সাইফ শাহজাহান
শফিকুল ইসলাম শিবলী
উকিল হলেও, হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী ও শিক্ষিত জন অধ্যুষিত জনপদে তিনি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান হিসাবে। তাও পরপর দু’মেয়াদে। জনহিতকর কাজের স্বীকৃতিতে তিনি লাভ করেছিলেন ‘খান বাহাদুর’ খেতাব। সে বছরেই তিনি ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯২২ খৃস্টাব্দে পাবনা ও বগুড়া জেলার জন্য মুসলমানদের নির্ধারিত আসনে নির্বাচিত হন বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য হিসাবে।
১৯২৮ খৃস্টাব্দের ৩ অক্টোবর যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মবীর এ মহাত্মার জীবনাবসান ঘটে। পাবনার সদর গোরস্থানের নারিকেল পাতার ঝিরি ঝিরি আলো-ছায়ার মেদুর উষ্ণতায় তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা-বাদল, সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, দেশ-বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদির স্রোতধারায় বিস্মৃত একদার মুসলিম সমাজসেবক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী জন প্রতিনিধি ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদ। একজন নিবেদিত প্রাণ, নিঃস্বার্থ, মানব দরদী কর্মীর প্রতি বিস্মৃত পাবনাবাসীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাবার কোশেশ হিসাবে এ লেখাটির সূচনা। আজকের অনুকরণপ্রিয় বাঙালি জাতির জন্য অনুকরণের এক উজ্জ্বলতম নিদর্শন ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদ।
ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদ। পিতা পাতু সরকার। আজকের সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার যমুনা কূলবর্তী ধূলগাগড়াখালি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন বড় মাপের জোতদার, দ্বীনি এলেম ও রশ্মি সম্পন্ন মানুষ। এলাকায় ছিল তাঁর দারুণ প্রভাব।
বাড়ির বৈঠক খানায় মৌলভী সাহেবের কাছে শিশু ওয়াছিমের আরবী শিক্ষার হাতেখড়ি ঘটে। কিছুটা বড় হয়ে উঠলে গ্রাম্য পাঠশালায় যান। আধুনিক শিক্ষায় ছেলেকে শিক্ষিত করবার মন মানসিকতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। সেখান থেকে প্রবেশিকা, এফএ ও বিএ পাশ করেন তিনি। পরে কোলকাতা থেকে বিএল পাশ করেন।
অনেকটা হুজ্জুগের বশবর্তী হয়ে পাবনা জেলা স্কুলে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেন। কিছুদিনের মধ্যেই স্কুল সাব-ইন্সúেক্টর হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন। এ সময়ে স্কুল ইন্সপেক্টর ছিলেন একজন মুসলিম হিতৈষী মোহাম্মদ সোলায়মান। লোকমুখে যিনি ‘সোলেমান ডিবটি’ নামে পরিচিত। তারই সান্নিধ্যে এসে স্বাধীন পেশায় থেকে অবহেলিত মুসলিম কওমের খেদমতে নিজের জীবন উৎসর্গের অনুপ্রেরণা লাভ করেন তিনি।
স্বাভাবিকভাবেই চাকরি পরিত্যাগ করে যোগদান করলেন পাবনা জেলা আইনজীবি সমিতিতে। ১৮৭৯ খৃস্টাব্দে পাবনার জজ আদালত স্থাপিত হয়। ১৮৮৪ খৃস্টাব্দে বর্তমান জজ আদালতের ভবন নির্মিত হ’বার পরে পাবনা উকিল বাবুদের বার লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়া। এই চাহিদা পূরণ হয় ঊনিশ শতকের শেষভাগে। ১৮৯৭ খৃস্টাব্দের ১৯ ফেব্র“য়ারি তারিখে পাবনার সদর রেজিস্ট্রার অফিসের ৩০(ডি) সংখ্যাক্রমে সুজানগর (বর্তমানে) থানাধীন তাঁতীবন্দ সাকিনের জমিদার শ্রীশ্রী গোবিন্দ চৌধুরী, পিতা স্বর্গীয় সুখদা গোবিন্দ চৌধুরী, জাতি ব্রাক্ষ্মণ, পেশা জমিদারি, পাবনার তৎকালীন উকিল বার লাইব্রেরির সেক্রেটারি মহাশয় শ্রীযুক্ত মহিম চন্দ্র মজুমদার-এর অনুকূলে ‘এমারত’ নির্মাণের জন্য পত্তনী দেন।
