারে চেপে বর-কনে এসে একরকম মহড়া দিয়ে উড়ে গেল ঢাকায়। এমন বিয়ে আর দেখেনি খাগড়াছড়িবাসী। এমন বিয়ে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে শহরে। বরই বা কে? কনের বাড়িই বা কোথায়? হেলিকপ্টারে করে বিয়ে? এত টাকার মালিক এই পাহাড়ির পরিচয় কী? এর মধ্যেই চাউর হয়ে গেল বর আগে আরো বিয়ে করেছেন। প্রথম বউয়ের অনুমতি না নিয়ে ফের বিয়ে! শুক্রবার এমন বিয়ের পর সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে এর ভেতর-বাহিরের নানা কথা।

ঢাকা থেকে একটি হেলিকপ্টার গত শুক্রবার দুপুরে জেলা শহরের সার্কিট হাউস মাঠে নামে। মুহূর্তেই ভিড় জমে যায় উৎসুক লোকজনের। স্বজনরা ফুল ছিটিয়ে বর-কনেকে স্বাগত জানায়। পরে মোটর শোভাযাত্রায় বর-কনে হাজির হন পর্যটন মোটেলে। বরের পোশাকে-আশাকে আদিবাসী বিয়ের মেজাজ না থাকায় অনেকেই বলেছেন, এতে তাদের সামাজিক ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মধুপুরের প্রয়াত সুনীতি রঞ্জন চাকমা ও পদ্মরেণু খীসার প্রথম সন্তান সুব্রত তালুকদার। কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞ সুব্রত ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। কনে সীমা চাকমা এখনো পড়াশোনা করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি রাঙামাটির বাঘাইছড়ির করেঙ্গাতলী গ্রামের প্রভাষমণি চাকমা ও কল্যাণী চাকমার মেয়ে। এ নব-দম্পতির বাগদান উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে।

এদিকে রাজকীয় এ বিয়ের আয়োজন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষত বরের আয়ের উৎস এবং প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এ বিয়েতে কেবল খাগড়াছড়িতেই খরচ করা হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা। হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মোতালেব জানান, হেলিকপ্টারটি আড়াই লাখ টাকায় ভাড়া করা হয়। এ ছাড়া রয়েছে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তির জন্য আপ্যায়ন, যানবাহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ।

এর আগে বাগদান অনুষ্ঠানসহ পুরো বিয়ের আয়োজনে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় হয় বলে বরের স্বজনরা জানিয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সুব্রত তালুকদার ২০০৫ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম বিয়ে করেন খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুসময় চাকমার বড় মেয়ে ইতুকি চাকমাকে। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি ডিভোর্স দিয়ে স্ত্রী ইতুকি বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। এ ঘটনায় একই বছরের ৮ আগস্ট ডিভোর্সের বিরুদ্ধে ঢাকার প্রথম শ্রেণীর আদালতে মামলা করেন সুব্রত।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল মামলার রায় হয়। রায়ে তাঁদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়নি বলে জানান আদালত। অবশ্য বিদেশে থাকায় এ ব্যাপারে ইতুকির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে চাকমাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ী প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় করা যায় না বলে অভিমত দিয়েছেন কয়েকজন সামাজিক নেতা। অধ্যাপক মধুমঙ্গল চাকমা বলেন, আইনগতভাবে ছাড়াছাড়ি না হলে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায় না।

বিয়ে করলেও তা বেআইনি হবে। প্রথম বিয়ে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সুব্রত তালুকদার। তিনি এ প্রতিবেদককে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান এবং প্রয়োজনে একান্তে আলোচনার প্রস্তাব দেন। প্রথম স্ত্রীকে নির্যাতনসহ অন্যান্য বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। সুব্রত বলেন, পাহাড়ের গাছগাছড়া আর পুকুরের মাছ বিক্রির টাকায় এ বিয়ে করেছেন তিনি।

এ ছাড়া তিনি ঢাকার সব আয়েই আয়কর দিয়ে থাকেন। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মাসুদ করিম জানান, হেলিকপ্টার নামার বিষয়ে প্রশাসন শুধু অনাপত্তি দিয়েছে। বরের আয়ের খোঁজখবর করা স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব না। চট্টগ্রামের সহকারী কর কমিশনার দ্বিজেন্দ্র লাল খীসা জানান, অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।