আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আর চাই না পুনোরাবৃতি । নতুন চলার পথ যেন আর পিচ্ছিল না হয় । হারাতে চাই না আর চাই, মিলে মিশে সবাই হতে চাই একাকার । হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান মোরা একই মায়ের সন্তান । একই রক্তে মোদের দেহ গড়া । একই পথে এসেছি মোরা, একই পথে যেতে হবে । মাঝখানে কেন এই হিংসা

এ কেমন বধ্যভূমি বাংলাদেশ! চলতে ফিরতে দেখা ॥ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ॥ ২০০৮ সালের ‘আঁতাতে’র নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। ক্ষমতায় আসীন হয়েই বাংলাদেশের স্বাধীন অসি-ত্ব নিয়ে এক ভয়াবহ খেলায় মেতে উঠেছে। একই সাথে আমরা লক্ষ করছি, এবার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় একেবারেই ১৯৭২-৭৫ সালের শাসনকালের পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছেন। এই পথযাত্রার একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে আমরা পই পই করে বলেছি, এ পথ ভুল। এ পথের প্রাকৃতিক পরিণতি ভালো হয় না।

আমি প্রকৃতিবাদী নই, ঈশ্বরবাদী। আল্লাহ তায়ালার বিচারে বিশ্বাস করি। প্রকৃতি মহান আল্লাহ তায়ালার অধীন। এটুকু সম্ভবত আমার শিক্ষা। শুধু আমার কেন, যারা এই বিশ্বাসে বেঁচে আছেন, তাদের সবারই শিক্ষা।

আইনস্টাইন মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, ‘Nature prefers simplicity, avoids vacuumÕ প্রকৃতি সরলতা পছন্দ করে, শূন্যতা পরিহার করে। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার সরলতা উপেক্ষা করেছিল। কিন' ভাবেননি যে, প্রকৃতি শূন্যতা পরিহার করে। ফলে একেবারে প্রথম থেকেই তিনি রাষ্ট্রযন্ত্র-প্রশাসনে আওয়ামী লীগের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। সেটি করতে গিয়ে তিনি ভীষণ বিপদে পড়েছিলেন।

বলেছিলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে আনি, চাটার দল সব খেয়ে ফেলছে’। তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি’। তার অর্থ এই, স্ববিরোধিতায় ভুগছিলেন তিনি। চাটার দল খেতে পারছে কেন? আপনি চোরের খনি পেলেন, অথচ বন্ধ করে দিলেন না কেন? সেই খনি থেকে অবিরাম চোরদের জন্য উত্তোলন করতে থাকলেন। আমরা তখনো সংবাদপত্রে লিখেছি, খনি থেকে আর দয়া করে চোর বের করবেন না।

চোরদের সরিয়ে দিন। আর আপনার যে চাটার দল নব-উত্থিত দেশ থেকে আপনারই ভিক্ষালব্ধ অর্থ খেয়ে ফেলে, তাদের শায়েস-া করুন। মুজিবও আমাদের মতো সাংবাদিকদের সে কথা শোনেননি। বরং সংবাদপত্রে যাতে তার সরকারের ব্যর্থতার কোনো চিত্র প্রকাশিত না হয়, সে জন্য আইন করে দেশের সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সময় যে বদলে গিয়েছে, ‘আঁতাতে’র প্রধানমন্ত্রী সেটি কিছুতেই উপলব্ধি করতে পারছেন না।

তার মুজিব অন-ঃপ্রাণ শেখ মুজিবুর রহমানের ভুল থেকে উনি কোনো শিক্ষা গ্রহণ করতেও নারাজ। ফলে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিসি'তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ‘আঁতাতে’র মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এবার লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করে দেয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান ভারতকে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার সাময়িক অনুমতি দিয়েছিলেন। ভারত পরীক্ষামূলক ২১ দিনের জন্য সে বাঁধ চালু করেছিল।