এর দু’এক বছরের মধ্যেই পাকা এমারত নির্মিত হলে তখনকার পাবনার বারের ২৮ জন উকিল মহা ধূমধামের সাথে সে অট্টালিকায় প্রবেশ করেন। গৃহ প্রবেশ উপলক্ষ্যে একটি সন্দর্ভ প্রকাশিত হয় এবং সে অনুযায়ী পাবনা বার মাত্র ‘মুনশী এরফান’ নামে একজন মুসলমান উকিলের বর্ণনা মেলে। এর পরেই খান বাহাদুর মৌলভী মোঃ ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মেদ দ্বিতীয় মুসলমান উকিল হিসাবে যোগদান করেন। একটি পুরনো দিনের ওকালতনামা থেকে দেখা গেছে যে, ১৯০৩ খৃস্টাব্দের পরবর্তীতে পাবনায় উকিলের সংখ্যা ছিল ৮১ জন। এবং এর ২৮ ক্রমে উল্লেখিত হয় ‘মৌঃ মোঃ ওছিমদ্দিন আহম্মদ।
’ স্বাধীন পেশায় যোগদান করে সমাজ সেবার পাশাপাশি কেমন হয়েছিল তাঁর পসার। যখন সমাজের সর্বত্র হিন্দুদের দোর্দণ্ড প্রতাপ। পাবনার আরেক প্রবীন আইনজীবী আবদুস সবুর (মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বড় জামাতা, পিপি, স¤প্রতি প্রয়াত) ১৯৭৮ খৃস্টাব্দে শুরু করা তাঁর আত্মজীবনীকে লেখেন : মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলার অংশ হলেও পাবনা শহরে হিন্দুদের দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল। শহরের কেন্দ্র এলাকা লাহিড়ী পাড়ায় ১৯৫৮ সালে আমি বাড়ি খরিদ করে বাসায় এসে যখন গরু কোরবানী করলাম তখন আশপাশের হিন্দুদের মধ্যে ভীষণ প্রতিবাদ সূচক গুঞ্জরণ শুনা যায়। যদিও তখন পাকিস্তানের বয়স ১১ বৎসর।
১৯১০ সালের পূর্বে এখানে মুসলমানগণ শতকরা ৯৯ জনই ছিল নিরক্ষর। শিক্ষিত বলতে কেহ ছিল না বলা চলে। শহরেরর আশপাশে যে সমস্ত মুসলমান বাস করতেন তাদের প্রধান জীবিকা অর্জনের অবলম্বন ছিল গরুর গাড়ি চালানো, শহরে এসে দিন মুজুরি করা- সারা দিনের মুজুরি ছিল আধ খোরাকি চার আনা মাত্র। বয়ঃবৃদ্ধ গ্রাম্য লেকেরা এখনও আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় ‘বাবু’ বলে সম্বোধন করে থাকে। পাবনা জেলার মুসলমানদের সে যুগে (১৯০০-১৯৩০ ইং) এই অবস্থা তখন যে কৃষক সন্তান মুসলমানদের সামাজিক দুঃসহ অবস্থার কথা চিন্তা করে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন পাবনার লব্ধ-প্রতিষ্ঠ কৃতিসন্তান ও আইনজীবী খান বাহাদুর ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মেদ।
তৎকালে বিএ, বিএল পাশ করে তিনি এক বিস্ময়কর বস্তুতে পরিণত হন। বহু দূর দূরান্ত স্থান থেকে তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন তাহার বাড়িতে বহু অনুসন্ধিৎসু লোকের সমাগম হোত। তিনি যখন ১৯---- সালে পাবনা এসে ওকালতি আরম্ভ করেন তখন পাবনাতে তিনিই প্রথম মুসলমান উকিল। তখন উকিল মহাশয়গণ তার দিকে আড়চোখে তাকাতে থাকলেন এবং তাকে হিংসা ও ঘৃণার চোখে দেখতে থাকলেন। তিনি হিন্দু উকিল মহাশয়দের কোন প্রকার সাহায্য সহানুভূতি পান নাই।
তারা উকিল ওয়াছিমুদ্দিনকে সর্বদাই বিপদে ফেলবার চেষ্টা করতেন এমন কি তারা ওয়াছিমুদ্দিন সাহেবকে একবার কারাগারে পাঠাবার চেষ্টা করেন। ‘শিক্ষা একমাত্র উন্নতির মূলমন্ত্র’ এইটা উপলব্ধি করে তিনি তাঁর ক্ষুদ্র শক্তি নিয়েও শহরের নিজ বাসায় প্রতি বৎসর পাঁচ ছয়জন মুসলমান ছাত্র জায়গীর রেখে নিজ খরচায় স্কুল-কলেজে পড়াতেন। ১৯১২-১৩ সালে আসামে আমাদের গ্রামে একটি লোক খুন হয়। আসামে তখন ভাল উকিল ছিলনা। তাই গ্রামের সবাই মিলে পরামর্শ করে আমার পিতাকে পাবনা পাঠিয়ে দেন খান বাহাদুর মোঃ ওয়াছিম উদ্দিন সাহেবকে ঐ খুনের মোকদ্দমায় আসামী পক্ষে নিযুক্ত করে আসামের ধুবড়ী কোর্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
