আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটা সবচাইতে কমন প্রেমের গল্প

এটা সবচাইতে কমন প্রেমের গল্প এই দুপুরে ভীড়ের মধ্যে বাসে উঠতে পারাটাই ভাগ্য সেখানে সীট পাওয়ার আশা রিশিতা ও করে নি। কিন্তু আজ দিন টা ওর জন্য একটু অন্যরকম। সীট সে পেল এবং সেটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে। বাসে উঠতে না উঠতেই একটি ছেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “বসো”। ছেলেটার দিকে তাকাতেই চমক টা আরো বেশি লাগলো রিশিতার।

এ যে তুনান; সেই দুষ্টু হাসি, পার্থক্য শুধু এটুকুই ক্রমাগত ধূমপান ওর দাঁতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। “থ্যাংক য়ু” কোনরকমে বললো রিশিতা। এই কবছরে রিশিতা যেন আরো অনেক সুন্দরী হয়ে গেছে। স্কুলে থাকতে সবাই ওর নাম দিয়েছিল “শুটিতা”। একটু রোগাটে গড়ণ ছিল বলে এই নাম।

সেইবার যেন নাম দেওয়ার হিড়িক পড়েছিল স্কুলে। তরু কে “গরু” বলে সেই যে শুরু হলো তারপর আর থামে নাই। রিশিতা সবসময় ই সন্দেহ করে এসেছে তুনান ই তার এই নাম দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ করার উপায় ছিল না। ছেলেরা মেয়েরা যে কেউ কারো সাথে কথা বলতো না।

সেই ক্লাশ থ্রি তে কি যেন এক ঝগড়া। তারপর কথা বন্ধ। বড় হওয়ার সাথে সাথে কথা বলার আগ্রহ দুই পক্ষের মধ্যেই বাড়তে লাগলো। কিন্তু ওই যে “ইগো”। ওই বয়সেও সেটা কি ভীষণ ভাবে ছিল!আহ! কি সব ছেলেমানুষী দিন ছিল সেই সব।

রিশিতার হাসি পেল খুব। এই বাসের মধ্যে ফিক করে হেসে দেওয়া টা অবশ্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সেই ছেলেমানুষ তো আর নেই রিশিতা। কলেজের প্রথম দিনই রিশিতা কে ভড়কে দিয়েছিল তুনান। টিফিনের সময় হঠাৎ করেই রিশিতা কে ডেকে নিয়ে বললো বন্ধুত্ব করতে চায়।

স্কুল দিনের ছেলেমানুষী ভুলে এখন স্বাভাবিক হতে চায়। কথা বলতে বলতে কেন যেম দুজনই সেদিন কাঁদো কাঁদো হয়ে গিয়েছিল। শেষে তুনান রিশিতার হাত দুটো ধরতে চেয়েছিল। বন্ধুত্বের দাবিতে করা আবদার টা রিশিতার একটু বেশিই বলে মনে হয়েছিল তখন। আজ রিশিতার কেন যেন মনে হলো হাত টা ধরতে দিলেই বুঝি ভালো হত।

ক্লাশের সবচাইতে মেধাবী ছেলে তুনান হঠাৎ করেই হয়ে গেল বিশৃঙ্খল , এলোমেলো। কলেজ জুড়ে তুনান এর নাম হয়ে গেল “পাগলা”। নিয়মিত ক্লাশে আসে না; এলেও অমনোযোগী। এ যেন এক অন্য তুনান। কেন হয়েছিল এমন টা? এটা কি রিশিতার জন্য হয়েছিল।

কিন্তু তুনান তো কখনো বলে নাই যে সে ওকে ভালোবাসে বরং কলেজের জুনিয়র একটা মেয়েকে জড়িয়ে তুনানের নামে কতকিছু শোনা যেত। বাসের প্রচন্ড ভীড়ের চাপে তুনান রিশিতার থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেছে। রিশিতার চুল আর ফরসা হাতের কিছুটা দেখতে পাচ্ছে তুনান। ফরসা মেয়েদের মুখের গড়ন সবসময় সুন্দর হয় না। রিশিতার বেলায় সেটা বলার উপায় নেই।

“আচ্ছা রিশিতা কি আমার কথা ভাবছে”, তুনান ভাবে। কি আর সে ভাববে তুনান কে নিয়ে। হয়তো ভাবছে ছেলেটা কি করে এতো খারাপ হয়ে গেল। হয়তোবা ভয়ই পাচ্ছে কখন কি করে বসে এই পাগল ছেলে টা। যাক গে, কে কি ভাবলো তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে তুনানের।

তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরাতে পারলে বেশ হয়। কিন্ত মাথা থেকে রিশিতা যাচ্ছেই নাহ। সুন্দরী মেয়েদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা সহজ কাজ নয়। আচ্ছা, রিশিতা কি কাউকে ভালোবাসে? ওর সবচাইতে কাছের বন্ধু রিমঝিম একদিন বলেছিল রিশিতা সেই ছোটবেলা থেকে একজনকে ভালোবাসে, যার নাম সে কখনই কাউকে বলবে না। “ওই ছেলেটা যদি আমি হতাম”, তুনান ভাবে।

