ভাবনার কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কোন শুরু নেই কোনো শেষ নেই। ভাবনা ঠিকানাহীন, ভাবনা লক্ষ্যহীন। ভাবনা চলছে.। .।
ভাবনা চলবে.। .। ইচ্ছে মতন। নিজের মতন। H.S.C পরীক্ষার পর ভর্তি পরীক্ষা।
এরপর লম্বা ছুটি। ডিসেম্বর মাস। হাতে কোন কাজ নেই। এমন সময় এক বড় ভাই এক টিউশনীর খোজ দিলো। ছাত্রী এস এস সি পরিক্ষার্থী।
তিন মাস অংক করাতে হবে। আমার কোন অসুবিধে নেই। শুধু মনটা একটু খুত খুত করছিলো। পরীক্ষার আগের তিন মাস অংক করাতে হবে মানে রেজাল্ট এর দায়-দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। তিন মাস পড়িয়ে আড়াই বছরের কোর্সের দায়িত্ব নেয়া অনেকটা ঢেকি গেলার মতো।
আমি ঢেকি গিললাম। ছাত্রীকে অংক করাতে গেলাম। ছাত্রী মোটামুটি গাধা টাইপ। খবর পেলাম, এর জন্য নাকি গত দুই বছরে চার জন অংক শিখক রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সেই সব শিক্ষকরা যথেষ্ট মেধাবী না হওয়ায় তারা বাদ পড়েছে।
আমি ছাত্রীর মেধায় পুরোপুরি মুগ্ধ হলাম। যে ছাত্রীর মেধার সামনে আমার পূর্বাপর চার জন শিক্ষক পরাস্ত হয়েছেন তার সামনে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র মনে হতে লাগলো।
জীবনের প্রথম টিউশনি বলে আদা-জল খেয়ে লাগলাম। ছাত্রীকে পড়াই এক ঘন্টা আর আমি বাসায় হোম-ওয়ার্ক করি তিন ঘন্টা। প্রতিটি অংককে কিভাবে আরো সহজভাবে উপস্থাপন করা যায় তা নিয়ে রীতিমতো গবেষনা করি।
একটা বিষয়কে কতভাবে যে বোঝানোর চেষ্টা করি!!!! কষ্টের ফলও পেতে শুরু করলাম। প্রথমে মনে হয়েছিলো পাস করানোটাই কঠিন। কিন্তু ধীরে ধীরে মনে হতে লাগলো এর চেয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট ও সম্ভব। প্রতি সপ্তাহের নেয়া বিশ মার্কের পরীক্ষাতেও উন্নতির গ্রাফটা উর্ধমুখীই থাকলো। আমার পরিশ্রমের ফল পেয়ে আমি খুশি হতে থাকলাম।
দুইমাস পরে যখন প্রথম একশ মার্কের একটা পূর্ণাংগ পরীক্ষা নিলাম তখনই বাধলো বিপত্তি। ছোট ছোট পরীক্ষাতে পারা অংকগুলো বেশিরভাগই ভুল করলো বড় পরীক্ষায়। এতো দিনের পরিশ্রমের এই পরিণতি দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। যাকে গত দুই মাসে একটা কড়া কথাও বলিনি তাকেই আবোল-তাবোল যা ইচ্ছা তাই বকে চললাম আমি। কিছুক্ষন পর হুশ হতেই চমকে উঠলাম।
অপমানে লাল হয়ে ওঠা মুখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তখন তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে। আহত সে চোখে টলমল করছে অভিমানের অশ্রুজল।
বর্ণনাতীত সে সৌন্দর্যের আমি প্রেমে পড়লাম। সেই গোলাপী মুখ, আহত দু চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর অভিমানী অশ্রুজলের আমি প্রেমে পড়লাম। মানুষ নয়, তার একটি অভিব্যক্তির প্রেমে পড়লাম।
পরদিন পড়াতে গিয়ে কোন কারন ছাড়াই আবার বকা-ঝকা করলাম। এরপর আবার সেই মূর্তির দেখা মিলল। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, গোলাপী মুখ আর অভিমানী অশ্রুজল দেখে মনে হলো শুধু এই দৃশ্যটা দেখার আশাতেই আমি কাটিয়েছি আমার জীবনের এতোগুলো বছর। আমার জীবনের অতি আরাধ্য সে দৃশ্য যেনো আমার জীবনকে সার্থক করে দিলো।
বাসায় এসে নিজেকে শতবার প্রশ্ন করলাম।
কখনো তো ঐ মেয়েটার প্রতি কোনো আকর্ষন অনুভব করিনি। তবে কেনো শুধু ঐ বিশেষ অভিব্যক্তিটার প্রতি আমার এতো আকর্ষন? আমি কি মেয়েটার প্রতি দূর্বল? আমি কি............? কিন্তু নিজের মধ্যে দূর্বলতার কোন চিহ্নও খুজে পেলাম না। তারপরেও বিবেকের দংশনে দংশিত হলাম। অসহায় আক্রোশে টেবিলে মাথা ঠুকলাম। তবুও এই প্রশ্নের কোনো কূল-কিনারা করতে পারলাম না।
এরপরেও তাকে আরও এক মাস পড়িয়েছিলাম। আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক একটি মাস। ঐ দিনের পর আর কোনদিন কোনো কঠিন কথা তাকে বলিনি। চোখ তুলে তাকাইনি পর্যন্ত। ভয়ে।
অচেনা এক আমি’র প্রকাশিত হবার ভয়ে, যে সত্তাটি আমার কাছে বড্ড অপরিচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।