বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান টি-২০ খেলা; আর দশজন ক্রিকেট ভক্ত বাঙ্গালীর মত আমাকেও খেলা দেখতে হবে এই হলো চরম সত্য কথা, তা না হলে আগামী এক সপ্তাহ পেটের ভাত হজম হবার কথা নয়, কিন্তু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে পেটের ভাত হজম করার টনিক নিয়মিতই পাচ্ছি (৯টা-৬টা গাধার খাঁটুনী)। তার পরও বাংলাদেশের খেলা বলে কথা, কানে ইয়ার পিস গুঁজে এফএম রেডিওর কল্যাণে খেলার ধারাভাষ্য শুনছিলাম, বাংলাদেশের বোলিং কৃতিত্বে খেলা দেখার ক্ষুধাটা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেল।
সন্ধা ৬টা, অফিস থেকে বের হয়ে বাসে উঠলাম, ততক্ষণে পাকিস্তানের ইনিংস প্রায় শেষ। শেষপর্যন্ত ১৩৫ রানে পাকিস্তানকে বেঁধে রাখতে পেরে মনে মনে বিজয় উল্লাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্বে বাসায় পৌঁছানোর আগেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট নেই। বিপর্যয়ে ডরে না বাঙ্গালী, তাই আমিও আঁশায় বুক বেঁধে খেলা দেখতে বসলাম।
কিন্তু একে একে ব্যাটসম্যানদের পরাজয়ে মনের ভেতর দুঃখের মেঘ ঘন হতে লাগল, আরেকটি সম্ভাবনার আত্মাহনন দেখে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছিলাম, কিন্তু তার চাইতেও বড় হয়ে উঠল দুঃখবোধ যখন দর্শক গ্যালারীতে দেখছিলাম বাঁধভাঙা উল্লাস। খেলা সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর না রাখলে হয়তো ধরেই নিতাম বাংলাদেশ দল পাকিস্তান মল্লুকের কোন মাঠে খেলছে। দর্শক সমর্থকদের আনন্দের আতিশয্য, বেশভূষা আর সর্বোপরি পাকিস্তান সমর্থকদের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি দেখে এধরনের ভুল না হওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো এত পাকিস্তান সমর্থক এল কোথা থেকে? এরা কি আসলেই পাকিস্তানী নাকি সেইসব কুলাঙ্গার বাংলাদেশী যারা মনেপ্রাণে এখনো পাকিস্তানের গোলাম? আমার মতে এরা দ্বিতীয় দলেরই অন্তর্গত। এমন অভিজ্ঞতা নতুন নয়, কারন অতীতেও দেখেছি পাকিস্তান দল আমাদের মাঠে খেলতে এলে কিছু বেহায়া তরুণী পোস্টার অথবা ব্যানার হাতে নিজেদের উপস্থাপন করে, যাতে লেখা থাকে ম্যারি মি সোয়েব/ওয়াসিম/আফ্রিদি ইত্যাদি।
ওরে বেহায়া-কুলটার দল পাকিস্তানী ঔরসের সন্তান গর্ভে ধারনের এতই যদি ইচ্ছা তাহলে খুজে নে তোদের পাকিস্তান মল্লুকের কোন পতিতালয়, “আমার সোনার বাংলা”য় তোদের কোন স্থান নেই। স্মরণ কর সেইসব নারীদের কথা যারা ৭১এ হানাদারদের নির্যাতনের গ্লানি সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেঁছে নিয়েছিল, শিখে নে তাদের কাছ থেকে সম্ভ্রমের কি দাম। এই লজ্জা কোথায় রাখি! আর তোরা, নপুংশুক যুবকের দল, যারা পাকিস্তানের পতাকা হাতে আর গালে চাঁদ-তাঁরা এঁকে মাঠে আসিস পাকিস্তানকে সমর্থন করতে তোদের কি এতটুকুও লজ্জা হয়না স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও নিজের মনকে পাকিস্তানের গোলাম বানিয়ে রাখতে! আমরা আজকের যুবসমাজ হয়তো মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু আমাদের পিতা অথবা পিতামহের কাছথেকে শুনেছি সেইসব বিভীষিকাময় দিনের কথা, শুনেছি পাকিস্তানের বর্বরতা, শাসন আর শোষণের কথা, তারপরও আমরা আজ কিভাবে পারি সেই বর্বর হানাদারদের সমর্থন করতে! ওরে নপুংশুকের দল তোদের কি মনে পড়েনা সেইসব শহীদদের কথা যারা তাদের যৌবনকে উৎসর্গ করেছিল তোদের জন্য একটা স্বাধীন দেশ রেখে যেতে! সেই শহীদদের উত্তরসূরি হয়ে তোরা আজ কিভাবে পারিস বাংলাদেশের ব্যর্থতায় আর পাকিস্তানের বিজয়ে উল্লাস করতে! একটাই প্রশ্ন আমার, পাকিস্তান তোদের কি দিয়াছে? অসম্মান, অবহেলা, নির্যাতন আর শোষণ ছাড়া! যেই বাংলাকে তোদের পাকিস্তানী প্রভুরা বলতো নিচু জাতের ভাষা, সেই বাংলায় কথা বলিস আর মনে মনে বলিস জয় হোক পাকিস্তান। # লজ্জা... আমায় ক্ষমা কর প্রভু!# মোঃ রকিবুল হাসান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।