"বিষাক্ত রাজনীতির উদ্গীরন নাকি রাজনীতির গরল পান? দু-একটি রাক্ষুসে রাজনৈতিক দল। " তারপর আনমনে সিগারেটের ধোঁয়া উদযাপন। কবিতা লিখতে বসে শব্দাভাবে ভুগে ভীষন রকম। অনুভূতির ঝড় লন্ডভন্ড করে হৃদক্রীয়া। অব্যাক্ত ভাষারা কেবল নিরবে কাঁদে।
বিকট কান্নার শব্দ তবু তরঙ্গায়িত হয়না বাতাসে। কখনো কখনো মাথায় চিন চিন ব্যাথা করে।
সময় কাটাতে অসুবিধে নেই সিগারেট আড্ডায়। দেশ ভাবনা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। এত সহজে মরতে কে চায়? সকালে রুটি-চা, দুবেলা ভাতের চেয়ে স্বাধীনতার মূল্য আর কোথায়! আমি পাচ্ছি, আমি খুসি।
বেঁচে আছি, আার বেশী দরকার কী? আচ্ছা স্বাধীনতা মানে কি?
কোনটা সঙ্গত আর কোনটা অসঙ্গত সেটা রাজনৈতিক ভাবনা। আমাদের জানের ভয়। বোধ হয়, স্বাধীনতা নামের কিছু একটা একটা ভুল করে রেখে গেছেন আমাদের পূর্ব পুরুষগন। তারপর থেকে আমরা স্বাধীন। তবে এত "ফালাফলির" কি দরকার?
মাথা চিন চিন করে ব্যাথা করছে।
মৃদু আঁধারে ঘুমের মতো পরিবেশ। ঘুমের মধ্যেই মনে হয় জেগে আছি নাতো! হাতে বোধ হয় সিগারেটটা জলছে। ঠোঁটে সিগারেট চুম্বনের ক্ষমতা নেই। এমনো হতে পারে, হাতে কোনো সিগারেটই নেই। অবচেতন মনের বিকৃত কল্পনা।
ঘুমালে কি কিছু দেখা যায়? উদম গায়ের লাশটি কি এখনো জ্যান্ত? অবুরুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা তার স্বভাব। লাশটির সাথে পরিচয় আছে, কথোপকথোন হয়না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই বুঝি যেন কিছু বললো !
চোখের কয়েক ইঞ্চি দুরে থেকে, হঠাৎ চিৎকার করে বললো "ফিরায়া দে আমার স্বাধীনতা। বাঁচার জন্য মরেছি। মৃত্যুর জন্য আমি মরি নাই।
"
স্বাধীনতা নামের দু-টাকার কাঁচা মরিচ ফিরিয়ে দিতে মস্তিষ্ক তখন উদ্যত। সেই সাথে ফিরে আসতে লাগলো মানব আকৃতির চামড়ায় ঢাকা কিছু হাঁড়, সদ্য জন্ম নেয়া কিছু মৃত শিশু, ঠোঁটের কোনে রক্ত ঝরতে থাকা কিছু নারী, পরনে ছেড়া শাড়ী, দেহের যতটুকু দেখা যায় শুধু নির্যাতনের দাগ। আসে কিছু লাশের স্তুপ, নদীতে ভাষন্ত লাশ, খোঁড়াতে খোঁড়াতে আসতে থাকে শকুন কুকুরে ছিড়ে খাওয়া লাশের টুকরো। আর উর্দূ হরফে লেখা পাকিস্তানি শোষনতন্ত্র।
প্রচন্ড চিৎকার এসে থেমে যায় অবুরূদ্ধ কন্ঠে।
" আমি দেবনা এ স্বাধীনতা, এটা আমার। আমার পূর্বপুরুষদের দান। না না কিছুতেই দেবনা....."
"হা হা হা...." হাসির শব্দ তরঙ্গায়িত হয় বাতাসে। প্রতিশব্দের কম্পন ভীতি সঞ্চার করে হৃদপিন্ডে। লাশেরা কি হসতে জানে?
এ লাশের হাসি হতে পারেনা।
লাশের হাসিতে আকাশ কাঁপেনা। লাশের হাসিতে এমন আঁতরের গন্ধ থাকেনা। তুমি কি জীবিত?
"পাঁজরের নিচে ফুটো ফুসফুসটা এখন আর নেই। পোকার আহার ছিল এক সময়। গায়ের মাংস এখন জৈব সার, গাছের খাদ্য।
দু-চারটি হাঁড় বোধহয় পেতে পারিস। "
"উফ আমি আর শুনতে পারছিনা। প্লিজ চলে যাও এখান থেকে। আমি উম্মাদ হতে চলেছি। আমায় উম্মাদ করো না প্লিজ।
চলে যাও...."
"ব্যাস! অনেক বলেছিস তুই। এই স্বাধীনতা আমার দেয়া। আমি সংসদ দিয়েছি কুকুর বসার জন্য নয়। আমার এই পতাকা শকুনের রক্ষা কবজ নয়। সেদিন রাজপথে পড়ে থাকতে দেখেছি পতাকার ছেড়া টুঁকরো! তবে কি আমি তোদের এই নষ্ট স্বাধীনতার ইতিহাস? ত্রিশ লক্ষ প্রানের কসম, আমি রক্ত স্বাধীনতার হিসেব চাই, বিচার চাই।
"
লক্ষ লক্ষ লাশের মিলিত কন্ঠে ধ্বনিত হয় বার বার, "হিসেব চাই, বিচার চাই"। একে একে উঠে আসে ত্রিশ লক্ষ লাশ। তার মাঝেই দেখা যায়, ডোবায় গলে যাওয়া কয়েক লক্ষ শিশুর লাশ আর শকুনে খাওয়া লাশের টুকরো। রক্তে ভেজা ধুলো পোকারাও সামিল হয় সেই মিছিলে।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে।
সিগারেটটা জ্বলতে জ্বলতে আঙ্গুলে এসে যন্ত্রনা দেয়। বেসিনের ট্যাপ কলে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। দরজার নিচ দিয়ে এসেছে দৈনিক পত্রিকা। শোনা যায় গনজাগরন মঞ্চের প্রতিবাদে পতাকা ছেড়া হয়েছে, ভাঙ্গা হয়েছে শহীদ মীনার। কেউ বা গনজাগরন মঞ্চে যায় টাকার লোভে।
চা-রুটি দিয়ে স্বাধীনভাবে ব্রেকফার্স্ট করে শ্রাবন্তি আর সে। মাথাটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে। অবন্তের মাথায় তবু ঘুরপাক খায়, "হিসেব চাই, বিচার চাই। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।