আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার সাবেক প্রধান প্রয়াত ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানে লুকিয়ে ছিলেন প্রায় এক দশক। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, গোয়েন্দাবাহিনী কেউই খুঁজে পায়নি তাঁকে। আর এজন্য দায়ী কর্তৃপক্ষের ‘অদক্ষতা ও অবহেলা’। পাকিস্তান সরকারের গোপন এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে এ কথা। ওই প্রতিবেদনে কীভাবে লাদেন এতদিন পাকিস্তানে লুকিয়ে ছিলেন, লাদেন কীভাবে দিন কাটাতেন, লাদেনকে খুঁজতে কেন সরকারি সংস্থাগুলো ব্যর্থ হলো, সরকারি কোনো সংস্থা লাদেনকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছিল কি-না এসব বিষয়ে তদন্ত করা হয়।
তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনটি একেবারেই গোপন রাখা হয়। তবে আল জাজিরায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সেসব তথ্য ফাঁস করে দেওয়া হয়। আল জাজিরার বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে সেসব অজানা তথ্য।
অ্যাবোটাবাদে চালানো আমেরিকার ওই অভিযানের সমালোচনা করেছে কমিশন। কমিশন এটিকে ‘আমেরিকান অ্যাক্ট অফ ওয়ার’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
কমিশন এটাও বলেছে যে, ১৯৭১ সালের পরে পাকিস্তানে এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের মানবতার বিপর্যয়।
৩৩৬ পাতার ওই প্রতিবেদনে অ্যাবোটাবাদের যে বাড়িতে লাদেন লুকিয়েছিলেন তার আশেপাশের ২০০ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা ও লাদেনের তিন বিধবার সাক্ষ্যও রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এসব সাক্ষ্য ও ছয় মাস ধরে অনুসন্ধানের পরে পাকিস্তানের সরকারি তদন্ত কমিশন ‘অ্যাবোটাবাদ কমিশন’ এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০০২ সালের বসন্তকালে লাদেন পাকিস্তানে যান। তিনি দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, বাজাউর, পেশোয়ার, সোয়াত এবং হরিপুরে বিচ্ছিন্নভাবে থাকেন।
২০০৫ সালে অ্যবোটোবাদের বাড়িতে পরিবারসহ ওঠেন লাদেন। আর সেখানেই লুকিয়ে থাকেন দীর্ঘদিন।
অ্যাবোটাবাদের ওই বাড়িতে কীভাবে লাদেন দিন কাটাতেন তার খুঁটিনাটি বিবরণ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। সেখানে পরিবারসহ খুব মিতব্যয়ী ও সাধারণ জীবনযাপন করতেন তাঁরা। বিন লাদেনের এক সফরসঙ্গী বলেন, তাঁরা কখনই জনসম্মুখে আসতেন না।
লাদেনের এক বিধবা জানান, বাড়ির চত্বরে হাঁটাচলা করার সময় লাদেন রাখালেরা ব্যবহার করে এমন ধরনের একটি টুপি পরতেন। যাতে তাঁকে সহজে কেউ চিনতে না পারে। ছয় বছর ধরে লুকিয়ে থাকার পরেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়েনি ওই বাড়িটি। বাড়িটির বিশাল ও অদ্ভুত আকার, লাদেনসহ বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের লম্বা দাঁড়ি, লোকজনের কম আসা-যাওয়া কোনোকিছুই নজরে পড়েনি স্থানীয় পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। লাদেনের সাহায্যকারী এক ব্যক্তির স্ত্রী মরিয়ম বলেন, ২০০৩ সালে সোয়াতে আল কায়েদা জঙ্গিদের ব্যবহূত কয়েকটি গাড়ি পুলিশ আটকায়।
গাড়িতে ছদ্মবেশে থাকা লাদেনকে চিনতে পারেনি পুলিশ।
অ্যাবোটাবাদ কমিশনের প্রধান জাভেদ ইকবাল পাকিস্তানি দুনিয়া টিভিকে জানান, ওই প্রতিবেদনটি অনেকটা ধারণাভিত্তিক। কমিশনের করা ১০০টি সুপারিশের মধ্যে থেকে একটিও প্রকাশ করেননি তিনি।
২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মার্কিন অভিযানে মারা যান ওসামা বিন লাদেন। লাদেনকে খুঁজে না পাওয়ার জন্য কমিশন সেদেশের সেনা ও গোয়েন্দাবাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করলেও কমিশন এটা বলেছে যে সরকার কোনো দুষ্কর্মে জড়িত ছিলও না।
সরকারের ভেতরে বা বাইরে কেউ সচেতনভাবে লাদেনকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করেননি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।