আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে, কখন, কোথায় এ-কথা বলেছেন?

শফিক হাসান ছোটকালে বাংলা পাঠ্যবইয়ে সবাইকে যে প্রশ্নটির উত্তর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে রাখতে হতো_ কে, কখন, কোথায়, কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন? উত্তরে একটু হেরফের হলেই জুটত শিক্ষকের তিরস্কার বা পিঠের ওপর অপ্রিয় কিছুর উপস্থিতি! কিন্তু পড়াশোনার পাট শেষ করার পরও আমরা চাইলে বাল্যকালের শিক্ষার প্রয়োগ নিয়ে ভাবতে পারি! আগের মতোই সংলাপের পথ ধরে উত্তরের কাছাকাছি পেঁৗছার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেতে পারে! মামা, ভাড়া দ্যান... প্রথম অবস্থায় মনে হতে পারে কোনো ত্যাঁদড় ভাগ্নে স্নেহময় মামার কাছ থেকে টাকা খসাতে চাচ্ছে। আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে এখানে মামা-ভাগ্নের কোনো ব্যাপারও নেই। বর্তমানে ঢাকায় নতুন একটা সংস্কৃতি চালু হয়েছে_ সবাই সবার মামা! আগে ভাই ডাকা হলেও এখন ভাইয়ের জায়গাটা শক্তিশালী মামার দখলে। যাত্রীরা লোকাল বাসে ওঠার পর সঙ্গত কারণেই ভাড়া দিতে একটু দেরি করতে চায়।

একবার চেয়ে ভাড়া পাওয়াটা খুব কষ্টকর ব্যাপার। আলোচ্য বাক্যে জনৈক ত্যাঁদড় যাত্রীর কাছে বাস কন্ডাক্টর ভাড়া চাচ্ছে! আমি নির্বাচিত হলে... এই একটি ক্ষেত্রে কারাও কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। দুগ্ধপোষ্য শিশুও বোঝে এ ধরনের কথা কারা, কখন বলেন, কেনই পয়দা হয়। দেশে সুষ্ঠু সমাজের যথেষ্ট অভাব থাকলেও সমাজসেবকের অভাব নেই। সমাজসেবকরা আবার নির্বাচন তথা ক্ষমতায় বসানোর শর্তে উন্নয়ন করার স্বপ্ন দেখান।

জনসভায় কিংবা নির্বাচনী প্রচারণায় তাদের চিরাচরিত সংলাপ 'আমি নির্বাচিত হলে এই করব, সেই করব...' ধরনের হাজারো প্রতিশ্রুতি! যদিও আখেরে তারা আসলে কিছুই করেন না তথা করতে পারেন না। কিন্তু করেন বা না করেন, সংলাপটা সব সময় ছায়ার মতো লেপ্টে থাকবেই! ছবিটি সপরিবারে দেখার মতো... মড়ক আজকাল নিরীহ পশুপাখির ওপর নয়, সংস্কৃতির পিঠেও আছর করেছে! শিল্পমাধ্যমও বাদ পড়ছে না। একসময় মানুষের বিনোদনের প্রধান ক্ষেত্রই ছিল বাংলা সিনেমা। এখনও অনেকের বিনোদনের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলা সিনেমা অপ্রতিদ্বন্দ্বী! যদিও এর দর্শক এবং গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় তলানিতে। নকল গান, নকল গল্প, নকল অভিনয়_ সবকিছু নকলে নকলময়! তবু সিনেমার পরিচালক কথায় কম যান না।

