আমি বিলাত থাকি, কামলা খাটি গাজী সাহেবের মিজাজ সক্কাল হইতে বহুত বিলা হইয়া আছে। নয়ন সম্মুখে যাহাকে দেখিতেছেন তাহাকেই কামড়াইতে ইচ্ছা করিতেছে। মিজাজ বিলা হইলে থাবড়াইতে চাওয়াই স্বাভাবিক বলিয়া গন্য হইয়া থাকে কিন্তু এই ক্ষেত্রে গাজী সাহেব বিশেষ ব্যাতিক্রম। তাই দূর্জনে তাহাকে আড়ালে-অবডালে বিশেষ শ্রেণীর প্রাণীকুলের নাম ধরিয়া ডাকিয়া থাকে। পূর্বে এই জাতীয় কথপোকথনে গাজী সাহেব প্রচন্ড ক্ষেপিলেও, বর্তমানে বন্ধু মাধবের পরামর্শে দাঁতে দাঁত পিষিয়া সবর ধরিয়া থাকে।
শপিদ বলিয়া এক দুষ্টু লোক এই সুযোগে গাজী সাহেবের উপর বহুত মজা লুটিয়াছে।
আজিকার মিজাজ বিলা হইবার কারণ একখান হইলেও তাহার সহিত আরো বহুবিদ বিষয় জড়ি্ত। দুষ্টু লোকের ফাইলামির বিষয় বাদ দিলেও সন্মানহানির বিষয়টা একেবারে ফেলিয়া দেয়া যায়না। তাহার উপর পিয়ারের বিবি কহিয়াছেন, "যাহা-তাহা হইলে চলিবেনা আমার সর্বসেরা চাই-ই চাই, না হইলে তোমার সংসারের খোমায় ঝাঁটা মারিয়া আমি চলিলাম বাপের বাড়ী। " ভরা ময়দানে গাজী সাহেব নিজের লুংগী খোয়াইতে পারেন কিন্তু বিবি বিনে তাহার চলিবেনা।
বিবি যদি সত্যই সংসারের মুখে ঝাঁটা মারিয়া যায় তাহা হইলে দূর্জন শপিদ তাঁহার আস্তা রাখিবেনা। তাহার উপরে চান্দির ছাগলের মতো উঠকো ঝামেলা যুক্ত হইয়াছে। দুষ্টু শপিদ যদি খোমাখাতায় মানে ফেসবুকে তাহাকে লইয়া দু'কলম কিছু লিখে তাহাতেই চান্দি ছাগল লাইক মারিয়া কমেন্ট করিয়া বসে, 'সুপার লাইক। রাগে রাগে দন্ত কিড়কিড় করিলেও লোকজন তাহার কমেন্ট দেখিবে বলিয়া মন্দ কিছু কহিতেও পারেনা আবার কামড়াইতেও পারেনা। বিচারা! তাহার উপরে অতি সম্প্রতি টাইমলাইন চালু করিয়া প্রাইভেসির বারোটা বাজিয়া গিয়াছে।
লন্ডনীর সহিত ঠেলাঠেলী না করিয়া দুষ্টু শপিদ তাঁহার পিছনে লাগিয়াছে। অথচ লন্ডনী খোমাখাতায় তাড়াইয়া তাড়াইয়া দুষ্টু শপিদের ইজ্জ্বতের হালুয়া রন্ধন করিয়াছে। তাহাতেও শপিদ ব্যাটার কোনো বিকার নাই। গত কিছুদিন আগে আর একখান বিষয় খিয়াল করিয়া গাজীসাহবের গাত্রদাহ শুরু হইয়াছে। তাহা হইলো খোমাখাতায় তাহার বন্ধু সংখ্যা মোটে ২৯১খান।
অথচ দুষ্টু শপিদের ৩২৪ আর লন্ডনী তো ছয়শত ছাড়াইয়া গিয়াছে বহু আগে। আর চান্দি ছাগল সেইদিন মাত্রই খোমা খাতায় নাম লিখাইয়া বন্ধুসংখ্যা শ ছুঁই ছুঁই। তবে আগডুম-বাগডুম এডাইনা কহিয়া এই যাত্রা সামলাইবার চেষ্টা করিলেও বাস্তবে তাহার পরিচিতির সংখ্যা নিতান্তই কম। ইহার একখান বিহিত করিবার পূর্বেই ঘর সামলাইবার দৌড়ঝাপ শুরু হইয়া গিয়াছে।
কিছুকাল পূর্বেই গাজীসাহেব একখানা চাঁদবদন পুত্র সন্তানের পিতা হইয়াছে।
তেনার বিবি দিন তিনেক লেবাররুমে কাটাইলেও সাহেবের তেমন ঝামেলা মনে হয় নাই। অবশ্য বাচ্চা তো আর সে পেটে ধরে নাই ঝামেলার কি বুঝিবে? যাহা ঝড় গিয়াছে বেচারি বিবি তাহা সামলাইয়াছে। কিন্তু, এখন বিবি বলিয়াছে, বাচ্চার নাম রাখিতে হইবে। যেনতেন নাম রাখিলে চলিবে না। নাম হইতে হইবে সেইরকম।
যাহা সহজে ডাকিয়া ফেলা যায় কিন্তু ব্যতিক্রম। পরিচিতজনের কাহারও সন্তানের নামের সহিত মিল থাকিতে পারিবেনা। এতসব শর্ত মানিয়া গাজী সাহেব যখন নাম সন্ধান করিতে গেলেন তখনই বুঝিতে পারিলেন এই শর্তে নাম রাখিবার চাইতে গর্ভবান হইয়া বাচ্চা জনম দেওয়া বহুগুনে সোজা। নানা পুস্তক ঘাটিয়া কোনো নাম পছন্দ করিলেই দেখা যায় একই নামে কোনো আত্মীয়ের সন্তানাদি বর্তমান। কিছুকাল পূর্বে এক তারকা দম্পতির যমজ সন্তানের নাম রাখা হইয়াছে হিং আর টিং।
বিবি-কে এই কথা জানানো মাত্রই তাড়াইয়া ঘরের কোণে ঠেসিয়া ধরিয়া কহিলো: "ওহে বোকাপাঁঠা মিনসে, তুমি তারকা হইলে তোমার সন্তানের নাম টিউবলাইট রাখিলেও পাবলিকে খাইতো। তুমি হইতেছো ম্যাংগো-জনতা। দু'আনা মুরোদ - তাই দেখিয়া শুনিয়া সাধারণ ও ভদ্র কিন্তু ব্যাতিক্রম নামই তোমার রাখিতে হইবে। "
তাই নাম বিষয়ক ঝামেলা লইয়া গাজী সাহেবের মিজাজ বহুত বিলা। কাউকে কামড়াইতে ইচ্ছা করিতেছে।
পুনঃশ্চ: এই কাহিনীর ঘটনা এবং নামসমূহ সম্পূর্ণ লেখকের কল্পনাপ্রসূত। বাস্তবের সহিত কোনো মিল পড়িয়া গেলে তাহা কাকতালীয় বলিয়া গন্য হইবে। কেহ মাইন্ড খাইলে নিজ দ্বায়িত্বে খাইবেন। মাইন্ড খাওয়ার উপর লেখকের কোনো হাত নাই। তবে মাইন্ড খাইলে জিন্দেগীতে সাইন করিতে পারিবেননা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।