আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেউ আছে আশে পাশে

salehin.arshady@gmail.com আব্বুর বদলির চাকরি সুবাদে এবার উত্তর বঙ্গের এক মফঃস্বল শহরে তার পোস্টিং হল। অফিস থেকেই বাসা দিল আমাদের। ছোট্ট দু’তলা বাড়ী। একটু নির্জন একটা লোকালয়। অনেক খোলা মেলা জায়গা, আসে পাশে বাড়ী-ঘর লোক বসতি অনেকই কম।

এক তলায় আর একটি পরিবার থাকে। চার রুমের খুব ছিমছাম একটি ফ্ল্যাট। প্রথম দেখাতেই খুব পছন্দ হয়ে গেল। উত্তর দিকের বারান্দা সহ ঘর টার দখল নিতে ভাইয়ার সাথে অনেক ঝগড়া করতে হল। পুরনো বাড়ী বলেই হয়ত বারান্দায় রেলিং নেই।

বারান্দায় গিয়ে দেখি পিছনে দুটো লম্বা সুপারি গাছ আর আগাছায় ভরা জংলা মত একটা জায়গা। সারাদিন চলে গেল ঘর গুছাতে গুছাতে। অনেক রাতে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গেলাম। সেদিন অনেক গরম লাগছিল তাই জানালা টা খোলা রেখেই লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরলাম। একদমই নতুন একটা জায়গা।

তাই ঘুম আসছিল না। তবুও সারারাতের লম্বা ট্রেন জার্নি করার পর সারাদিন ধরে ঘর গুছানোর ফলে এক সময় তন্দ্রার মত চলে আসল। অনেক অদ্ভুর ভয়ঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখলাম সে রাতে এখনো আমার স্পষ্ট মনে আছে… ঘুট ঘুটে অন্ধকারে আট নয় বছরের ছোট একটা মেয়ে একা একা গ্রামের আইল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চারপাশে বিস্তৃন ধান ক্ষেত। হাঁটতে হাঁটতে সে একটি গাছ গাছালিতে ঢাকা মসজিদের সামনে চলে আসল।

ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা চিৎকার ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই চারপাশে। কিছু একটা দেখে মেয়েটা থমকে দাঁড়িয়ে গেল। হঠাৎ করে একটা আগুনের গোলা মসজিদের উপর থেকে ছুটে আসল মেয়েটির দিকে। মেয়েটি হতবিহ্বল হয়ে গোলাটির দিকে তাকিয়ে আছে। গোলাটা যেন তাকে আকর্ষন করে রেখেছে।

ছুটে পালানোর বৃথা চেষ্টায় তার চোখ মুখ কুঁচকে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই জায়গা থেকে নড়তে পারছে না। গোলার আগুন ঝাপিয়ে পরল মেয়েটির উপর। মেয়েটি অসহায়ের মত চিৎকার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। আমার দিয়ে তাকিয়ে যেন তাকে বাঁচানোর আকুতি করছে।

দেখলাম মেয়েটির চোখ যন্ত্রনায় কোটর থেকে ঠিকরে বের হয়ে আসছে। তার পেট ফেটে নাড়ি গুলো বের হয়ে গেল, তার শরীরের গরম লাল রক্ত ছিটকে আমার মুখে এসে লাগল। ভয়ঙ্কর স্বপ্নটি দেখে তন্দ্রা ভাঙে গেল আমার। অসম্ভব রকম হাঁফাচ্ছিলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।

অজানা এক ভয়ে শরীর থরথর করে কাঁপছিল। লাইট জ্বালিয়ে পানি খেলাম অনেক। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটানোর পর একটু ভালো লাগছিল। লাইট জ্বালিয়েই আবার গিয়ে শুয়ে পরলাম। ভাবলাম নতুন জায়গা, এমনিতেও ক্লান্ত ছিলাম তাই এমন উলটা পালটা স্বপ্ন দেখেছি।