খান বাহাদুর ওয়াছিমুদ্দিন সাহেব ছিলেন আমার দাদার ও নানার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সেই সময়ে তিনি আমার পিতাকে বলেছিলেন, তোমরা তো গিয়েছ জঙ্গলের দেশে, সেখানে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখানোর চেষ্টা করবে। ’
পাবনা পৌরসভার একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৭৬ খৃস্টাব্দে ১ জুলাই প্রকাশিত হয় শতবর্ষ স্মরণিকা। এর ১৩ পৃষ্ঠায় ‘পাবনা পৌরসভার একশ’ বছর শীর্ষক রচনায় আজিজুল হক লেখেন : পাবনা পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রখ্যাত আইনজীবী খান বাহাদুর ওয়াছিম উদ্দিন সাহেব। ১৮৭৬ সালে তাঁর জন্ম হয়।
তিনি মাত্র ৫২ বৎসর জীবিত ছিলেন। কিন্তু এই স্বল্পকালীন জীবনে এই মহান কর্মবীর সমাজসেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যান। তিনি আঞ্জুমানে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯০৮ সাল থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে পৌর এলাকায় অনেক রাস্তাঘাট নির্মিত হয়।
পুরবাসীদের পানীয় জলের কষ্ট নিবারণের জন্য তিনি অনেক গুলি নলকূপ স্থাপন করেন। বেশ কিছু ব্রীজও তাঁর সময় নির্মাণ করা হয়। পাবনা শহরে তিনিই প্রথম বিএ পাশ উকিল। নারী শিক্ষা ও গরীব ছাত্রদের লেখাপড়ার জন্য তাঁর দান অবিস্মরণীয়। অঞ্জুমানে ইসলাম স্থাপন করে মুসলমান ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
বর্তমান টেকনিক্যাল স্কুলের ছাত্রাবাসটি এক সময়ে তার বাসভবন ছিল। পরবর্তীকালে তিনি তা টেকনিক্যাল স্কুলে দান করেন। দীর্ঘকাল দক্ষতার সঙ্গে পৌরসভার দায়িত্ব পালনের পর তিনি পাবনা জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। সেখানেও তিনি তাঁর কর্মোদ্যমে দৃষ্টান্ত রেখে যান। ১৯২৮ সালে এই মহান কর্মবীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি স্থানীয় মুসলমানদের শিক্ষার প্রয়োজন বোধ সৃষ্টি, তার প্রসার ও বিস্তার কল্পে গঠন করেন পাবনা জেলার মোসলেম শিক্ষা সমিতি। এই সমিতির প্রথম সম্মেলন হয় পাবনায় এবং সেটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯০৮ খৃস্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১৩১৫ বঙ্গাব্দের ২৭ ভাদ্র। এই সমিতির সেক্রেটারী ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ছিলেন, মৌলবী মজিদ উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরী, জমিদার, পাবনা। সহজেই অনুমেয় যে, তার এই সম্মেলন গোটা জেলার মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে।
স্বাভাবিকভাবেই মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সম্পন্ন করার সুযোগও নিয়ম হলে, উদ্দীপ্ত মুসলমানেরা তাদের ভোট সঠিক স্থানেই দিয়েছিলেন এবং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তাদের রায় সঠিক ছিল। প্রথম অধিবেশনে নাতিদীর্ঘ ভাষণটি মুদ্রিতাকারে প্রকাশ করে বিলি করা হয়। তা থেকে প্রাসঙ্গিক অংশটুকুর উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে :
‘হে ভ্রাতৃগণ, মুসলমান সমাজের দুরবস্থার বিষয় আপনাদের কাহারও অবিদিত নহে। শিক্ষার অভাবই যে এই দুরবস্থার মূলীভূত কারণ, তাহাও সকলেই হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিতেছেন। আপনাদের চক্ষুর সম্মুখে হিন্দু ভ্রাতৃগণ বিদ্যাবলে কত উন্নতি সাধন করিয়াছেন, তাদের বিদ্যা বুদ্ধি ও গুণপনা দেখিয়া ঈর্ষা পরবশ না হইয়া তাঁহাদের দৃষ্টান্ত অবলম্বন করিয়া স্বীয় উন্নতির চেষ্টা করাই প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
