প্রিয় নিপা,
তোমাকে আমি আমার সবকিছু দিয়ে দেব। এমনকি তুমি যদি চাও, আমার মনের পাসওয়ার্ডও আমি তোমাকে দিতে রাজি আছি বিনা বাক্যব্যয়ে। কিন্তু তার বদলে তুমি কি আমাকে একটা জিনিস দিবে? জানি, যা তোমাকে দেব, তার চেয়েও বেশি কিছু নিতে তোমার কাছে এই প্রার্থনা। তাই মনে অনেক দ্বিধাবোধ ছিল আর সেকারণেই মুখে কথাগুলো তোমায় বলতে পারিনি। লজ্জার মাথা খেয়ে, এই বিচ্ছিরি হাতের লেখায় তোমাকে চিঠি দিচ্ছি।
বুঝতে পারছি, আমার এত ভণিতা তোমার ভালো লাগছে না। তাই আর বাজে কথা লিখে তোমার সময় নষ্ট করছি না। যা বলার, সোজাসুজি বলে দিচ্ছি।
তুমি কি তোমার মনের পাসওয়ার্ডটা আমাকে দিবে?
না না না। আমি বুঝতে পারছি যে আমার কথায় তুমি রাগ হয়ে চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলতে যাচ্ছ।
কিন্তু প্লিজ লক্ষ্মীটি! ও কাজ কোরো না। তোমাকে আমি কোন টিপিকাল প্রেমপত্র আমি লিখছি না। ওরকম কিছু লেখার কথা আমি কখনো মনেও আনি না। কারণ আমি জানি আমার মত তুচ্ছ একটা ছেলের কাছে তা হবে কতবড় স্পর্ধাস্বরুপ। তবু সত্য গোপনের মতন তীব্র মানসিক শক্তি আমার নেই।
তাই একটা সত্যি কথা বলেই দেই। দেই বলাটা অবশ্য ভুল। ধরে নাও বলে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমাকে আমার সত্যিই খুব পছন্দ। জানি না এই ভালো লাগা কি শুধুই ভালো লাগা বা নিছক মোহ কিনা।
এ নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। রাতের পর রাত ভেবেও কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি নি। আমার মত দুর্বল অক্ষম ছেলের পক্ষে তা যে বড়ই দুরূহ কাজ!
আর সেজন্যই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম যে তোমার মনের পাসওয়ার্ডটা আমি পেতে পারি কিনা। বিশ্বাস কর, স্রেফ একবারই কেবল আমি ওটাতে লগ ইন করব। দেখবো, তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে এমন কেউ আছে কিনা যাকে তুমি ফ্রেন্ড এর চেয়েও বেশি কিছু ভাব।
আমি জানি, যে এক্সকিউজটা দিলাম, সেটা বড়ই অর্থহীন। তোমার জীবনে যদি বিশেষ কেউ থাকে, তাহলে তো কাহিনী এখানেই খতম হয়ে গেল। আর কেউ যদি না-ও থাকে, তারপরও তোমার আমার কাহিনী এক কদমও এগুতে পারবে কিনা, আল্লাহই জানে!
আচ্ছা, এবার চল এবার কিছু অফ টপিক নিয়ে কথা বলি। কিন্তু কি নিয়ে বলা যায়? আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না। মাথার ডানে, বামে, সামনে পেছনে সবজায়গায় শুধু তুমি, তুমি আর তুমি।
তুমি ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না। তাহলে কি লেখা যায়, বলত?
.......................................
