আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টনি জা : মার্শাল আর্ট মুভির থাই কিংবদন্তী

অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত... আমার শৈশব থেকে কৈশোরে রুপান্তর হওয়ার সময়টা কেটেছে জ্যাকি চ্যানের মুভি দেখে। স্টার মুভিজে জ্যাকি চ্যান মানেই টিভির সামনে আমার অনড় উপস্থিতি। বাসায় যখন ডিভিডি প্লেয়ার এল, ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে অ্যাকশন মুভির ডিস্ক কিনে আনতাম। প্রিন্ট নিয়ে তখন মাথা ব্যথা ছিল না। ওখানেই আমার প্রথম পরিচয় টনি জা'র সাথে।

চাইনীজ অ্যাকশন মুভি ভেবে সিক্স-ইন-ওয়ান মুভির ডিস্ক কিনেছিলাম; টম-ইয়াম-গুং, ওং-বাক, ওং-বাক ২, আর জ্যাকি চ্যানের তিনটা মুভি। প্রথম তিনটা দেখার পর আরও ভালো করে বুঝলাম, আসলেই অ্যাকশন কি জিনিশ! ওই তিনটা ছবি থাই মার্শাল আর্ট মুয়াই থাই এর অ্যাকশনভিত্তিক। নৃত্যের ভঙ্গিতে টনি জা'র মুয়াই-থাই অ্যাকশন এমনই চিজ, জুদো-কারাতেকে ঠুনকো মনে হয়। পারে কীভাবে! এত এত ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাকশন, তাও কম্পিউটারের কারিগরি ছাড়া, সম্ভব? তার লড়াই ভঙ্গি ওয়ান ম্যান আর্মির মত। এই লোক তো রীতিমত কিংবদন্তী! একাধারে মার্শাল আর্টিস্ট, অভিনেতা, কোরিওগ্রাফার, স্টান্টম্যান, প্রযোজক এবং পরিচালক টনি জা’এর নাম ছিল পানম ইয়েরুম, পরে পরিবর্তন করে নিজেই নিজের নাম রাখেন তাতচাকর্ন ইয়েরুম।

তিনি আমাদের কাছে যদিও টনি জা নামে পরিচিত, থাইল্যান্ডে জা পানম নামেই তাকে সবাই চেনে। তার জন্ম ব্যাংকক থেকে প্রায় ২০০ কি.মি. দূরে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। চার ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয় টনি বেড়ে উঠেছেন ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান, ভিন্স লাম আর জেট লি’র মুভি দেখে। তারাই ছিল ছোট্ট টনির আদর্শ। বাবার ধান-ক্ষেতে বন্ধুদের সাথে খেলার সময়ও তিনি তার আদর্শদের অনুকরণ করতেন প্রায়ই।

টনির বাবা ছিলেন একজন মুয়াই-থাই বক্সার, টনির দশ বছর বয়সে তিনিই তার মার্শাল আর্টে হাতেখড়ি ঘটান। কিন্তু টনি এতই সিরিয়াস হয়ে যান যে, বাবাকে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে বসেন, যদি না তাকে পান্না রিথিক্রাই’এর কাছে মার্শাল আর্ট শিখতে নিয়ে যাওয়া হয়। পান্না রিথিক্রাই একজন মার্শাল আর্ট স্টান্ট কোরিওগ্রাফার, তিনিই টনির মার্শাল আর্ট গুরু হলেন, টনির যখন ১৫। ২১ বছরের তরুণ টনিকে পান্না মহামরাকাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (মহা সারাক্ষা শারিরিক শিক্ষা মহাবিদ্যালয়) পাঠালেন। জাতীয় শারিরিক শিক্ষা মহাবিদ্যালয়ে টনি শুরু করলেন জুডো, আইকিদো আর তাইকোয়ান্দের পাঠ।

ক্রমেই দক্ষ হয়ে উঠলেন লং জাম্প, হাই জাম্প, জিমন্যাস্টিকস এবং তলোয়ার-যুদ্ধে। ফি বছর সোনার মেডেল ঘরে তুলতে থাকেন তিনি এইসব ইভেন্টে। সবকিছু ছাপিয়ে তিনি মুয়াই-থাই বিদ্যায় দুর্দান্ত পারদর্শী ছিলেন। পান্নার টীম “মুয়াই থাই স্টান্ট”এ তিনি স্টান্টম্যান হিসাবে ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন। এমনি করেই বেশ কয়েকটি কাজ করে ফেলেন তিনি।