... যে পথ অবলম্বন করিলে সমাজের লুপ্ত যশঃ গৌরবের পুনরুদ্ধার হইতে পারে, তদর্থে প্রাণপণ চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য। ... দেশের প্রকৃত উপকার সাধন করিতে হইলে দেশের প্রধান অধিবাসী হিন্দু-মুসলমানের সমতা সম্পাদন করা সর্বাগ্রে কার্তব্য। ... অবস্থান সমতা ব্যতিরেকে প্রকৃত সহানুভূতি অসম্ভব। বিদ্যাশিক্ষার অভাবে মুসলমান সমাজের সামাজিক, নৈতিক ও ধর্ম সম্বন্ধে নানারূপ অবনতি হইয়াছে। প্রভূত শিক্ষা বিস্তার ব্যতিরেকে ঐ সমুদয় রোগের মূল্যেৎপাটন ও এই পতিত সমাজের উন্নতি সাধনের উপায়ন্তর নাই।
... নিজের সন্তান হউক বা অন্যের সন্তানই হউক মোসলেম সন্তানের বিদ্যালাভ হইলে সমাজের উন্নতি হইবে। ভিন্ন ব্যক্তির উন্নতি দ্বারা সমাজের উন্নতি হয় এবং সমাজের উন্নতি হইলে সেই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তাহার ফললাভ করে অতএব, হে মোসলেম ভ্রাতৃগণ। আলস্য, হিংসা ও দ্বেষ পরিত্যাগ করতঃ সমাজের শিক্ষা বিস্তারের উপায় নির্দেশ করুন। জগতের অন্যান্য জাতি কতদূর উন্নতি লাভ করিয়াছেন তাহা একবার দেখুন। এই পাবনা জেলায় শতকরা ৮০ জন মুসলমান ও ২০ জন ভিন্ন জাতীয় লোক।
অথচ শিক্ষিত লোকের তুলনায় মুসলমান শতাংশের একাংশও নহে। ... হে মোসলেম ভ্রাতৃগণ! আপনারা এই দরিদ্র ছাত্রগণের পিতামাতা স্বরূপ হইয়া তাহাদের ব্যয়ভার নিজে বহন করুন। ... এখনও সাবধান না হইলে ... এই সমাজের লোক কাষ্ঠ ছেদক ও জলবহন ব্যতীত অন্য কোন কাজের উপযোগী থাকিবে না। ... কি উপায় অবলম্বন করিলে অর্থ সংগ্রহ হইতে পারে ও উপযুক্ত বালক উপযুক্ত সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া বিদ্যালাভ করিতে পারে তাহা নির্দ্ধারণ জন্য স্থিরীকৃত হইয়াছে যে, আগামী জগদ্ধাত্রী পূজার বন্ধে অর্থাৎ ১৬ই ও ১৭ই কার্তিক মোতাবেক ১লা ও ২রা নভেম্বর পাবনা শহরে একটি জেলা শিক্ষা সমিতির অধিবেশন হয়। ... জনাব অনারেবল খান বাহাদুর মৌলবী সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী সাহেব এই সমিতির সভাপতি হইতে প্রতিশ্র“ত হইয়াছে।
জনাব মওলানা আবুবক্কর সাহেব ও অন্যান্য খ্যাতনামা বক্তাগণ উপস্থিত হইবেন বলিয়া আশা করি। ... হে হিন্দু ভ্রাতৃগণ, মুসলমান শিক্ষিত না হইলে দেশের প্রকৃত মঙ্গল আকাশ কুসুমবৎ থাকিবে। ... মুসলমান আপনাদের প্রজা, তাহারা আপনাদের প্রতিবেশী, সুতরাং সহানুভূতির যোগ্য। ’’ এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, সে সময়ে বিদ্যালাভে আগ্রহী ও সক্ষম মুসলিম বালকদের শহরে এসে বাস করা ও আহারের ব্যবস্থা করার সঙ্গতি না থাকায়, শিক্ষালাভ বন্ধ হয়ে থাকছিল। সামর্থবানদের বাড়িতে লজিং রাখার বা মুসলমান বালকদের জন্য হোস্টেল বা মেস করে দেবার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধানে গ্রামপ্রতি দশটাকা করে, সাহায্য প্রতি বছরে পাঠাবার জন্য আহবান জানান হয়।
স্বাভাবিক কারণেই এই আহবান পতিত মুসলমান সমাজে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় এবং শিক্ষা প্রসারে সমিতির উৎসাহ ও সহায়তায় মুসলিম ছাত্রের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরই পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও সমিতির সহায়তার নিজের বাড়িতে ৩০/৪০ জন মুসলিম ছাত্রের জায়গীর থাকা, স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ, রোগ-শোকে ঔষধ-পথ্যাদি দেওয়া এবং এমনকি পরিধেয় জামা-পাজামার যোগান দিয়ে এসেছেন তিনি আমৃত্যু।