হুমমম। তোমাকে একটা জিনিস জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি। আমি তোমাকে এই চিঠিটা কিন্তু লেখা শুরু করেছিলাম গতকাল রাত্তিরে। কিন্তু কি লিখব ভাবে না পেয়ে চিঠিটা শেষ করতে পাড়ি নি।
সারা রাত ভাবলাম, তারপরও কিছু ভাবে পাইনি।
যাইহোক, সকালবেলায় উঠে যেটুকু লেখা হয়েছে সেটুক পড়লাম ৩-৪বার। আর পড়ার পরে একটা ব্যাপার আমার নিজের কাছেও খুব আজব লাগল। তোমরা কত বড়লোক, তুমি যে গাড়িতে করে ইউনিভার্সিটিতে আস, শুনেছি তার ড্রাইভার সবসময় তোমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে ডাকে। আমার অর্থনৈতিক অবস্থাও তো অনেকটা ওই ড্রাইভারের সমপর্যায়ে।
কিংবা কে জানে, হয়ত তার চেয়েও নিচে হতে পারে! আর আমি কিনা চিঠির সম্বোধনে তোমায় সরাসরি নাম ধরে ডাকলাম! কি স্পর্ধার কথা, বলত। আমার কি উচিত ছিল না তোমাকে আপু বলে বা ম্যাডাম বলে ডাকা? তা-ই তো মনে হয়। কিন্তু তোমাকে নিয়ে আমি আমার মনের গহীনে যেরকম স্বপ্নের জাল বুনেছি, তাতে তোমাকে ওইরকম কোন সম্বোধন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তবু এ বিষয়ে তোমার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু তোমায় নাম ধরে ডাকায় আমি যে সত্যিই দুঃখিত, এমনটা কিন্তু না!
..........................................
লেখায় বারবার ছেদ পড়ছে।
কিন্তু কিছু করার নেই। আমাকে কাজে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছ। আমি সকালবেলায় কাজে বেরিয়েছিলাম। কারণ আমি তো তোমাদের মত শিক্ষার্থী নই যে সকালবেলায় কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ভার্সিটিতে ছুটব।
তো, এখন বোধ হয় তোমার মনে একটা সন্দেহ ডানা বাঁধছে যে আমি যদি তোমার কোন ক্লাসমেট না হই বা একই ভার্সিটিতে না পড়ি, তবে জানলাম কিভাবে যে তুমি কোন গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যাও আর তার ড্রাইভারই বা তোমাকে কি বলে ডাকে!
অবশ্য চিঠির শেষে আমি আমার নাম লিখব কিন্তু তা থেকেও তুমি আমাকে চিনতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ আমি খবর নিয়ে জেনেছি যে তোমাদের ক্লাস এ এই নামে কোন ছাত্র নেই!
তাহলে এখন আমি আমার নিজের পরিচয়টা দিয়েই দেই, কি বল? আমি হলাম 'বস'! হা হা হা। তুমি হয়ত চমকে উঠেছিলে যে আমি আবার কোন বস। তাহলে ব্যাপারটা তোমার কাছে পরিষ্কার করে দেই। তোমাদের ভার্সিটির সামনে যেই চায়ের দোকানটা আছে, সেইটা আমার।
আর দোকানে যে ছোট ছেলে দুটো কাজ করে, তারা আমায় বস বলে ডাকে। আর তা থেকে আমার ডাকনামই হয়ে গেছে বস! এখন সবাই-ই আমাকে ডাকে এই নামে। এমনকি আমার দোকানের নামও হয়ে গেছে 'বসের চায়ের দোকান'। অবশ্য শেষের কথাটা খামোকাই বললাম। কারণ তুমি ভালো করেই জানো তোমাদের ভার্সিটির সামনের চায়ের দোকানটার কি নাম।
তোমাদের ভার্সিটিতে পড়ুয়া অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরাই কখনো না কখনো আমার দোকানে এসে চা-কেক খেয়েছে। কিন্তু তুমি কখনোই আমার দোকানে এসে চা খাওনি। অবশ্য আমার মনে আছে, আমার দোকানের সামনে এসে তুমি একদিন দাঁড়িয়েছিলে আর দোকানের ভেতরে বসা একটা মেয়েকে ডাকছিলে। খুবসম্ভব মেয়েটা তোমার খুব ক্লজফ্রেণ্ড কারণ আমি অসংখ্যবার ওকে তোমার সাথে দেখেছি। যাইহোক, পুরনো কোথায় ফিরে আসি।
ওইদিনই কিন্তু আমি তোমাকে প্রথম দেখেছি। আর সেদিন থেকেই তোমাকে আমার খুব পছন্দ। অবশ্য আমি কিন্তু তোমাকে নয়, প্রথমে তোমার চুলকে পছন্দ করেছিলাম। তুমি সেদিন চুল ছেড়ে দিয়ে এসেছিলে। বাতাসে তোমার চুল উড়ছিল।
খুব সুন্দর একটা গন্ধও আসছিল তোমার চুল থেকে। বোধ হয় তুমি খুব দামি কোন তেল দিয়েছিলে।
আচ্ছা, তুমি চুলে কোন তেল দাও, বলত!
