আমি সত্যে অবিচল। ক্রেতারা তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন দেখেন। তাদের এই স্বপ্নকে কাজে লাগায় কিছু ধুরন্ধর প্রতারক ব্যবসায়ী। অনেক সময় তাদের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলদ্ধ হয়ে সাধারন ক্রেতারা এমন গ্যারাকলে আটকে যান যে, তাদের নাকের জল চোখের জল একাকার হয়ে পুরো জীবনটাই শেষ পর্যন্ত দুর্বিসহ হয়ে উঠে। অনেকে সারা জীবনের সঞ্চয়ই কেবল হারান না, ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে সর্বশান্ত হয়ে যান।
সরকার আইন করার সময় যদিও ক্রেতাদের বেশ কিছু স্বার্থ রক্ষা করেছে, কিন্তু এ আইনের ফাঁক ফোকরও কম নয়। সে কারনে ক্রেতাদেরই বেশী সাবধান হওয়া প্রয়োজন। চুক্তি করার সময় সবদিক খেয়াল রেখে চুক্তি করতে হবে।
১। বুকিং দেয়ার আগেই প্রজেক্টটা দেখে নিন।
ডেভেলপার আইনানুগ নিবন্ধিত কিনা তা ঝাচাই করে নিন। তাদের আগের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা, কিম্বা কোন বদনাম আছে কিনা তা-ও দেখুন। অতীতে তারা কাউকে ঠকিয়েছে কিনা তাও দেখুন।
২। জমির মালিকের সাথে ডেভেলপারের চুক্তিপত্র ও আমমোক্তারনামাটি দেখে নিন।
কি কি মালামাল দেয়া হবে তা বিশ্লেষন করে দেখুন। ফিটিংস কি উন্নতমানের নাকি মানসম্পন্ন তা দেখে নিন। এতে একটা বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। মান সম্পন্ন যে টাইলস ১০০/-টাকায় পাওয়া যায়, উন্নতমানের সেই টাইলস এর দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
৩।
মালামালের গুনগত মান, অনুমোদিত প্ল্যান, নক্সা এবং জমির স্বত্বের কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখুন। অনেক সময় দেখা যায়, নিম্নমানের রড ব্যবহার করে ইমারত নির্মাণ করায় ৪ তলার বেশী যেখানে করা উচিত নয়, সেখানে ৬-৭ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। মাটির নীচের ফাউন্ডেশন এবং উপকরনের গুনগত মান যাচাই করা জরুরী। এসব দেখার জন্যে একজন ভাল আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
৪।
ফ্ল্যাট-এর সাথে অনেকগুলো বিষয় জড়িত থাকে। যেমন, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সুয়ারেজ, পানি সরবরাহসহ আরো অনেক বিষয়। স্যানিটারী ফিটিংস, লিফট, জেনারেটর, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, পানি উত্তোলন ব্যবস্থা এর সব কিছুই চুক্তিতে উল্লেখ করুন।
৪। জমির মালিক এর সাথে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি কিভাবে হয়েছে, তা দেখে নিন।
জমির মালিক কোন কোন ফ্ল্যাট পাবেন তাও দেখে নিন।
৫। ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কেনার চুক্তি করার সময় সর্বশেষ কিন্তি দেয়ার সময়ের সাথে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের সময় সম্পৃক্ত করুন। ফ্ল্যাট রেডি করে হস্তান্তর ও দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রী দেয়ার সময় সর্বশেষ কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন মর্মে চুক্তিতে উল্লেখ করুন। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ডেভেলপারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ক্রেতারা নির্ধারিত সময়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করে দেয়ার পরও দখল দেয়া হয় না এবং দলিল রেজিষ্ট্রী করে দেয়া হয় না।
তারা ক্রেতা থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তির সব টাকা নিয়ে ফেললেও, প্রজেক্ট শেষ করতে অনেক বিলম্ব করে।
৬। আপনি কত বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনছেন, তার মধ্যে কমন স্পেস কতটুকু, আর মুল ফ্ল্যাট কতটুকু তা চুক্তিপত্রে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। সরেজমিনে বুঝিয়ে দেয়ার সময় কমবেশী হলে, কি করতে হবে তা আগেই নির্ধারন করে ফেলুন এবং চুক্তিপত্রে তা সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
৭।
কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ডেভেলপাররা যাতে পালাতে না পারেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হবে হবে যতটা পারা যায়। ফ্ল্যাট হস্তান্তরে বিলম্ব হলে ক্রেতা কি কি প্রতিকার পাবেন, তার বিস্তারিত আগেই ঠিক করে নিতে হবে।
৮। কত তলা পর্যস্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে তা দেখে ফ্ল্যাট কিনুন। অনেক সময় দেখা যায়, ৪-৫তলার অনুমোদন থাকলেও ৭-৮ তলা পর্যন্ত ক্রেতাদের নিকট আগাম বিক্রীর চুক্তি করে বসেছে।
৯। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্য কিনা তা-ও যাচাই করে নিন। কেননা সমস্যা হলে রিহ্যাব তা সমাধানে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তাদের সদস্য না হলে সেটা সম্ভব হয় না।
১০।
জমির স্বত্বের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিন। কেননা পরবর্তীতে আইনী জটিলতায় আটকে গেলে ক্রেতারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হন।
১১। চুক্তির শর্তগুলোর দিকে ভালভাবে লক্ষ্য রাখুন। কোন শর্ত ভঙ্গ হলেই কিছু অসাধু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঐ চুক্তি বাতিল করে দিয়ে ফ্ল্যাট পুনরায় অন্যের নিকট বিক্রী করে দেয়।
এভাবে একই ফ্ল্যাট কয়েকবার বিক্রী করার নজির আছে।
১২। কক্সবাজারে ৫ তারা মানের হোটেল কেনার ক্ষেত্রে দেখে নিন, আপনি যে রুমটা কিনছেন, সেটা ইতিমধ্যে কয় বেচা হয়েছে এবং আরো কত (বার) বেচা হবে। আপনার কাছে কত দিনের জন্যে বেচা হচ্ছে।
১৩।
প্রলুদ্ধ হয়ে তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করে ফেলবেন না।
(বিস্তারিত লেখকের প্রকাশিত ''জমি-জমার স্বত্ব নিরীক্ষা পদ্ধতি'' বইতে পাবেন) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।