আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহা মহীয়ান ও মহা পূণ্যের মাস রমজান ও আমাদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিড়ম্বনা।(লেখাটা একটু বড়, কষ্ট করে পড়ার অনুরোধ রইলো)

মহাশক্তি বাতাস আর বিশালতায় ছেয়ে থাকা আকাশের বুক থেকে ঐযে ছোট্ট বালকটি যেভাবে তার ঘুড়িটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। ঠিক তেমন করে যদি আমার জীবনটাকে নিজের করতে পারতাম। মহা পবিত্র রমজান নিয়ে কেনো আমাদের এই বিড়ম্বনা ?? একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। আমাদের মাঝে যখন সিন্দাবাদের রোমহর্‌ষক গল্পের ব্যাপক পরিচিতি আছে সেহেতু তাকেই গল্পে ব্যবহার করছি। সিন্দাবাদের চিরাচরিত অভ্যাস যেহেতু সমুদ্র ভ্রমণে দিন কাটান তাই দিনক্ষণ দেখে পাল তুলে দিলো কোন এক অজানার পথে।

ভেসে চলেছে তার রঙিন পালের নানান রকম নকসা আঁকা শরিরের জাহাজ। এভাবেই ভাসতে ভাসতে প্রকৃতির নিয়মে দিন যায় রাত যায় তবু তাদের চলার পথের শেষ হয়না। হঠাৎ কোন এক রাতে সাগরের বুক ফালি করে চলা তাদের জাহাজটি মুখ থুবড়ে পড়লো। জাহাজের সকলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে এসে দেখে তাদের জাহাজ ঘন অরন্যে ঘেরা কোন এক দ্বীপে এসে ভিড়েছে। তখনো গভির রাত, তাই সবাই সূর্‌যের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকলো।

সমস্ত অমানিশার প্রলয়কে মিথ্যে করে দিয়ে যখন সূর্‌য মামা তার উপস্থিতি জানান দিল, ঠিক তখনো অধিকাংশ নাবিকের দেহ ক্লান্তিতে পাটাতনে সেঁটে আছে। বাকি যারা জাগ্রত ছিলো তাদের আনন্দ উল্লড়ে সেই ঘুমন্ত নাবিকদের আর জো রইলোনা চোখের পাতা দুটি এক করে রাখবার। বহুদিন সমুদ্রের নোনা পানিতে কাটানো নাবিকদের বিষিয়ে উঠা প্রানে আনন্দের দোলা জাগানো মাটির স্পর্‌শ যেন অমৃত। সকলে জাহাজ থেকে আগে আসলে আগে পাবেন ভাব করে নেমে পড়লো। দ্বীপে অনেক সময় ঘুরার পর তারা খাদ্যের সন্ধান করতে শুরু করলো, আর তখনি তারা বুঝতে পারলো এ দ্বীপ তাদের পূর্‌বে জয় করা সকল দ্বীপের চেয়ে শত গুণ বড়।

তাই এখানে খাবার মেলা খুব দুঃসাধ্য ব্যাপার বুঝে তারা এক সিদ্ধান্তে উপনিত হলো। সিন্দাবাদ সকল নাবিককে ডেকে কয়েক ভাগে ভাগ করে দিলো আর বলল আমারা আবার এখানে জড় হব, কিন্তু আমি চাই তা যেন একদিনেই হতে পারি। এতোবড় দ্বীপে ছড়িয়ে পড়ার পর সবাই একি দিনে সময় দেখে একত্র হওয়া খুব মুশকিলের বিষয়, কারন তাদের কাছে সময় নির্‌ণয়ের কোন কিছু নেই। তাই তারা পরামর্‌শ করে ঠিক করলো যে, আগামি চন্দ্র মাসের প্রথম তারিখে আমরা এখানে এসে হাজির হব। তোমরা যখনই চাঁদ দেখতে পাবে তখনই এখানে আসার জন্য রওনা হয়ে যাবে।

এভাবে তারা খাদ্য সন্ধান করতে করতে একসময় সেই দিন এসে হাজির হলো, যেদিন তাদের একত্রিত হওয়ার দিন। কিন্তু সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও একদল এল্লনা। অন্য দলের না আসা দেখে তারা ভাবলো কিছু সময় অপেক্ষা করি, হয়তো বেশি দূরে হওয়ায়দেরি হচ্ছে। তাদের সেই অপেক্ষার সময় ও পার হয়ে গেল একসময় কিন্তু তাদের আসার কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। সকলের চাপাচাপিতে আর না আসা দলের কোন অঘটন হয়েছে ভেবে সিন্দাবাদ জাহাজ ছাড়তে বাধ্য হলো।