ধুর ছাই, কি ভাবছি আমি। আমিই যদি হতাম তবে সেইদিন হাতটা ধরতে দেই নি কেন। কেন কোনদিন একবারও বলে নাই তুনান তুমি এমন হয়ে যাচ্ছো কেন? সিগারেট এর প্যাক টা পকেটের উপর থেকে জাপটে ধরলো তুনান। এই বাসের ভিতর সিগারেট ধরানো অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া রিশিতার সামনে সে কখনও সিগারেট ধরাই নি।

রিশিতা কাকে ভালোবাসত এই চিন্তা টা তুনানের একেবারে মাথার ভিতর ঢুকে গেছে। কে ছিল ছেলেটা? তরু , নিলয় ,সে নাকি অন্য কেউ। ধুর বাস থেকে পালাতে হবে। আরে এই তো একটা স্টপেজ । এখানে অর নামার কথা না কিন্তু এই বাসে থাকাটা তুনানের জন্য অসহ্য হয়ে উঠেছে।

বাস থেকে নামার জন্য পা বাড়ালো তুনান। দ্রুত এগিয়ে চলছে বাস গন্তব্যের দিকে। সময় খুব অল্প। রিশিতার কেমন যেল অস্থির লাগতে থাকে। তুনান কে একটা কথা জানাতে রিশিতার খুব ইচ্ছা করছে।

সে যে ছোটবেলা থেকেই তুনানকেই …… আরেহ! ওই তো তুনান নেমে যাচ্ছে। সিগারেট টা ধরিয়ে আবার চলা শুরু করলো। রিশিতা আর থাকতে পারে না বসে। “মামা বাস থামান। আমি এখানেই নামবো।

”, রিশিতা চিৎকার করে উঠে। বাসযাত্রীরা বিরক্ত হয়। “আপা, আগে কইবেন নাহ। এতক্ষণ কি ঘুমাইয়া আছিলেন নাকি। যতসব ঝামেলা” হেলপার এর এসব কথা শোনার সময় এখন রিশিতার নেই।

তার এখন অনেক গুরুত্বপুর্ণ একটা কাজ করার। তুনান কে আজ সে দুটো হাত বাড়িয়ে বলবে, “নাও তোমাকে দিলাম। রাখতে পারবে তো?” পিছন থেকে ডাক শুনে সচকিত হয় তুনান। রিশিতা কিন্তু দুই হাত বাড়িয়ে দেয় না। “এই তুনান, আমি তো আসলে এখানে ভুল করে নেমে গেলাম বোধ হয়।

১৪ ন. রাস্তায় কিভাবে যাব?”রিশিতা আমতা আমতা করে বলে। তুনান অবাক হয়ে বলে, “তাহলে তো আরো দুই স্টপেজ পরে নামতে হত। ” তুনান রিশিতা কে রিকশা ঠিক করে দেয়। কখন যে রোদ কেটে গিয়ে আকাশ মেঘলা হয়েছে তা কেউ খেয়াল করে নি। ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।

তুনান পকেট চেক করে সিগারেট এর প্যাকেট টা পায় না। ওহো! রিশিতা কে দেখেই হাত থেকে ফেলে দিয়েছিল। ভরা প্যাকেট, মাত্র দুইটা নিয়েছে সে। দৌড়ে আগের জায়গায় ফিরে যায় তুনান। বৃষ্টিতে প্যাকেট টা পুরোপুরি ভিজে গেছে।

এইটা আর নেওয়া যাবে না। তুনান দাড়িঁয়ে থাকে। ভিজতে আজ খারাপ লাগছে না ওর। রিশিতা ইচ্ছা করেই আজ আর রিকশার হুড তুলল না। অপূর্ব সুন্দরী একটা মেয়ে রিকশার হুড খুলে বৃষ্টিতে ভিজছে।

তার চোখের পানি কেউ দেখছে না। প্রকৃতিও মাঝে মাঝে কেমন মে্যেদের মন বুঝে ফেলে। শুধু ছেলেরাই পারে না। রিশিতা কোনদিনই জানবে না দূরে একটা ছেলে ঠিক এমন ভাবেই কাঁদছে যেমন ছেলেটাও জানবে না রিশিতার কথা। শুধু প্রকৃতি জানে কিছু চোখের জল মিশছে এই বৃষ্টির পানিতে ঠিক যেমন সে জানে কিছু কথা মেয়েরা কখনই বলে না আর ছেলেরা বলতে ভয় পায়।

ওই ভীতু ছেলেগুলোর প্রতি প্রকৃতিও কখনো করূণা করে না। গল্প ১- যুক্তির ওপারে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।