কিন্তু পরদিন রাতে যা হল তার পর এটাকে কিছুতেই আর স্বাভাবিক ঘটনা বলতে পারছি না। খুলেই বলি তাহলে, পরদিন রাতে ঘুমাতে যাবার সময় আগের রাতের স্বপ্নটার কথা আমার মাথাতেই ছিল না। ঘরের টিউব লাইট গুলো নিভিয়ে যথারীতি শুয়ে পরেছি। অসম্ভব ঘুমে চোখ দুটো মুহুর্তেই বুজে আসল। হঠাৎ টের পেলাম আমার ঘরে কেউ একজন খুব মৃদু ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে।

আমার ঘুম যেন না ভেঙে যায় তাই যেন ইচ্ছা করেই এমন ভাবে পা টিপে টিপে হাঁটছে। মনে হচ্ছিলো পিছনের বারান্দা টপকে কোন চোর ঘরে ঢুকেছে। এমন আজব অনুভুতিতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখ খুললেই খুব ভয়ঙ্কর কিছু একটা দেখব ভেবে অন্ধকার ঘরে চোখ মেলে তাকাতে পারছিলাম না। আমি তার অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম।

অস্পস্ট ছায়ার মত আমার ঠিক পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি অনেক ভারী কিছু একটা আমার বুকে চেপে বসে গলা চেপে ধরল। আমার দম বের হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। সমস্ত শরীর যেন জমে বরফ হয়ে গেল। হাত পায়ে আমি কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না।

নাড়ানোর মত শক্তি তো দুরের কথা। তখন আমার মস্তিস্ক শুধু কাজ করছিল। আব্বু আম্মুকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু টের পেলাম মুখ দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছে না। ভয়ে দিশেহারা হয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করলাম।

শুন্যে হাত পা ছুঁড়তে লাগলাম। মাথার কাছের জানালার মরচে ধরা গ্রীলে হাত লেগে কেটে গেল। গলগল করে আমার রক্ত ঝরে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে শরীর অবশ হয়ে আসছে। কেন যেন বুঝতে পারছি আমি এখনই মরে যাব।

চোখের সামনে নীলাভ একটা আলো দুলছে যেন। যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়েছিল এই দুঃস্বপ্ন তেমনি হঠাৎ করেই সব থেমে গেল। বুক থেকে বোঝা নেমে গেল, হাত পায়ে সাড় ফিরে আসল। পাগলের মত নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। ভিতর থেকে কিছু একটা জেনে উঠে আসছিল।

টক বমি করে মেঝেতেই বসে পরলাম। বুকের ধড়ফড়ানির আওয়াজে আসহ্য রকমের এক অনুভুতি হচ্ছিল। যখন ভেবেছি সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে তখন ই অনেক গুলো নেড়ী কুকুর একসাথে কেঁদে উঠল। সেই নিঃস্তব্ধ রাতে কুকুরের কান্নার আওয়াজ কতটা মর্মান্তিক লাগছিল সেটা কাউকে বোঝাতে পারব না। অজানা শঙ্কায় কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম।

ঠিক সেই মুহুর্তে কারেন্ট চলে গেল। আমি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। এখন আমি অন্ধকার ভয় পাই। খুব ভয় পাই। প্রতিটি রাত আমার নির্ঘুম কাটে।

ফযরের আযান দেয়ার পর আকাশ যখন ফিকে হয়ে আসে তখন আমি শুতে যাই। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে বসে থাকি। একা একা…ভুল বললাম হয়ত। আমি একা থাকি না, কেউ না কেউ তো আছে আমার চারপাশে। আমি তার অস্তিত্ব টের পাই।

মাঝে মাঝেই শুনতে পাই কেউ ফিসফিস করে বলছে, তুমি কি অন্ধকার ভয় পাও মেয়ে? আমি আছি আশে পাশেই....  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।