আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই অসভ্যগুলোর রেজিস্ট্রেশন এক্ষুণি বাতিল করা হোক। এরা ডাক্তার নয়, ডাকাত।

Prothom Alo ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১১, ৬ পৌষ ১৪১৮, ২৪ মহররম ১৪৩৩ অ্যাডহক চিকিৎসকেরা গ্রাম থেকে শহরে চাকরি ইউনিয়নে, থাকছেন জেলা-উপজেলায় অ্যাডহক চিকিৎসকেরা গ্রাম থেকে শহরে শেখ সাবিহা আলম | তারিখ: ২০-১২-২০১১ নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মাথায় গ্রাম ছেড়ে শহরের হাসপাতালে চলে এসেছেন অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ চিকিৎসক। তাঁদের কেউ কেউ এখন ঢাকায়, আবার অনেকে যোগদানের দিন থেকে অনুপস্থিত। সরকার নতুন করে তাঁদের মেডিকেল কলেজে শিক্ষক পদে পদায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), সরকার-সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংসদেরাও এসব চিকিৎসককে ফিরিয়ে আনতে তদবির করছেন। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত বছরের জুলাই ও এ বছরের এপ্রিলে দুই দফায় চার হাজার ১৩৩ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয় নিজ জেলা কিংবা আশপাশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব চিকিৎসকের বড় অংশ থাকছেন উপজেলা ও জেলায়। আর তাঁদের চাকরিস্থল ইউনিয়ন পর্যায়ে। বেতন-ভাতাও তুলছেন ইউনিয়ন থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি এমন ১৩ জনকে সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, কয়েকজন চিকিৎসক নেতার কাছে পুরো অধিদপ্তর জিম্মি। চিকিৎসকদের বদলি নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়া (ডাবলু), স্বাচিপের মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএর মহাসচিব শারফুদ্দিন আহমেদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এই নেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে উপ-কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা পদের কয়েকজন কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকজন সাংসদ বলেন, অ্যাডহক চিকিৎসকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েতউল্লাহ বলেন, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালেও চিকিৎসকদের সংকট। দেশে ২৪ হাজার চিকিৎসকের প্রয়োজন, আছেন ১৬ হাজার। সে কারণে অনেক চিকিৎসককে প্রেষণে আনতে হচ্ছে। তদবির প্রসঙ্গে প্রত্যেক নেতাই তাঁদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বদিউজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, তিনি তদবির করেন না, বরং যাঁরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এডহক চিকিৎসকদের সরিয়ে আনার ব্যাপারে আমি তদবির করি না। অবেদনবিদ্যা ও মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ে চিকিৎসকদের সংকট আছে। এসব বিষয়ে কেউ আগ্রহ দেখালে দরখাস্ত করেন। আমরা তখন সুপারিশ করি।

সেটাকে ঠিক স্বজনপ্রীতি বলা যায় না। ’ ইকবাল আর্সলান বলেন, মাঠপর্যায়ের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয় এমন কিছু তিনি করতে চান না। সরেজমিন: ভোলা, সুনামগঞ্জ, কক্সবাজার, শেরপুর, কুমিল্লা, মাদারীপুর, নোয়াখালী, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে যাঁরা অ্যাডহক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগ প্রেষণে জেলা ও উপজেলায় চলে এসেছেন। কুমিল্লার ১৬টি উপজেলার ১৮৩টি ইউনিয়নে দুই দফায় দেড় শতাধিক অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক শহরে চলে এসেছেন।

চুয়াডাঙ্গায় ৩১টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৫টিতে চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন। দুজন চাকরিতে যোগ দিয়ে মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত। অন্যান্য জায়গার চিত্রও একই। বেশ কয়েকজন অ্যাডহক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের যেখানে বদলি করা হয়েছে, সেখানে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই।

কিন্তু ব্যতিক্রমী চিকিৎসকও আছেন। কুমিল্লা শহর থেকে বেশ দূরে ভুঞ্জর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে মো. মমিনুল্লাহ কাজ করছেন। এলাকাবাসী তাঁর প্রশংসা করেছেন। মমিনুল্লাহ জানান, তিনি ওই এলাকায় স্থায়ীভাবে থাকছেন। একই সময়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ পেয়েছেন এমন কয়েকজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই অ্যাডহক চিকিৎসকদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটু বেশি সহানুভূতিশীল।