ওই দেখেছ, কোন কথার মধ্যে কোন কথা টেনে এনেছি! জানি না তুমি আমার এই চিঠির উত্তর দেবে কিনা। কিন্তু যদি সত্যিই দাও, তবে তেলের নামটা বোলো কিন্তু!
তো যাইহোক, সেদিন থেকেই তোমার প্রতি আমার একটা আকর্ষন জন্মায়। কিন্তু তুমি কি জানো সেই আকর্ষন কবে ভাল লাগায় রূপ নেয়? তোমার মনে হয় সেদিনের কথা মনে আছে।
শ্রাবণের এক দুপুর ছিল সেটা। তোমাদের ভার্সিটি কেবল ছুটি হল তখন। তুমি তোমার বান্ধবীদের নিয়ে হাসাহাসি করে বেরচ্ছিলে ভার্সিটির গেট থেকে। সামনেই তোমার গাড়ি দাঁড়ানো, যথারীতি তোমায় নিতে এসেছে। এমন সময় শুরু হল বৃষ্টি।
তোমার ড্রাইভার তোমাকে তাড়া দিতে থাকল গাড়িতে উঠে আসার জন্য। কিন্তু তুমি তোমার ড্রাইভারকে দিলে একটা রামধমক! আর তারপর তাকে বললে ফিরে যেতে। তোমার ড্রাইভার কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল তোমার দিকে। তারপর অবশ্য বেচারা সত্যিই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেছিল। বোধ হয় তোমার কথার অমান্য হওয়ার সাহস হয়নি।
তারপর তোমাকে দেখলাম তুমি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছ। কিছুক্ষণ পর তোমার সব বান্ধবীই একে একে চলে গেল কিন্তু একঘণ্টা যাবত বৃষ্টি হল আর তুমি পুরোটা সময় পাগলের মত বরিষটিতে ভিজলে। রাস্তার অনেকেই তোমাকে আড়চোখে দেখছিল কিন্তু সরাসরি তাকাবার সাহস পায়নি। তবে আমি কিন্তু এক নাগাড়ে তোমার উপর দৃষ্টি রাখছিলাম আমার দোকানের ঝাঁপির আড়াল হতে।
বৃষ্টি শেষ হলে তুমি ভেজা কাপড়েই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে।
কিন্তু আমার হৃদয়ে কিন্তু তোমার বৃষ্টিতে ভেজারত অবস্থার চিত্র বন্দি হয়ে রইল। এমনিতে তুমি খুব রূপবতী কিনা জানি না, কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজা তোমাকে যে স্বর্গের অপ্সরাদের চেয়ে কোন অংশে অসুন্দর দেখাছহিল না, সে কথা আমি হলপ করে বলতে পারি। আজও আমার আফসোস হয়, আমার যদি একটা ক্যামেরা মোবাইল থাকত তবে সেদিন তোমার অনেক ছবি তুলে রাখতে পারতাম।
পরের তিন-চারদিন কিন্তু তুমি ভার্সিটিতে এলে না। সে কটা দিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে হতাশার।
তোমার আসার অপেক্ষায় সারাদিন বসে থাকতাম কিন্তু তুমি আসতে না। কে জানে, বৃষ্টিতে ভিজে হয়ত বড় রকমের অসুখ বাঁধিয়েছিলে! কিন্তু তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতেই আমি বুঝতে পারলাম, তোমাকে আমি আসলেই কতটা ভালবেসে ফেলেছি।
তোমায় ছাড়া এখন আর কিছুই ভাবতে পারছি না। কি করব আমি?
আরও অনেক কিছুই লেখার ছিল কিন্তু আমার আর ধৈর্য নেই। তোমার একটা কিছু প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় রইবো।
ইতি
'বস' সুমন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।