কাটপিসে ভরপুর ছবিকেও তিনি অবলীলায় 'সপরিবারে দেখার মতো ছবি' বলে আখ্যায়িত করতে পারেন। প্রধানত মিডিয়ার সামনেই এ ধরনের মিথ্যাচার করতে হয়! পোস্ট-মডার্নিজম সম্পর্কে ধারণা না থাকলে তুমি কবিতার কী বুঝবা... দেশে যতজন কবি, সংখ্যানুপাতে একজন কবির বিপরীতে দশ জন পাঠকও নাকি নেই! নিঃসন্দেহে এটা জাতীয় সমস্যা। অবশ্য এ সমস্যার যৌক্তিক কোনো সমাধানও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কবির সংখ্যা কমিয়ে পাঠকের সংখ্যা বাড়ানোর নিশ্চয়ই সুবুদ্ধির পরিচায়ক না। কবিদের আধুনিক কবিতা শুনে যে পাঠকদের মাথার তার ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, কবিরা তাদের মূর্খ ভিন্ন আর কিছু ভাবেন না।

পাঠক কবিতা বোঝে না বলেও তারা আক্ষেপ করেন_ কী হবে এই মূর্খ জাতি দিয়ে! কবিতা-মূর্খ পাঠক কবিকে কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে কবি আচ্ছামতো পোস্ট-মডার্ন সম্পর্কিত নিজের সমুদয় জ্ঞানগম্যি পাঠকের ওপর ঝেড়ে দেন। পাঠকের প্রাণ যাওয়ার উপক্রম, যাক; তাতে পোস্ট-মডার্ন কবির কী! আগামী মাস থেকে ১০০০ টাকা ভাড়া বেশি... এ ধরনের কথা ঢাকা শহরের দুর্দমনীয় বাড়িওয়লারাই বলতে পারেন_ সহজেই অনুমেয়। তারা ভাড়াটিয়াদের তেলাপোকার রাজত্বে বসবাস করাবেন, ভাঙা সিঁড়িতে হোঁচট খাওয়ানোর সুবন্দোবস্ত করবেন; ভাতে না হলেও পানিতে মারতে চাইবেন_ সময়মতো পানি ছাড়বেন না, ছাড়লেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রীয় নদীর পানির মতো হিস্যা নিয়ে তোড়জোড় করবেন_ এসবই বাড়িওয়ালা-চরিত্র। তাই বলে বাড়িওয়ালাদের কোনো প্রশ্ন কিংবা তাদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। তারা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী! সরকার যে কোনো কিছু করতে গেলে জনরোষ, মিডিয়ার বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কিন্তু বাড়িওয়ালারা এসব ভয় থেকেও মুক্ত। চাইলে যে কোনো সময় যে কোনো ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদের পাশাপাশি অকারণেই ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারেন। ভাড়াটিয়া থাকলে থাক, মরলে মরুক, বাঁচলে বাঁচুক_ বাড়িওয়ালার কী! তুমিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ... আজকের 'প্রেমময় বিশ্বে' কেউ একটা মাত্র প্রেম করে_ অনেকেরই বিশ্বাস হতে চাইবে না! চারদিকে যখন প্রেমের বাজার, প্রেমের ছড়াছড়ি; কীভাবে মানুষ একটা প্রেমে সন্তুষ্ট থাকে! একটা প্রেমের গল্প শুনেই সন্তুষ্ট হতে হয়। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার অন্তত গ া দুয়েক লাভার থাকবেই_ প্রেস্টিজ ইস্যু! প্রেমিক নিজের অন্য প্রেমগুলোর কথা প্রেমিকার কাছে গোপন রাখে, তেমনি প্রেমিকাও। 'তুমিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ' ধরনের কথা বলে প্রেমিকারা প্রেমিককে খুশি করতে চায়।

বোকা প্রেমিকপ্রবররা এতে খুশিও হয়! তাই বলে তুমিই আমার জীবনের প্রথম নারী এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসে না_ তারা জানে না, কখন মাথার ওপর থেকে কোন প্রেমিকার আঁচল সরে যায়; তারা নিজেরাই অন্য কোনো নারীর আঁচলতলে আশ্রয় নেয়! সঙ্গত কারণেই মিথ্যা কথাটা গদগদ ভঙ্গিতে বলে না! অন্যদিকে মেয়েরা সব প্রেমিককে 'প্রথম পুরুষ' বানানোর মর্যাদায় অভিষিক্ত করতেই থাকে! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।