দুই বছর গ্রামে কাজ করার পরও তদবির না করে তাঁরা উপজেলা বা জেলায় আসতে পারছেন না। কিন্তু অ্যাডহক চিকিৎসকেরা চলে যাচ্ছেন। অ্যাডহক চিকিৎসকদের গ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রেষণে উপজেলা-জেলায়: কুমিল্লার দাউদকান্দির ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে ১২ জন অ্যাডহক চিকিৎসক কাজ করছেন। ২০১০ সালের ১ জুলাই দোনারচর ২০ শয্যা হাসপাতালে মুমতাহেনা আমীর, গৌরীপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফারজানা রেজা, স্বপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফারহানা সুলতানা, দৌলতপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে শায়রীন আক্তার, পাঁচগাছিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে তানিয়া জহির, বিটেশ্বরে মোস্তফা কামাল পাশা, পদুয়ায় আবদুল কাদের মো. মহিউদ্দিন, দাউদকান্দি উত্তরে হাসান মাহমুদ ইকবাল, দৌলতপুরে মামুনুর রশীদ, সুন্দলপুরে নাহিদ মাহমুদ, জিংলাতলিতে মিয়া মমতাজ দৌলত আলম ও ইলিয়টগঞ্জে জামালউদ্দিন কাজে যোগ দেন।

তাঁদের কেউই এখন আর ইউনিয়ন পর্যায়ে নেই। কাদের মো. মহিউদ্দিন উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি নিয়ে বিদেশে। সম্প্রতি গৌরীপুর, মোহাম্মদপুর, দৌলতপুর, স্বপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টায় দৌলতপুর কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন অ্যাডহক চিকিৎসক কাজ করছেন।

তাঁদের কর্মস্থলও ইউনিয়ন পর্যায়ে। আফরোজা আক্তার প্রেষণে জেলা হাসপাতালে এসেছেন। কুমিল্লার সিভিল সার্জন আবুল কালাম মো. সিদ্দিক বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নে স্থাপনা নেই। এসব জায়গায় যাঁদের পদায়ন করা হয়েছে, তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদের প্রেষণে উপজেলায় নিয়ে আসার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

শেরপুরের ৫২টি উপজেলার ৪৩টিতে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের ৩৭ জন জেলা সদর হাসপাতালসহ নালিতাবাড়ী, নকলা, শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১১টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে এসেছেন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, কাজের পরিবেশ নেই বলে তাঁরা কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। তাঁদের একজন উম্মে নাজনীন ইসলাম ঝিনাইগাতি কাংশা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি হয়ে এসেছেন।

নোয়াখালীতে নিয়োগ পাওয়া ৯১ জন চিকিৎসকের ২০ জন বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, কিছু কিছু ইউনিয়নে চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি সরেজমিনে সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের হরিহর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিনি সপ্তাহে দু-এক দিন আসেন। ডুমুরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, সেখানে একজন নারী চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তবে এলাকাবাসী তাঁকে কোনো দিন দেখেনি। নোয়াখালীর সিভিল সার্জন আহম্মদ হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। তাই অ্যাডহক চিকিৎসকদের দিয়ে জরুরি বিভাগ চালানো হচ্ছে। যোগদানের দিন থেকে অনুপস্থিত: ঠাকুরগাঁয় ৪৩ জন অ্যাডহক চিকিৎসকের মধ্যে ১০ জন যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত। শেরপুরে অনুপস্থিত আছেন তিনজন, কুমিল্লায় একজন ও নোয়াখালীতে ছয়জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েতউল্লাহ বলেন, প্রান্তিক মেডিকেল কলেজগুলোয় কয়েকজন চিকিৎসককে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে শুধু যশোরে সাতজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে, দুজনকে ময়মনসিংহে, দুজনকে বগুড়ায়, রংপুর ও দিনাজপুরে একজন করে শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। [প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনোয়ার হোসেন, দাউদকান্দি থেকে আবদুর রহমান, শেরপুর থেকে দেবাশীষ সাহা রায়, ঠাকুরগাঁও থেকে মজিবর রহমান, সুনামগঞ্জ থেকে খলিল রহমান, নোয়াখালী থেকে মাহবুবুর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।