এদিকে আরো একদিন পার হয়ে গেয়ল, এদিন সন্ধ্যায় সেই দ্বীপে থেকে যাওয়া দলনেতা দেখলেন আকাশে নতুন চন্দ্র মাসের চাঁদ মুচকি হেঁসে তাদের জানান দিচ্ছে তোমাদের যাওয়ার বেলা হয়েছে। তারা তাদের মালামাল নিয়ে রওনা হলো সমুদ্রের দিকে। অবশেষে একসময় তারা সমুদ্রের দেখা পেলো, কিন্তু পেলো না তাদের বাড়ি ফেরার জাহাজ। শুধু যেখানে জাহাজ বাঁধা ছিল সেখানে অসংখ্য পায়ের ছাপ। আর তা দেখে এই দল মেনে নিলো হয়তো কোন জলদস্যু অন্নদের তুলে নিয়ে গেছে।

আর তারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেল। সিন্দাবাদের এই ভ্রমন যেমনটা কাল্পনিক ইসলামের মহান রোকন রমজানের চাঁদ দেখা তেমন বাস্তবিক। কেউ যেমন অস্বিকার করতে পারবেনা আল্লাহর এই বানি "তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাক আর চাঁদ দেখে রোজা ভাঙ। " তেমনি অস্বিকার করতে পারবেনা হাতেগোনা কয়েকজন মুসলমানের সংখ্যা যতটা অগুনিত হয়েছে তার চেয়ে বিশী হারে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত বিশ্বময়। একটা তাবুতেই এঁটে যাওয়া মুসলমানের সংখ্যা এখন সমস্ত বিশ্বেও পেতে হিমশিম খাচ্ছে।

এবার তাহলে সেই তাবুর সময়কার কথায় আসি। রাসূল (দঃ) এর ইসলামের প্রচার প্রসারের যে পরযায়ে রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে সেই সময়ে এক ঘরে থেকেই সবাই চাঁদ দেখে রোজা রাখতে পারতেন। কিন্তু যখন মক্কা ছাড়িয়ে ইসলাম মদীনা ও ছাড়িয়ে গেছে তখন এই চাঁদ দেখা নিয়ে বিড়ম্বনা দেখা দেয়। মক্কায় আজ চাঁদ দেখা হয়ে গেলেও অন্যত্র চাঁদ দেখা দেয় পরের দিন। যোগাযোগ ব্যাবস্তার অনুন্নতির জন্য তখন মক্কা থেকে দূরবর্‌তী সকল মুসলমান পরের দিন চাঁদ দেখেই রোজা রাখতে শুরু করেন।

কারন তাদের চাঁদ উঠার সাথে সাথেই জানার কোন উপায় ছিলো না। সেই জাহিলি যুগের সময়কার নিয়ম আজ যখন বিজ্ঞানের জয়জয়কারে বিশ্ব উল্লাস পালন করছে তখনো আমরা পালন করে যাচ্ছি। যখন আমরা বিশ্বের এ প্রান্তে অবস্থান করেও জানতে পারছি ও প্রান্তে কে গর্‌ভবতী হয়ে গেল। তাহলে কেনো আমরা আজ সৌদিয়ারবে (এখানেই প্রতি মাসে প্রথম চাঁদ দেখা যায়) চাঁদ দেখা যাবে জেনেও কাল রোজা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছি না ??? আমাদের আলেম-ওলামারা কী কখনো এইসব বিষয় চিন্তা করে দেখেন না ??? নাকি আজও সেই অজানাদের কাতারেই থাকার ইচ্ছে তাদের ??? আমরা তো জানছি যে আজ চাঁদ দেখা যাবে। কিন্তু এই বিষয়ে রাষ্ট্রিয়ভাবে পদক্ষেপ না নিলে এই বাস্তবভিত্তিক কথাগুলো ভন্ডের কথা হয়ে যাবে।

আলেমরাও হস্তক্ষেপ করা অতীব জরুরি। বিঃ দ্রঃ আমি আজ পর্‌যন্ত আমাদের দেশের নিয়মেই রোজা পালন করে আসছি। কিন্তু এই কথাগুলো মাথা থেকে বের করে দিতে পারছিলাম না। তাই সবার সাথে শেয়ার করলাম। আর একটা কথাঃ এই চাঁদ দেখার উপর নির্‌ভর করেই কেয়ামত দিবস সং্‌ঘটিত হবে।

এখানে আমার একটা প্রশ্ন, তবে কী কেয়ামত ও আমাদের দেশে একদিন পর সং্‌ঘটিত হবে ??? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।