প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে উল্লেখের দাবী করে যে, পাবনার উকিল মৌলবী ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদ যখন পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, সেই ১৯০৮ খৃস্টাব্দে, পাবনা শহরেই বেসরকারি পর্যায়ে অন্ততঃ ৮/৯ টি ব্যাংক সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছিল। যার মধ্যে ধন ভাণ্ডার, পাবনা ব্যাংক লিমিটেড প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। শহরে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার পরিবেশ রচনার পাশাপাশি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, পয়ঃনিষ্কাশন, নর্দমার উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানীয় জলের নিশ্চয়তায় পাকা ইদারা নির্মাণ, জলাশয় খনন ও সম্ভব মতো ব্যয়বহুল নলকূপ স্থাপন, মহামারী ও রোগ বালাই প্রতিরোধে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, মুসলিম শিক্ষার প্রসার, নারী শিক্ষার প্রসার ও প্রচলন এবং স্থানীয় টোল ও পাঠশালায় হিন্দু-মুসলিম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিদ্যাভাস করণ, মক্তব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী তাহজীব তমুদ্দনের পুনর্জীবনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালক করেছিলেন।
পরপর দু’ মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ায়, হিন্দু এলিট শ্রেণীর সহযোগিতা পাওয়ায়, পাবনার সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর নিঃস্বার্থ সেবা সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। সে কারণেই সরকার তাঁকে সম্মানসূচক ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে স্বীকৃতি প্রদান করেছিলেন। ১৯১৫ খৃস্টাব্দে জিলা পরিষদ (ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তীতেও অনুরূপভাবে জেলাব্যাপী ভ্রমণ, পরিদর্শন ও অভাব অভিযোগ দুর্দশা মোচনে তাঁর অতুলনীয় কর্মকাণ্ড বিশিষ্টতার স্বাক্ষর রেখেছিল। প্রাসঙ্গিক কারণে স্মর্তব্য যে, তিনি চিরা, গুড়, মুড়ি পোটলায় বেঁধে সাইকেলে চড়ে সারজমিনে দুর্দশা উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেছেন। এ জন্যে জেলা পরিষদ থেকে একটি টাকাও ভ্রমণ ভাতা বা আহার্য খরচা নেননি।
পরমুখাপেক্ষি থাকা বা এহসান বন্দেগী করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ ছিল। বিশেষ করে তাঁর সময় পাবনায় ম্যালেরিয়া জনিত রোগে মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্য বিভাগের সালে যোগাযোগ রক্ষা করে তিনি সরকারি ঔষুধের বরাদ্দ ও প্রতিষেধকের নিশ্চয়তা আদায় করেছিলেন।
মানুষ ও সামজের প্রতি কর্তব্য পালনে ও দেশের উন্নতির জন্য নিঃস্বার্থ শ্রমদানের বিষয়টি সবার মাঝে প্রশংসিত হওয়ার সুবাদে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের ১৯২২ খৃস্টাব্দের নির্বাচনে প্রার্থী হলে তিনি বিজয়ী হন। পাবনা জেলার ইতিহাস রচয়িতা শ্রীরাধারমণ সাহার গ্রন্থে পাই, ওয়াছিম উদ্দিন আহমেদ পেয়েছিলেন ১৫৬৯ ভোট।
