ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা। আপাতত শিক্ষা সমাপনেই আমি ভূমিতে পতিত হলাম । আমার চারপাশের বন্ধুর সংখ্যা কমতে কমতে শূণ্যের কোটায় নামলো। যাদেরকে শুভাকাংক্ষী মনে করে পাশে যেতে চাইলাম একটু সহানুভূতির আশায়- তারাও কেমন যেন মাথা ঘুরিয়ে নেয় অন্যদিকে।
ছোট একটি ঘটনা বলি-
মাথার উপর ছাদ আছে, অন্নের সংস্থান ঠিক মতো হয়ে যায়, ইত্যাদি জাতীয় কোনো সমস্যা নেই বলে কোনো বন্ধু কিংবা অন্য কারো কাছে হাত পাতা হয়নি কখনো।
শুধু সামাজিক অবস্থানের জন্য মানুষের পরিচয় ঠিকিয়ে রাখার জন্য কোনো মানুষের একটু সাহচর্য চেয়েছি। কিন্তু মানুষেরা এমন কেনো- শুধু দূরত্ব বাড়িয়ে চলে........এই যেমন বিশিষ্ট শিল্পপতি সাহেব। সেদিন মুখোমুখি দেখা হলো। স্বভাবসুলভ বিনীত ভংগিতে সালাম করলাম। উনি একেবারে না দেখার ভান করে চলে গেলেন।
একটি চাকুরীর আশায় এক বড় ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেতে শীতের রাতে পুরো রাত অবধি উনার বাসার বারান্দায় কাটিয়ে শুনতে পেলাম- উনি এই শীতের রাতে আজ ঘরের বারান্দা অবধি আসবেন না। আমি বেয়াক্কেলের মতো কেন বসে আছি। পরদিন যেন দেখা করি। সেই পরদিন আর আসেনি।
আমি দুঃখ পেলাম না, শুধু মিষ্টি করে হাসলাম।
আন্তরিক মানুষের অন্তর যেন পাথর হয়ে গিয়ে মায়া যেন সব সমস্ত বোধের বাইরে গিয়ে অন্তর্হিত হলো।
আমি ভুলেই গিয়েছি কবে আমার টেলিফোনে শেষ রিং বেজেছিলো। কবে আমার ঘরে এসেছিলেন কোনো অতিথি। মাঝে মধ্যে আমার নিদারুন দুঃখবোধ হতো। জীবনে অসফল মানুষের কষ্ট কি এমন করেই প্রলম্বিত হতে থাকে।
তারপর, সহসা দেখি আমার ফোন আনন্দের সুর লহরি নিয়ে বাজতে থাকে। সেই বাজনা ধ্বনি বাড়তে থাকে দিনে দিনে। সেই বিশিষ্ট শিল্পপতি সাহেব একদিন সহাস্য আমাকে কোশলাদি জিগ্গাসা করলেন। আমাকে অবাক করে দিয়ে উনার বাসায় চায়ের নিমন্ত্রন জানালেন। আমার বাড়িতে বাড়তে থাকলো যাচিত অযাচিত অতিথিদের ভীড়।
সবাই যেন বিশেষ করে আমার তরুন বন্ধুরা কি নিদারুন লালায়িত আমার বন্ধুত্বের জন্য।
একদিন একটি বিশেষ কাজে শহরে আটকা পড়লাম। ফিরতে রাত হলো অনেক। আমি এসে দেখি সেই বড়ভাই -আমার ঘরে বসে আছেন। উজ্জ্বলতর সহাস্য মুখচ্ছবি নিয়ে বললেন- আমার সাথে দেখা নাকরে উনি কীভাবে যান।
আমার ফিরতে যত রাতই হোক না কেন- উনি আমার অপেক্ষায় থাকতেন।
আমি এক দূর্বল, অতিশয় ভদ্র, নিরীহ গোবেচারা মানুষ। আজ আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার বন্ধুত্বের তালিকা দীর্ঘায়িত করতে হয়। আমার বাসার চা পান না করলে -আমার বন্ধু আর শুভানুধ্যায়ীদের যেন তৃষ্না মিটেনা। আমিও সহাস্যে তাদের সে আশা পূরণ করি।
শুধু নিজের ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তাদের চায়ের পেয়ালায়- আমার হিসুর কয়েক ফোটা মিশিয়ে দিয়ে আমারও বুকের দ্রোহ নিবারণ করি।
আর আমি মনে মনে হাসি- আর ভাবি-
কী এমন খেলা খেলো ভূবন.নারীতে কেন এতো মধু
যাকে কিছুই দিতে পারোনা কেন তার ঘরে দাও সুন্দরি বধু।
© আরিফ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।