ভারত ৩৭ বছর ধরে সে বাঁধ চালু রেখেছে। মাঝখানে জিয়াউর রহমান এর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘে গিয়ে আন্তর্জাতিক নদী বিষয়ে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যখন আন্দোলন শুরু করলেন, তখন মাত্র কয়েক বছরের জন্য ভারত গঙ্গায় পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য হয়েছিল। তারপর যে তিমিরে, সে তিমিরে এসেই শেখ হাসিনার অতি কাছের এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তিনিও এ নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি। তিনি নিজে তো করছেনই না, উপরন' ভারতের সাথে এমন এক ৩০ বছরের চুক্তি সেরেছেন যে, ভারত পানি দিক বা না দিক বাংলাদেশের কিছুই বলার থাকবে না। উপযুক্ত সন-ানই বটে।

এই চুক্তি সম্পাদনের পর ২০০১-০৭ সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন ছিল। তারা যে খুব বেশি উচ্চবাচ্য করেছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। অথচ উচ্চবাচ্য দরকার ছিল। ওই চুক্তির বিরুদ্ধে যাওয়া উচিত ছিল জাতিসঙ্ঘে, আন-র্জাতিক আদালতে। বিএনপি সরকার তা যায়নি।

ফলে আওয়ামী লীগ এবারে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রই যেন ভারতের যূপকাষ্ঠে বলি দিতে চাইছে। তার অনেকটাই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রবহমান নদী বিষয়ে আন-র্জাতিক আইন আছে। নদীর গতিপথ কেউ রুদ্ধ করতে পারে না। আওয়ামী লীগও না।

বিএনপিও না। অথচ ভারতকে করিডোর দেয়ার জন্য সরকার তিতাস নদীর স্রোতপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। নদী বন্ধ করে দিয়ে তার মাঝখান দিয়ে তৈরি করেছে সড়ক। ওপাশে পানি, এপাশ ধু-ধু। তিতাস মৃত।

শস্যের জমিনে পানি নেই। কৃষকের হাহাকার। নৌপরিবহনে তীব্র সঙ্কট। ভারতকে করিডোর দেয়ার জন্য নদী মেরে ফেলতে হবে? শুধু নদী নয়, শাখানদী, খাল ভারতীয় করিডোরের জন্য সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে করিডোর সড়ক প্রতিষ্ঠা করেছে শেখ হাসিনা সরকার। মানুষ হাহাকার করছে।

এই সরকারকে তারা চিনতে পারছে না। আরো চেনা যাচ্ছে না সরকারের গুপ্তহত্যার দুর্বুদ্ধির কারণ। প্রধানমন্ত্রী কখন কী বলেন, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। তার কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্ত্রীরা কখন কী বলেন, তারও ঠিকঠিকানা নির্ণয় করা যায় না। কিন' প্রধানমন্ত্রী তো হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেনই।

ফাঁসি দিয়ে দিয়েছেন। তাহলে দেশের দরিদ্র জনগণের ওপর তার এমন প্রতিহিংসা কেন? বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণ অতি সাধারণ মানুষ। তারা হিংসা-বিদ্বেষ বোঝে না। সহজে প্রতিবাদ করে না। কিন' যখন প্রতিবাদ করে, তখন তা অপার সৌন্দর্যের আকরিক হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিব শাসনের শেষ দিকে ভয়ঙ্কর কতগুলো ঘটনা প্রতিদিন ঘটছিল। সংঘটিত হচ্ছিল গুপ্তহত্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ও শামসুন্নাহার হলের মধ্যবর্তী জায়গায় একটা জঙ্গলের মতো ছিল। প্রতিদিন সেখানে গুপ্তহত্যার শিকার তরুণ-যুবকের (মানুষের) লাশ পাওয়া যেত। এখন পরিসি'তি প্রায় তেমনই দাঁড়িয়েছে।

এখন বধ্যভূমি মুন্সীগঞ্জ, আশুলিয়া। এখানেই লাশ ভেসে ওঠে। লাশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বর্তমান সরকার এক চরম হত্যাযজ্ঞের শুভ উদ্বোধন করেছে। এই সরকার আদালতের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় জেল থেকে মুক্ত করে এনেছে।

