আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ একদিন “ব্লগ” নামে একগুচ্ছ সামাজিক প্লাটফর্ম ছিলো....” !

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । “ একদিন “ব্লগ” নামে একগুচ্ছ সামাজিক প্লাটফর্ম ছিলো....” ! ব্লগটি খুলতেই চোখ গেল “দৃষ্টি আকর্ষন” করা একটি লেখার দিকে । ব্লগার ফিউশন ফাইভ সেখানে লিখেছেন- “স্মরণাতীতকালে এমন দুঃসময় আর এমন মহাদুর্যোগ আর আসেনি, বাংলা ব্লগমণ্ডল এখন যার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। ব্লগার—এই মুহূর্তের বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র, সবচেয়ে দুর্ভাগাও।

“ লেখার সারাংশ হলো, সরকার ব্লগের উপরে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছেন । সরকারের এমোন হস্তক্ষেপ মেনে নিতে পারা গেলোনা । কেন গেলোনা বলি - ব্যক্তিকে, রাষ্ট্রকে, ধর্মকে ( এখানে দেখলাম ধর্মটাই প্রধান হয়ে উঠেছে নইলে কেবল আলেম উলেমাদের সাথে আলোচনা করার দরকার ছিলোনা । এই উদ্দেশ্যই যদি না হয়, তবে উচিত হবে সকল শ্রেনীর সাধারন মানুষদের সাথে আলোচনা । ) আঘাত করে আর কথা বলা যাবেনা এমোনটাই সরকারী কর্তৃপক্ষের অভিলাষ ।

কিন্তু তাদের কে ভেবে দেখতে বলি, রাজনীতির মাঠে প্রতিদিন ব্যক্তিবিশেষের চরিত্র হরনকারী রাজনীতিক রাঘব-বোয়ালদের, বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্মের ইতিহাস কে ব্যঙ্গ- বিদ্রুপকারী , জাতির জনকের নামে কুৎসা রচনাকারী তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর কথাকে কেন নিয়ন্ত্রনে আনা হবেনা ? নাকি সরকারী কর্তৃপক্ষ বলে রাজনৈতিক সার্টিফিকেটধারী “সরকার” আর “বিরোধী” দলকে তারা কিছু বলবেন না ? দোষ কি কেবল ব্লগারদের ? নিয়ন্ত্রনের জন্যে গঠিত কমিটির সদস্য আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আবু আহমেদ জমাদার বলেছেন, “প্রচলিত আইন অনুযায়ী দোষী প্রমাণিত হলে আপত্তিকর মন্তব্যকারীদের এক কোটি টাকা জরিমানা এবং ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ” । আমার জিজ্ঞাসা, এই জরিমানা কি কেবল আস্তিক আর নাস্তিকদের জন্যে ? কারন এটিই মূখ্য আজকের এই “মাথাব্যাথা সারাতে মাথাটিকেই কেটে ফেলা” জাতীয় প্রচেষ্টার । অন্যকে আঘাত করে, এমোন কথা কি কেবল ব্লগেই হয় ? রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে হয় না ? হ্যা এটা ঠিক, সেখানে ধর্মীয় দলগুলি বাদে কেউই ধর্মকে আঘাত দেন না, আঘাত করেন ব্যক্তি বিশেষকে, দলকে , রাষ্ট্রকে । সেখানে এই কমিটির ভুমিকা কি হবে, যখন তাদের সাধু উদ্দেশ্য বাক-স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রন করা বা শোভনীয়তার ভেতরে রাখা ? তারা কি শুধু ব্লগেই হাত দেবেন ? মনে পড়ে, সামু ব্লগে ব্লগার মুরশীদ এর একটি পোষ্ট এর লেখায় একটি মন্তব্য করেছিলাম ।

কারন উনি কিছুদিন আগে ব্লগের উপরে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে আশা করেছিলেন এই বলে – “Authority should not obstruct the media for few who violate ethics and abuse freedom of writing, rather should work out ways to control and castigate them.” । বাক-স্বাধীনতায় যারা লাগাম টানতে চান তাদের ভেবে দেখার জন্যে আমার সেই মন্তব্য থেকে কিছু তুলে দিচ্ছি – “....পাশাপাশি উদাহরন দিয়ে বলি - ব্লগ হলো ক্লাসরুম-বোর্ডের মতো । ক্লাসরুমের এই বোর্ডের উপর বিভিন্ন শিক্ষক বিভিন্ন বিষয়ের উপরে লিখে নিজের আহরিত জ্ঞান তার ছাত্রদের সাথে ভাগ করে নিয়ে তৃপ্তি পেতে চেষ্টা করেন তাদের শেখানোর মাধ্যমে । এটিই নিয়ম । এর বাইরে চ্যাংড়া ছেলেপিলেরা বোর্ডের উপরে মাঝে মাঝে অনেক অশালীন কথাও লিখে থাকে শিক্ষকদের অনুপস্থিতিতে ।

