জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের দেশ আয়তনে অনেক ছোট আবার পারিবারিক পৃথকীকরণের কারণে প্রতি বছর চাষের জমি ভাগ হচ্ছে এবং জমির মাঝখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আইল। ফলে দিন দিন আইলের পরিমাণ বাড়ছে। অনেক আগের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশের সব আইলের আয়তন এক করলে প্রায় বৃহত্তর বগুড়া জেলার সমান হবে। কিন্তু এ আইলের প্রায় পুরোটাই অব্যবহূত পড়ে থাকে। কোনো উত্পাদনশীল কাজে ব্যবহূত হয় না।
কাজেই খাদ্যের অভাব পূরণে এবং সবজির চাহিদা মেটাতে এসব অব্যবহূত আইলসমূহ সবজি চাষের আওতায় আনা যায়। আইলে যেসব সবজি চাষ করা যায়:আইলে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা যায়। তবে সাধারণত যে সব সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শিম জাতীয় সবজি (দেশি শিম, বরবটি ইত্যাদি), ঢেঁড়শ, লাউ, পুঁইশাক, গিমা কলমি, কাঁকরোল, টমেটো, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কুমড়া, অড়হর, সরিষা ইত্যাদি।
মাঝারী উঁচু এবং উচুঁ জমির আইলে সারা বছর এ সব সবজি চাষ করা যায়। এতে মূল ফসল যেমন- ধান ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না, বরঞ্চ লাভই হয়।
বর্তমান চট্টগ্রামে এবং যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমির আইলে সবজি চাষ করা হয়। চট্টগ্রাম জেলার শীতাকুণ্ডু এবং মিরেরশ্বরাই থানা এলাকার জমির আইলে শিম চাষ করা একটি স্থানীয় পদ্ধতি। শিম চাষের এই পদ্ধতিকে চট্টগ্রাম পদ্ধতি বলে।
আইলে সবজি চাষের সময়: প্রধান ফসল অর্থাত্ ধান ফসল রোপণ বা বপনের সাথে মিল রেখে আইলে সবজি বপন বা রোপণ করতে হবে। আইলে সবজি চাষের নিময়াবলী:মাঝারী উঁচু এবং উঁচু জমির আইল সাধারণত সবজি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
বন্যা বা অতিবৃষ্টিতে ডুবে যায় এমন আইল সবজি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। প্রথমে আইলকে পরিস্কার করে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর যেসব সবজি ছিটিয়ে বুনা হয় সেগুলোর বীজ আইলের উপর বপন করতে হবে। আর যেগুলো মাদায়/গর্তে রোপণ করা হয় সেগুলোর জন্য মাদা/গর্ত করতে হবে। ধানের বীজতলা তৈরির সাথে সাথে পলিব্যাগে সবজির চারা তৈরি করে নিতে হবে।
জৈব ও অজৈব সার মিশিয়ে সুস্থ ও সবল চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা: আইলকে সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে নিতে হবে। এতে মাটির রস অনেকদিন ধরে এবং অধিক উত্পাদন পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন অনুযায়ী অনুমোদিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে।
লতা জাতীয় সবজিতে জাংলা দিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী সবজিতে সেচ না দিলে আশানুরূপ ফলন নাও হতে পারে।
আইলের সবজিতে বিভিন্ন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সবজির এসব বালাইকে আইপিএম এর আলোকে দমন করতে হবে। ধান ফসলের আইলে রঙিন ফুল জাতীয় সবজি চাষ করলে ধানের ক্ষতিকর পোকার পরজীবী বোলতারা এসব ফুলে আশ্রয় নেবে।
ফলে বোলতাদের বংশ বিস্তার এবং সংরক্ষণ হবে। এ সকল বোলতা ধান ফসলের ক্ষতিকর পোকার ডিম, কীড়া, পুত্তলী এবং পূর্ণাঙ্গকে পরজীবিতা করে বিনষ্ট করবে। সেক্ষেত্রে কৃষকদের বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করার তেমন প্রয়োজন হবে না। ফলে বালাইনাশক বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে এবং পরিবেশ নির্মল থাকবে। আইলে সবজি চাষ করে কৃষক তার চাহিদা মেটাতে পারবে এবং অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করতে পারবে।
এতে কৃষকের আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।