কাকে ক্ষমা করতে হবে বা ক্ষমা করতে হবে না, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন নন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সে বিষয়ে সিদ্ধান- নেবেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি না চাইলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে খুনিকে ক্ষমা করতে বাধ্য। তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, প্রধানমন্ত্রী খুনিদের ক্ষমা করতে চান। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তার হাতিয়ার মাত্র।

কিন' প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এখন মানুষের যে শ্রদ্ধা নেই, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি এখনো সে শ্রদ্ধা আছে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তিনি অত্যন- ভদ্রভাবে আওয়ামী লীগকে একীভূত রেখে দল সুসংহত রেখেছেন। র‌্যাটস (রাজ্জাক-আমু-তোফায়েল-সুরঞ্জিত) যখন আওয়ামী লীগ বিভক্তির নানা ফর্মুলা দিচ্ছিলেন, তখনো দৃঢ়তার সাথে তিনি সবাইকে একত্র রেখেছেন। সর্বস-রের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করেছে। কিন' ধারাবহিকভাবে পৈশাচিক খুনিদের মুক্ত করে দিয়ে তিনি বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

কোথাও না কোথাও সর্বজনের শ্রদ্ধা নিয়ে তিনি দাঁড়াতে পারতেন। বলতে পারতেন, আমি এটা মানি না। বলতে পারেননি। কিন' আমাদের ধারণা ছিল, তার বিবেকবোধ আছে। তিনি পারবেন।

কিন' প্রমাণিত হলো, তিনিও এক নির্বাক ব্যক্তি মাত্র। আমরা যে কথা বলছিলাম, ১৯৭২-৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় গুম-খুন এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। এখনো সারা দেশে তেমন পরিসি'তির সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ হিসাব করলে সে ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীরা এই গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন।

মিটিং-মিছিলে ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি যারাই সামনে থাকে, বিভিন্ন স'ানে ধারাবাহিকভাবে তাদের লাশ পাওয়া যায়। এমনকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিষ্কণ্টক করার জন্য প্রশাসনযন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার উৎসব চালানো হচ্ছে। কোনো তদন- নেই, উৎসের সন্ধান নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বলে দিয়েছেন, ২০০১ সালের চারদলীয় জোটের নির্বাচনে বিজয়ের পরে কী ঘটেছিল। তার তুলনায় এখন এমন কিছুই হচ্ছে না।

বিএনপির দু-চারজন নেতাকর্মী কী যায়-আসে? মহামান্য প্রধানমন্ত্রী, কিছু না কিছু যায় তো আসেই। এখন লোকে বলে আপনার বধ্যভূমি হয়েছে মুন্সীগঞ্জ ও আশুলিয়া। ’৭২ থেকে ’৭৫-এর শাসনকালে এ রকম বধ্যভূমির অপবাদ রটেছিল। শামসুন্নাহার হল ও জগন্নাথ হলের মাঝখানে। আপনি তা শুনতে পেয়েছিলেন কি না জানি না।

কিন' এসব গুপ্তহত্যা রোধে সরকারি কোনো ব্যবস'ার খবর আমরা পাইনি। এখন বাংলাদেশে যেকোনো সময় যে-কাউকে যে-কেউ হত্যা করতে পারে। বিচার-আচারের কোনো ভয় নেই। এত যে গুপ্তহত্যা প্রতিদিন হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি তার কোনো একটিরও বিচারের জন্য দৃঢ়তার সাথে নির্দেশ দেননি। বরং নাটোরের পৌর মেয়র সানাউল্লাহ নূর বাবুর ঘাতকদের অনুকূলে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

হয়তো ঝিকরগাছা বিএনপি সভাপতির গুম-খুনের পক্ষেও আপনার বক্তব্য আছে। জানি না। কিন' প্রকৃতি সরলতা পছন্দ করে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে এমন পরিসি'তির উত্তরণ ঘটবেই। লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।