একই আসনের হিন্দু আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন পাবনা জেলার চাটমোহর থানার অন্তর্গত হরিপুরের বিখ্যাত জমিদার পরিবারের বড় ছেলে, কলিকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আশুতোষ চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ২৮১১টি। ১৯২৬ খৃস্টাব্দে এমএলএ নির্বাচনে সম্ভবত স্বাস্থ্যগতকারণে তিনি আর প্রতিন্দ্বিতা করেননি। তবে পাবনা বারের তৃতীয় মুসলমান উকিল মৌলবী আবদুল গফুরকে বিজয়ী হতে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। উল্লেখ্য, তখন বৃহত্তর পাবনা ও বগুড়া জেলা মিলিয়ে মুসলিম স¤প্রদায়ের জন্য একটি আসন ছিল।
এর মধ্যে পাবনায় ১৯২৬ খৃস্টাব্দের ১ ও ৪ জুলাই সংঘটিত হয় দাঙ্গা। সা¤প্রদায়িক এ দাঙ্গার কারণে সরকারি রিপোর্টে কেউ নিহত হয়নি, এমন উল্লেখ রয়েছে। তবুও আহত হয়েছিলেন দু দিনে ১০ জন। শহরের প্রধান বাজার এলাকায় দাঙ্গার সূত্রপাত হলেও অচিরাৎ তা গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। বিশেষত, পাবনা সদর থানা ও সুজানগর থানার গ্রাম এলাকায় মুসলমানদের মসজিদ অপবিত্র করা ও আক্রমণ করার জের হিসাবে হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চলে।
এ দুটি থানা থেকে পুলিশ অন্ততঃ ৮/৯ শ’ গ্রামবাসীকে ধরে বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে চালান দেয়। পুলিশি তাণ্ডবে দাঙ্গা ঠাণ্ডা হলেও, ঘটনার ক্ষত চিহ্ন আর মামলা মোকদ্দমার জের চলে দু’তিন বছর। মুসলমান আইনজীবী তখন মাত্র দু’জন। অসুস্থ খান বাহাদুর ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদ এবং মৌলবী আবদুল গফুর। সিরাজগঞ্জের প্রখ্যাত মোখতার মৌলবী আফজাল খাঁ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অকাতরে, নিঃস্বার্থভাবে।
এর কয়েকটি মামলায় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং কলিকাতা হাইকোর্টের একজন মানবতাবাদী হিন্দু ব্যারিস্টার একাধিক দিন পাবনা জজ আদালতে এসে মুসলমানদের পক্ষে বিনা ফিসে আইনি লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তারপরও হৃতদরিদ্র মুসলিম স¤প্রদায়ের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া মামলার আদালত খরচা নেহাত কম ছিলনা। স্থানীয় মুসলমানেরা চাঁদা তুলে কিছুটা সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন নিবেদিতপ্রাণ সমাজকর্মী মৌলবী ওয়াছিম উদ্দিন আহম্মদই। এই সব বিপত্তির পাশাপাশি ছিল অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের কারণে শহরে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের ওপরেই অতিরিক্ত পুলিশ কর।
সেকালে সেটাই নাকি নিয়ম ছিল।
যে কারণে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধেছিল, সেটা ছিল অনেকটা এরকম : একদিন সকালে শহরের কালাচাঁদপাড়ার হিন্দু অধ্যুষিত মহল্লার একটি মন্দিরে কালী বিগ্রহের মাথা ভাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া গেল। শাস্ত্রীয় বিধান মতে কালী বিগ্রহের অবমাননাও বিসর্জনের জন্য শহরের হিন্দু স¤প্রদায়ের জমিদার, ধনী ব্যবসায়ী, উকিল মোখতার একাট্টা হয়ে বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে ঢোল বাদ্য বাদন নিয়ে এমন এমন পথে শহরে প্রদক্ষিণের ব্যবস্থা করলেন যেন, নামাজের সময়ে এই বাদ্য-বাজনা বিঘœ ঘটায়। যথারীতি আছর নামাজের ওয়াক্তে খলিফাপট্টি মসজিদে নামাজের জামাতের সময় শোভাযাত্রাকারিদের বাদ্য বাজনা বাজাতে নিষেধ করায় কথা কাটাকাটি ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া। মসজিদে আশ্রয় নেওয়,া প্রতিবাদকারীদের জনকয়কে ধাওয়া করে মসজিদের মধ্যে ঢুকে হিন্দু দুস্কৃতকারিরা লাঠির আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত জঘম করে।