তার প্রথম বড় সাফল্য আসে একটা এনার্জি ড্রিঙ্কসের বিজ্ঞাপণে যেখানে তিনি হংকঙের অভিনেতা সামো হুং’এর স্টান্ট হিসাবে একটা জলজ্যান্ত হাতির দাঁত ধরে কৌশলে উপরে চড়ে বসেন এবং ওটার পিঠের উপরে ডিগবাজি দেন। থাই টিভি সিরিজ “ইনসী ডায়েং” (লাল ঈগল)এও তিনি স্টান্ট ছিলেন। তাছাড়া ১৯৯৭এ মরটাল কমব্যাট এর রবিন স্যু এর স্টান্টও তিনিই করেন। পান্না এবং টনি দুজনই মুয়াই থাই’এর প্রাচীন রূপ মুয়াই বোরান’এর ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী ছিলেন এবং এক বছর এর পেছনে সময়ও দেন। টনি যে কী দুর্দান্ত কাজ জানে তা দেখিয়ে তারা ইন্সট্রাক্টর গ্র্যান্ডমাস্টার মার্ক হ্যারিসের সহায়তায় একটা শর্ট ফিল্ম তৈরি করেন।

এটা দেখিয়েই প্রযোজক-পরিচালক প্রাচ্য পিঙ্ক্যাও’এর চোখে পড়ে যান টনি। সেটাই হল তারকা টনি জা এবং ২০০৩ এর অন্যতম সেরা অ্যাকশন মুভি Ong-Bak : Muay Thai Warrior এর শুরু। টনি এতে অভিনয় করেন মুয়াই থাই কৌশল জানা এক গ্রাম্য যুবকের, যে শহরে আসে চুরি হয়ে যাওয়া বুদ্ধমূর্তির মাথা খুঁজতে। এই ছবির অ্যাকশন- তার দ্বিতীয় মুভি “টম-ইয়াম-গুং” এশিয়াতে মুক্তি পায় ২০০৫এ এবং একই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “The Protector” নামে। এরপর তিনি Ong-Bak মুভি সিরিজটি অভিনেতা ও পরিচালক হিসাবে ধরে রাখেন।

এই ছবির অ্যাকশন- এরপর একে একে Ong-Bak 2 (২০০৮) এবং Ong-Bak 3 (২০১০) করেন টনি। জ্যাকি চ্যান রাশ আওয়ার ৩ মুভিতে টনিকে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টনি তার ছেলেবেলার আদর্শ জ্যাকি চ্যানকে সবিনয়ে প্রত্যাখান করেন, তিনি Ong-Bak 2 ছবির শুটিঙে ব্যস্ত থাকায় সময় দিতে পারেননি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী টনি ২০১০ সালে একটি মন্দিরের সন্ন্যাসী হন এবং প্রায় প্রতিদিন মন্দিরে যান। তার দুটো পোষা হাতি আছে।

জনশ্রুতি আছে তিনি মুয়াই থাই ট্রেনিং ক্যাম্পের রিঙে পাঁচবার লড়ে পাঁচবারই জিতেছেন। হংকঙে ১০০০ লোকের উপস্থিতিতে বৃহত্তম মুয়াই থাই ট্রেনিং সেশন করার রেকর্ডও আছে তার। তিনি তার স্টান্টে কোনও প্রকার তার বা দড়ি বা সিজি ইফেক্ট ব্যবহার করেন না। দৈনিক ৮ ঘন্টা জিমন্যাস্টিকস, মুয়াই থাই আর অন্যান্য কসরতের অভ্যাস করেন। ৩৫ বছর বয়সেও টনি ২ মিটার উঁচুতে লাফ দিতে পারেন।

টনি জা’এর নতুন মুভি আসছে ২০১২তে, Tom-Yum-Goong 2. পরিচালক প্রাচ্য পিঙ্ক্যাও আর কোরিওগ্রাফার পান্না রিথিক্রাইও এই মুভিতে কাজ করছেন। আমাদের দেশের ডিভিডি মার্কেটে টনি জা'র মুভি সহজলাভ্য। ইন্টারনেটেও সহজেই ভালো প্রিন্টের ফাইল পাওয়া যাবে। না দেখে থাকলে দেখে নিন, ভালো লাগবে, গ্যারেন্টেড। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।