তাই বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাসরুম-বোর্ড সরিয়ে ফেলেনা দেয়াল থেকে । এটা একটা আহাম্মকী কাজ । বুদ্ধিমানের কাজ হলো ঐ চ্যাংড়া ছেলেপিলেদের শোধরানো কিমবা একান্ত তা না পারা গেলে স্কুল থেকে বহিস্কার । কারন ক্লাসরুম-বোর্ডই হলো শিক্ষক-ছাত্রের মাঝে “টুলস অব কমিয়্যুনিকেশান । ” যে লেখাটিকে নিয়ে আমি এটি লিখছি তাতে শত মন্তব্য এসেছে ।

সবই স্বতঃস্ফূর্ত । কোনটা রেখে কোনটা বলি ! সেখানে ব্লগার বুনোগান বলেছেন: নাস্তিক মানেই যে 'ধর্ম অবমাননাকারী' এভাবে কেন 'নাস্তিক'দের উপস্থাপন করা হচ্ছে? যে কোন ধর্মে থেকেই একজন 'ধর্ম অবমাননাকারী' হতে পারে। ঢালাও ভাবে ব্লগারদের নাস্তিক বলাটা যেমন মুর্খামি, তেমনি ঢালাও ভাবে নাস্তিকদের 'ধর্ম অবমাননাকারী' বলা হলেও সেটা মুর্খামিই আর ধর্ম অবমাননাকে কি কখনো সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব? যে কোন গঠন মূলক ধর্মীয় আলোচনা অন্য পক্ষের নিকট অবমানকর মনে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধর্ম বা রাজনীতি বিষয়ে সৎ আলোচনাও সম্ভব নয়। ব্লগ সকল ধরনের আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করে মানুষকে আলোকিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।

এবার এর মুখে লাগাম দিয়ে আমাদের সেই অন্ধকার মধ্যযুগেই ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ধর্ম নিয়ে নেগেটিভ পজেটিভ যে কোন আলোচনা কি ধার্মিকদের ঈমানকে আরো সমৃদ্ধ করে না? আমরা চাই আলোকিত মানুষ, কূপমুন্ডকতা নয়! ব্লগার রেজোওয়ানা বলেছেন:যখন বেশির ভাগ ভালো' কে এড়িয়ে গিয়ে কেউ স্বল্প' সংখ্যক মন্দকে হাইলাইট করে তখনই বোঝা যায় উদ্দেশ্য মোটেও সাধু নয়! ব্লগার জুল ভার্ন বলেছেন: ইন্টারনেট বা অনলাইনে তথ্য বিনিময়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার ধারা অব্যাহত রাখা খুব জরুরি। গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। জনগণের “সুস্থ্যমত” প্রকাশের অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ বা কোণঠাসা করতে পারে এমন ধরনের কোন নীতিমালা প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন করা আদৌ কাম্য নয়। সর্বশেষ, বাক স্বাধীনতার পক্ষে যেমন সবার সোচ্চার থাকা উচিত, আবার এর অপব্যবহার থেকেও সচেতনভাবে বিরত থাকাই হবে সবার জন্য কল্যাণকর।

এই যে এতো এতো ধরনের মতামত তাকে রুখে দেবে এমোন সাধ্য কার ? এমোনটাই যদি হয় তবে তাকে “দুঃসাধ্য”ই বলতে হবে । সামাজিক ব্লগগুলি যে সারা বিশ্বে মানুষের কথা বলার দরজা খুলে দিয়েছে , মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, বাক-স্বাধীনতাকে সুউচ্চে তুলে ধরেছে তাদের ক’টিকে নিয়ন্ত্রন করবে সরকার ? হাযারো ব্লগারদের একজন হয়ে আমি যে ধারনাটি পোষন করি তা তুলে ধরে কিছু ভাবনার খোরাক দিচ্ছি, যারা যারা এই অবিবেচক কাজটিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে কাজ করছেন তাদের জন্য , এমোনকি আমাদের ভোটে নির্বাচিত সরকারের জন্যেও - “ব্লগকে যে ভাবেই সঙ্গায়িত করা হোক না কেন মূলটা তো এখানেই যে, এটা ব্লগারদের দিনমানের খেড়োখাতা । খেড়োখাতায় যতো আঁকাবুকি – কাটাকুটিই করি না কেন শেষমেশ তার নির্যাসটুকু তো আমার নিজের কথাই বলে, আয়নায় আমার মুখটিই দেখায় ! আমি কে...কেমন লোকটি আমি ! খুব কষ্ট নিয়েই বলছি – এখানে আমাদের অনেকের মুখটিই তার সুন্দরতা হারিয়ে ফেলেছে । কদর্য্য হয়ে উঠছে দিনেদিনে । আমার ব্লগ যদি আমাকেই দেখায়, তবে সেখানে আমার ছবিটি কেমন ? আমার রূচি -আমার শিক্ষা – আমার স্বকীয়তা – আমার নিজস্ব ধ্যানধারনার সুন্দর এবং সত্যিকারের ছবিটি কি আমি সেখানে লটকে দিতে পেরেছি ? ক্ষয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার মতো আমার ব্যক্তি-মুখখানাও ঢেকে যাচ্ছে আমারই উগরে দেয়া বর্জে ! আমি কি এখানটাতে সচেতন ? অন্যে “মন্দ” বলে, আমি নিজে “ভালো” হবোনা কেন ; এই বোধটি কি আমি লালন করি ? লেখা তো যে কেউই লিখতে পারেন , দিতেও পারেন ।

এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক স্যামুয়েল লাভার এর একটি উদ্বৃতিকে একটু ঘুরিয়ে না বললেই নয় – “মানুষের যখোন একবার কথা বলার চুলকানী ওঠে তখোন তার উপশম করতে পারে একমাত্র কলমই । কিন্তু আপনার যদি কলম না থাকে তবে ধারনা করি- সম্ভাব্য সকল উপায়ে আপনি চুলকোতে চাইবেন” । আপনার প্রতিটি লেখাই যে ভাষার অথবা মানুষের : সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে এই সত্যটাই আমি -আপনি ভুলে যাই বারবার । লিখতে পারাটা ব্লগের জন্যে কঠিন কিছু নয়, কঠিন হলো আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা আর আপনাকে তুলে ধরছেন কি ভাবে । শেরিল কনোলী, সাহিত্য কি তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন - যখোন ভাবনারা ভীড় করে আসে তখোন শব্দগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে ।

তাই আমাদের ভাবনার অসুস্থ্যতার কারনেই আমাদের পোষ্টখানাই ব্যবহৃত শব্দ সহ “দুর্গণ্ধ” ছড়ায় । “ আর আমাদের সকল ব্লগারদের জন্যে এটুকু- “এইখানটাতে আমাদের যে আরো সতর্ক, সংযত, রূচিশীল হতেই হয় , আজকের জন্যে এবং আগামীকালের ও । প্রতিটি ব্লগারই একটু সচেতন হলে আমরা হয়তো এই “অচলায়তন” ভেঙ্গে ফেলতে পারি । যে লেখক আবেগময়তার সাথে মানুষের পূর্ণতাকে বুঝতে অক্ষম, নিজের সৃজনশীলতার শোভনীয়তা – অশোভনীয়তা বুঝতে অক্ষম, ব্লগে তার আত্মনিবেদন নেই নয়তো প্রবেশাধিকার । “ পাশাপাশি সকল ব্লগের মডারেশান প্যানেলকেও ভেবে দেখতে বলি কিছু ।

আমার নিজস্ব নিরীক্ষন , মডারেশান প্যানেল খুব একটা নিরপেক্ষ হয়ে উঠতে পারেনা । বক্তব্য নেই এমোন অনেক পোষ্টও অনেক ব্লগের নির্বাচিত পাতাতে আসে বা রিপোষ্ট কেন যে হয় , তা বোধগম্য নয় । জানি, অনেক ব্লগেই মডারেটরদের সংখ্যা নগন্য । ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ধ্যান ধারনা নেই এমোন অনেকেই আবার কাজ করেন অনেকটা স্ব-প্রনোদিত হয়েই । আর্থিক ( যদি থাকে) লাভালাভের দিকে ফিরে দেখেন না ।

দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যান্য কারনে আবার সবার মডারেশানের মানদন্ডও সমান নয় । এতো বিশাল একটা দায়িত্বে তাই ক্রুটি-বিচ্যুতি হতেই পারে । কিন্তু তা চলতে দেয়া ঠিক নয় । ব্যক্তিগত পছন্দের স্থান থাকা উচিৎ নয় এখানে । এইখানটাতে মডারেটরদের প্রত্যেককেই আরো নির্মোহ- নিরপেক্ষ , আরো সৃজনশীল, আরো বুদ্ধিদীপ্ত হতে হবে ।

একাট্টা হতে হবে । যা ভালো এবং শুদ্ধ ব্লগারদের টানবে “লেখার মতো লেখা”র জন্যে । তাহলেই হয়তো খরাক্রান্ত এই ব্লগগুলিতে ভালোলাগার খানিকটা স্রোত বইয়ে যেতে পারে । মনে রাখতে হবে মডারেটররাই হলেন ব্লগ-শরীরের ফুসফুস । তাদের টেনে আনা বিশুদ্ধ বাতাসই ব্লগকে বাঁচিয়ে রাখবে ।

এটুকু তো আশা করাই যায় সকল ব্লগের মডারেটরদের কাছ থেকে ” । “ব্লগে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ হোক এখনই “ এই শিরোনামের লেখাটি প্রসঙ্গে এতো এতো কথা লিখতে হলো কেবল সরকারের গঠিত কমিটির সদস্যদের সুবিবেচনার জন্যে । জানিনে তাদের শুভবুদ্ধি এতে জেগে উঠবে কিনা । তাই ভয় হয় .... । আমার ব্লগে সাম্প্রতিক একটি পোষ্ট আছে “এখানে এক নদী ছিলো” নামে ।

ভয় হয়, কোনদিন আমার মতো কাউকে অন্য কোথাও লিখতে না হয়- “ একদিন “ব্লগ” নামে একগুচ্ছ সামাজিক প্লাটফর্ম ছিলো....” ! ভয় হয়... বড় ভয় হয়.... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।