নামাজীরাও হয় প্রহৃত। তারপরে অনলে ঘৃতাহুতি হতে সময় নেয়নি। সরাসরি কাইজ্যা ফ্যাসাদ শুরু হয়ে যায়। এর জের ধরে শহরের বাবুরা, এক রকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। দুধ, তাজা শাক-সবজি আর মাছের চালান দীর্ঘদিন পাবনা বাজারে ওঠেনি, আসেনি।
পরে মুসলিম নেতৃবৃন্দের আলোচনার মাধ্যমে অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ঘটনার নেপথ্যে যে সব উগ্রধর্মান্ধ হিন্দু নেতৃবৃন্দ কাজ করেছিলেন, জন রোষের মুখে তারা পরিবার পরিজন সহ অন্যত্র পাড়ি জমিয়ে ছিলেন।
খান বাহাদুর ওয়াছিম উদ্দিন আহমেদ বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের ডুবাইল গ্রামের এক ধর্মপরায়ণা স্বামীঅন্তপ্রাণ মহিষী রমণী হাজেরা বেগমকে। এই দম্পতির সাতটি সন্তানের মধ্যে জীবিত রয়েছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক আবু তায়েব শামসুল হুদা।
বড় ছেলে আবু নাজেম নূরুল হুদা। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে ঋণশালিশী বোর্ডের অফিসার, পরে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসে এবং শেষে ইলিয়ট বনমালি টেকনিক্যাল স্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক হন। মেজ ছেলে আবু সয়েব বদরুদ্দোজা টিপু। ইনিও এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ পাশ করে ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হিসাবে চাকুরি করেন। তার এক মেয়ে হামিদা বানু।
প্রয়াত বিচারপতি বদিউজ্জামানের সাথে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। তাঁর আরেক মেয়ে রাফিয়া বানু। পঙ্গুত্ব থেকে মারা যান। সবচেয়ে ছোট মেয়ে সেলিনা বানু। কুমিল্লার শিক্ষা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকলের প্রিয়, শ্রদ্ধেয় বড় আপা।
১৯৫৪ খৃস্টাব্দের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত পাবনা-নাটোর-নবাবগঞ্জ আসনের নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। মুসলিম স¤প্রদায়ের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণ এই ব্যক্তি নিজের বাসাবাড়ি দান করে দেবার পর শহরের দিলালপুর মহল্লায় (বর্তমান নিউ মার্কেট পাড়া) বসত বাড়ি নির্মাণ করেন। ঢেউ টিনের চার চালা, বাঁশের বেড়া কাঁচা মেঝে। তার বৈঠকখানাটি ছিল বহুদিন পাবনা শহরে মুসলিম ছাত্রদের একমাত্র ফ্রি জায়গীর খানা। আজো পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাটি নিবু নিবু হয়ে জ্বলে আছে।
মরহুমের স্মরণে ১৯৬০ খৃস্টাব্দে শহরের অদূরে টেবুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়াছিম পাঠশালা। তাঁর যা’ কিছু উপার্জন সবই ব্যয় হয়েছে জনকল্যাণে। ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন মিতাহারি, মিষ্টভাষী, অতিথি পরায়ণ, বিনয়ী। অত্যন্ত সহজ সরল সাধাসিধেভাবে জীবন যাপন করেছেন তিনি। অন্নদান ছিল তাঁর চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্য।
পতিত মুসলিম সমাজের দারিদ্র্য দূর করতে শিক্ষার প্রসারে আজন্ম নিবেদিত প্রাণ এই সব ব্যক্তিত্ব প্রজন্মের কাছে অবিস্মরণীয় আদর্শ রেখে গেলেও, তার বাস্তব রূপ আজ অনুপস্থিত। অনুপস্থিত জাতীয় গৌরব গাঁথার বিনির্মাণের মুজাহিদদের স্মরণ ও স্বীকৃতির মনোভাব। তাঁর ৭২ তম মৃত্যু বার্ষিকী কৃতজ্ঞ পাবনাবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর জন্য রইল অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২৯. ০৯. ২০০১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।