আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

THE HARRY POTTER SERIES-কি আছে এতে?জানতে চাইলে পড়তে পারেন।

আমরা জানি যে পৃথিবীতে ফিকশন নামের একটি বিশেষ ধরনের সাহিত্য রয়েছে। এই ফিকশন বা কল্পকাহিনী আমাদের সবার কাছে হয়তো সমানভাবে গ্রহনযোগ্যতা পায় না,তাছাড়া অনেকেরই এটি নিয়ে মিশ্র মতামত রয়েছে। অন্যান্য ধরনের উপন্যাস বা গল্পে শুধুমাত্র চরিত্র ও প্লট নিয়ে চিন্তা করলেই চলে কিন্তু ফিকশনে এগুলোর বাইরেও একটা ভিন্নজগত্‍ তৈরী করতে হয়। শুধুমাত্র কাগজ আর কলম দিয়ে একটি ভিন্ন জগত্‍ তৈরী করে এর মধ্যে প্রান সন্ঞ্চার করা কোনমতেই সহজ কাজ হতে পারে না। এরকম একটি বিশ্বখ্যাত সাহিত্য হল HARRY POTTER সিরিজ।

হ্যাঁ,এর স্রষ্টা জে.কে.রাউলিং পাঠকদেরকে শুধুমাত্র একটি ভিন্ন জগত্‍ই উপহার দেননি,দিয়েছেন এতে বাস্তবতার কঠোর সত্যকেও,ভালোবাসার বন্ধনটাও এতে বিশেষভাবে বর্ননা করা হয়েছে। শুরুতেই হ্যারী পটার নিয়ে দুইটি ভুল ধারনা ভাঙিয়ে দিই,প্রথমটি হলো হ্যারী পটার কখোনই শুধুমাত্র বাচ্চাদের বই নয়। বরং এটি এরকম একটি উপন্যাস যেটা বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও পড়তে পারে। আর হ্যারী পটারকে যারা অবস্তাব বলে দূরে ঠেলে দেয় তাদেরকে বলছি-হ্যারী পটার অবস্তাব নয় বরং বাস্তবতার চাইতে বেশি কিছু যা আমাদের মনোজগতের সুগভীর স্থানে ঘোরাফেরা করে। হ্যারী পটার সিরিজের কাহিনীটা হয়তো অনেকেরই জানা আর যাদের জানা নেই তারা উইকিপিডিয়া থেকে জেনে আসতে পারেন,তাই এখানে আর উল্লেখ করছি না।

হ্যারী পটার সিরিজে মোট সাতটি খন্ড রয়েছে যার প্রত্যেকটিতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক কাহিনী এবং গোটা সিরিজটিরও একটি মূল কাহিনী ও কতগুলো উপ কাহিনী রয়েছে। আর মূলকাহিনীর সাথে খন্ডগুলোর মৌলিক কাহিনীগুলোর সম্পর্কস্থাপনের জায়গায়টিতেই রাউলিং তার মেধার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছেন। প্রত্যেকটি খন্ডেরই একটি প্রত্যক্ষ সমাপ্তি রয়েছে কিন্তু পরোক্ষভাবে কাহিনীর গভীর একটা টান থেকে যায়,যা কিনা পরবর্তী খন্ডটা পড়ার জন্য পাঠকের চরম কৌতূহল সৃষ্টি করে। এমন যাদুকরী ক্ষমতা পৃথিবীর কয়টা বইয়ের রয়েছে?পৃথিবীর কোটি কোটি পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার মতো কঠিন কাজটি অতি সহজেই করে দেখিয়েছেন রাউলিং। তাও আবার কোন প্রকার যৌনতা ছাড়াই,যা কিনা অনেক লেখক তার বইকে বেষ্টসেলার করার জন্য ব্যাবহার করে,যেমন ধরতে পারেন TWILIGHT সিরিজ।

আমি কখোনই রোমন্স কিংবা যৌনতাকে খারাপ চোখে দেখি না কারন মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে এগুলো অন্যতম। কিন্তু কিশোর কিংবা তরুনদের কাছে টানার জন্য এর থেকে ভালো ঔষধ বোধহয় আর পৃথিবীতে নেই। কিন্তু রাউলিং এসব কিছুর ধার না ধরেই প্রচুর টিনেজার পাঠক পেয়েছেন। যারা কি না এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারনে বইয়ের কাছে পর্যন্ত যায় না। হ্যারী পটারে কেবলমাত্র কল্পদুনিয়াটকে নিয়েই আলোচনা করা হয়নি,এর পাশাপাশি বাস্তব দুনিয়ার সাথে এর সম্পর্ক বর্ননা করা হয়েছে।

তাছাড়া হ্যারী পটারকে একটি পূর্নাঙ্গ সামাজিক উপন্যাস বললেও ভুল হবে না। রাউলিং তার শক্তিশালী চরিত্রগুলো মাধ্যমে বর্নবাদের প্রতিবাদ করেছেন। তবে একটু ভিন্ন ভাবে,তিনি সরাসরি কালো সাদার বিরোধটি ফুটিয়ে তুলেননি। তিনি তার উইজার্ড জগতের বর্নবাদ অর্থ্যাত্‍ ব্লাড স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বাস্তব জগতের বর্নবাদকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়া বন্ধুত্ব,ভালোবাসা,সহমর্মিতা,সহযোগিতা,ঘৃনা,ভয়,লজ্জা,হিংসা,মৃত্যুকে হ্যারী পটার সিরিজে গভীরভাবে বর্ননা করা হয়েছে।

