তীব্র শীতে কাঁপছে সারা দেশ। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না লোকজন।
শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গত তিন দিনে অন্তত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের বেশির ভাগ বয়স্ক ও শিশু।
এ ছাড়া প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও হূদেরাগীদের অসুস্থতার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শীতজনিত নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
চুয়াডাঙ্গা: জেলার জীবননগর উপজেলায় গত তিন দিনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: কেশবপুর গ্রামের আবদুল মালেক (৪৫), ধোপাখালী গ্রামের আবদুল হক (৬৫), মহানগরপাড়ার শফিউদ্দিন (৬০), গয়েশপুর গ্রামের তরুণ নেছা (৭০) ও সাব্বির আহমেদ (১২), কয়া গ্রামের আরজি বানু (৮৫) এবং মেদেনীপুর গ্রামের শরিফুন নেছা (১০০)।
সদর হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ আবুল হোসেন জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হূদেরাগে অসুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে।
একই হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান জানান, তীব্র শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
জামালপুর: জামালপুর সদরে মঙ্গলবার রাতে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপপাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গত তিন দিনে শীত ও শীতজনিত রোগে সদর উপজেলার মাঠিখোলা গ্রামের শাকিল (৪), মেলান্দহ উপজেলার আবু তাহের, সরিষাবাড়ী উপজেলার চাপারকোনা গ্রামের আলো (২), জমিলা (৭০), হাটবাড়ী গ্রামের সাবিরন বেওয়া, ছাতারিয়া গ্রামের ভোলা মিয়া (৪০), চররৌহা গ্রামের লাইলী বেগম (৬০), শুয়াকৈর গ্রামের নিয়ামত আলী ও চকহাটবাড়ী গ্রামের হায়দার আলী (৬০) মারা গেছেন।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর): কালিয়াকৈর উপজেলার সদর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মো. বাবুল মিয়া (৪৫) গতকাল বিকেলে মারা গেছেন। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দোকানে কাজ করার সময় বিকেল চারটার দিকে তীব্র শীতে তিনি কেঁপে উঠে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাঁকে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে সেখানকার একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাটমোহর (পাবনা): চাটমোহর উপজেলায় মঙ্গলবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: আড়িংগাইল গ্রামের ছানা মহুরী (৬৫), আবু জাফর (৫৫) ও দড়িপাড়া গ্রামের আবুল হোসেন (৭০)।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সজিবুর রহমান জানান, তীব্র শীতের কারণে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অভয়নগর (যশোর): অভয়নগর উপজেলার বাগদহ গ্রামের মোমেনা বেগম (৬০) ও রানাগাতী গ্রামের মোবারেক মল্লিক (৭০) তীব্র শীতে গতকাল মারা গেছেন।
গোপালগঞ্জ: গত দুই দিনে জেলার মুকসুদপুর উপজেলার সোদ্দী গ্রামের মোহাম্মদ কারী (৫৫) ও কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের আমেনা বেগম (৬৫) মারা গেছেন।
কোটালীপাড়ার বান্ধাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মানিক হাওলাদার জানান, তীব্র শীতে আমেনা বেগম গতকাল সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পরপরই তাঁর মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে মোহাম্মদ কারী মঙ্গলবার রাতে শীতে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত একটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিরাজগঞ্জ: জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন পৌর শহরের আন্ধারকোটাপাড়া গ্রামের চামেলী খাতুন (৮০) ও তাঁর ছেলের বউ উজ্জ্বলী (৫৫)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল সাবরিন জানান, মঙ্গলবার রাতে চামেলী খাতুন তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত চাদরে আগুন লেগে মারা যান; আর তাঁর ছেলের বউ মারা যান শীতে কাহিল হয়ে।
মাদারীপুর: জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী আড়ুয়াকান্দি টেকনিক্যাল কলেজের বারান্দায় অজ্ঞাত এক নারীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে।
রাজৈর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী তিন-চার দিন ধরে সেখানে ছিলেন। শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁকে রাজৈর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ফরিদপুর: জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বড়ু খাতুন (৮০) সোমবার রাতে মারা গেছেন। তীব্র শীতে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর ছেলে হাসমত মাতুব্বর জানিয়েছেন।
গুরুদাসপুর (নাটোর): গুরুদাসপুরে তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। গত ১০ দিনে নয়টি শিশু গুরুদাসপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ওমর ফারুকের (৪) অবস্থা সংকটাপন্ন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।