এবার আসি সিরিজটির চরিত্রগুলোর কাছে। সিরিজটিতে অসংখ্য চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। এর প্রধান চরিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হল-হ্যারী,রন, হার্মায়েনী,স্নেইপ,ডাম্বলডোর, ভোল্ডেমর্ট এবং আরো অনেকে। এর মধ্য প্রধান তিন চরিত্র হল HARRY,RON ও HERMIONE.তবে সিরিজটি মূলত অন্য দুইটি চরিত্রের উপর ভর করে এগিয়েছে,তারা হলেন DUMBLEDURE এবং SNAPE.হ্যারী চরিত্রটিকে মূলত গতানুগতিক ধারা অনুযায়ী তৈরী করা হয় নি। হ্যারীর সাহসিকতার পাশাপাশি আমরা তার মধ্যে দেখতে পাই নিয়ম ভাঙার প্রবনতা ।

একজন সাধারন স্কুলবালকের আদলেই তৈরী করা হয়েছে অনন্যসাধারন এই বিশ্বমাতানো চরিত্রটিকে। স্কুলের পড়াশুনায় মধ্যম মানের কিন্তু জাদুবিদ্যায় পারদর্শী হ্যারীকে দেখলে কি পাশের বাড়ির চন্ঞ্চল ছেলেটির প্রতিমূর্তি চোখের সামনে ভেসে উঠে না। আর হ্যারী চরিত্রটির এই বাস্তব ও ঘনিষ্ট আবেদনটাই একে করেছে বিশ্বখ্যাত। রাউলিং শুধুমাত্র হ্যারীকে নয় সিরিজের প্রতিটি চরিত্রগুলোর মাঝে এরকম আবেদনময়তা তৈরী করেছেন। রন চরিত্রটি কিছুটা বোকা টাইপের কিন্তু এর মাঝে একটি সহজ সরল বন্ধুর আবহ ফুটে উঠে।

আর হার্মায়েনী চরিত্রটি বুদ্ধিমত্তা আর মননশীলতার প্রতীক। সত্যি কথা বলতে কি রাউলিং তার ভালো চরিত্রগুলোর মাঝেও হালকা রাগ, হিংসা,ঘৃনা,দিয়েছেন। আর এ কারনেই চরিত্রগুলোকে এত সজীব ও বাস্তব মনে হয়। যেকোন গোয়েন্দা উপন্যাসের তুলনায় হ্যারী পটারে রহস্যের পরিমান কোন অংশে কম নয়। অর্থ্যাত্‍ এটিকে রহস্য উপন্যাসও বলা চলে।

আর স্নেইপ চরিত্রটি মনে হয় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা রহস্যময় চরিত্র। আর হ্যারী পটার সিরিজে হাস্য রসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ফ্রেড জর্জের কথাগুলো শুনে হাসবে না এরকম লোক পৃথিবীতে বোধহয় খুব কমই আছে। আপনারা যারা হ্যারী পটার পড়েছেন তারা বোধহয় একটা বিষয় লক্ষ্য করে থাকবেন যে হ্যারী পটার পড়া শুরু করলে সহজে উঠা যায় না। এর পিছনেও একটি রহস্য আছে।

আপনারা নিশ্চয়ই ছোটগল্প নামক এক ধরনের বিশেষধরনের সাহিত্যের নাম শুনেছেন,যেমন রবিঠাকুরের ছুটি,পোষ্টমাষ্টার ইত্যাদি। এইধরনের সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট হল এটি শেষ করার পড় বাকিটুকু জানবার চরম ইচ্ছা জাগে আর হ্যারী পটারের প্রতিটি অধ্যায়ই ছোটগল্পের আদলে তৈরী করা হয়েছে। আর সেকারনেই একটি অধ্যার শেষ করার পর আমরা বাকিটুকু জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি। তাছাড়া হ্যারী পটারে মৌলিকভাবে চিন্তা করার অসংখ্য উপাদান রয়েছে যেমন ব্রুম,কুইডিচ,পোর্ট কী আরো কত কি। আরেকটা বিষয় হলো হ্যারী পটার পড়তে হলে কল্পনাশক্তি থাকতে হয় এবং এটা কল্পনাশক্তি বিকাশও ঘটায়।

আপনি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি আইনস্টাইনের সেই কথাটি,IMAGINATION IS MORE IMPORTANT THAN KNOWLEDGE. উপরের কথাগুলো আমি লিখেছি একজন হ্যারীপটারভক্ত হিসেবে নয় একজন সত্যিকারের বইপ্রেমিক হিসেবে। তাই যদি এখনও না পড়ে থাকেন তাহলে একবার পরখ করে দেখতে পারেন যে হ্যারী পটার কি মাপের সাহিত্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।