( "যারা কথা বলে তাহারা বলুক/ আমি কাহারেও করি না বিমুখ/ তারা নাহি জানে- ভরা আছে প্রান। / তব অকথিত বানীতে। / নীরবে নিয়ত রয়েছে আমার/ নীরব হৃদয়-খনিতে । ")
আজ সারাটা দিন গুল্লুর মন খারাপ । গুল্লু ইদানিং মনে করছে- সে খুব দুর্বল ।
মনের দিক থেকে আরো বেশী । হিমি ছাড়া এমন কোনো নারী কি পাওয়া যাবে - যে অনেক ভালোবাসা নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে । গুল্লু এখন বুঝতে পারে স্বপ্ন দেখা ঠিক নয় । স্বপ্ন তো অবচেতন মনের কারসাজি । গতকাল রাত দুইটায় গুল্লুর হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল- তখন গুল্লুর খুব ইচ্ছা করছিল মরে যেতে ।
বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়ে মরতে ইচ্ছা করছিল । মৃত্যুর ভাবনা টা ভাবার পরেই মনে এক ধরনের আনন্দ হচ্চে গুল্লুর । বুকের ভেতর শান্তি শান্তি লাগছে । জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর জোছনা আতা হে, বহুত মজাকা বাত হে । গুল্লু শান্তি শান্তি ভাবটা উদযাপন করার জন্য বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো ।
প্রতিবার সিগারেট খাওয়ার সময় গুল্লুর একবার করে চায়ের কথা মনে পড়ে । হিমি থাকলে ভালো হতো চা করে দিতো । আচ্ছা, হিমিকে কেন বারবার গুল্লুর নিজের মানূষ বলে মনে হয় ! "ক্লান্ত মন সরিয়ে এনে চোখ রেখেছি তোমার গালে/ শরীর খুলে অন্য শরীর, কেন এমন লোভ দেখালে ?/ কিছুই বলা হলো না, তুমি কথা রাখোনি, দুঃখ অভিমানে- শ্বাস কষ্ট হলো আমার। / চোখেও জল এসেছিল । / চোখ সে কথা জানে/ আমি দ্বিধার মধ্যে ডুবে গেলাম ।
"
হিমি জানে, গুল্লু অপদার্থ হলেও মিথ্যাবাদী নয় । সত্যি কথা বলতে কি গুল্লুর সঙ্গ হিমির ভালো লাগে । এবং যতদিন যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে গুল্লুকে হিমির ভীষন প্রয়োজন । এই ভালো লাগাটাকে, প্রয়োজনটাকে অস্বীকার করা যায় না । প্রেম সহজ, ভালোবাসা সহজ নয় ।
ভালোবাসা এক অনুশীলন সাপেক্ষ ব্যাপার । গুল্লুর সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে না । তার গলা কাপে । কষ্ট কি হিমি জানে, তাই কখনো দিতে ইচ্ছে করে না । গুল্লু স্বাধীন ।
তাই গুল্লুওই ঠিক করবে তার কি করা উচিত । হিমি কাল রাত্র ঘুমানোর আগে গুন গুন করে গাইছিলো- ' আমার দুঃখ জোয়ারের জলস্রোতে/ নিয়ে যাবে মোরে সব লাঞ্ছনা হতে..." । হঠাৎ হঠাৎ হিমি অন্যমনস্ক হয়ে যায় । মনের ভেতর থেকে যেন আবেগটা বেরিয়ে আসতে চায় । গুল্লুর কথা ভাবলেই হিমির অনেক সুখ হয় কিন্তু বেদনাও কম নয় ।
তবু এ বেদনা অন্যরকম । গুল্লুর মুখটা সমস্ত পৃথিবীকে আড়াল করে রাখে । হিমির একটাই ভয়, সে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই জয়ী হতে পারে না । তার শেষ ভরসা গুল্লু । গুল্লু সবচেয়ে বড় সমস্যা খুব অগোছালো ।
হিমি ভাবে গুল্লুর সাথে তার বিয়ে হবে । একটা বাচ্চা হবে । গুল্লুর প্রধান কাজ হওয়া উচির আমি আর বাচ্চাটা যেন এক আকাশ আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি । বাচ্চাটা তার পেটে আস্তে আস্তে বড় হবে । মায়ের পেটে শরীর তৈরি হয় কিন্তু মন ? গুল্লু বলেছে বাচ্চাটার নাম রাখবে গেদু ।
হিমির শরীর থেকেই অক্সিজেন নিবে গেদু । গেদু একদিন পৃথিবীতে আসবে । বাচ্চারা যতদিন মায়ের পেটে থাকে ততদিন হয়তো ঈশ্বরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে । ভূমিষ্ট হওয়ার পর আর পারে না । হিমির মন ভার হয়ে যায় ।
সে কি করবে বুঝতে পারে না । একটা ইচ্ছা শক্তিই হিমিকে চালিয়ে নিচ্ছে । কি মনে করে হঠাৎ হিমি গুল্লুকে ফোন দেয় । গুল্লু ফোন ধরেই বলল, কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো- ব্যস্ত আছি । হিমি বলল- তুমি ছাড়া আমার জীবনে আজকে আনন্দ বলতে কিছু নেই ।
গুল্লু বলল- আচ্ছা, শোনো আমি তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি, এখন রাখি বলেই ফোন কেটে দেয় । সাথে সাথে হিমির চোখ ভিজে উঠল । গুল্লুর ব্যবহারে হিমির মন খারাপ হয়ে যায় । তারপরও বার বার গুল্লুর কাছেই যেতে ইচ্ছা করে হিমিত । হিমি ঠিক করলো আগামী এক সপ্তাহ মোবাইল বন্ধ করে রাখবে ।
গুল্লু বুঝে না, এ বিশ্ব সংসারে পুরুষের চেয়ে নারীর বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য অনেক বেশী । পুরুষ যতই সুপুরুষ হোক, নারীর দেহ-লাবন্যের কাছে সে তুচ্ছ । মা ধরিত্রীর মতোই নারী পরম সহনশীলা । তাই তো সে হাসি মুখে সন্তানের জন্ম দেয় । নারী কখনো মোহময়ী, কখনও স্নেহময়ী, কখনো সে স্নিগ্ধ শান্তি আবার কখনও সে বিভীষিকা ।
ত্যাগে ভোগে নারীর কাছে পুরুষ নিত্য পরাজিত । বোকা গুল্লু ঠিক করেছে- দূরে কোথায় পালিয়ে যাবে । পাহাড় আর সমুদ্রের কাছে যাবে শান্তির আশায়, আনন্দের লোভে, বৈচিত্র্যের সন্ধ্যানে । কিন্তু প্রিয় মানূষের কাছে যে শান্তি, যে আনন্দ ও বৈচিত্র্য পাওয়া যায়, তা কি অন্যত্র পাওয়া যাবে ? গুল্লুর ঘুম আসে না । আবছা চাঁদের আলোয় বেলকনিতে বসে থাকে ।
হিমির একান্ত আন্তরিক ভালোবাসা উপেক্ষা করার প্রশ্নই আসে না ।
গুল্লুর সাথে হিমির পরিচয়ের কাহিনীটা বলি- মিরপুর থেকে ফার্মগেট আসছিল গুল্লু অনামিল বাসে করে । ছুটির দিন, শুক্রবার বিকেলবেলা । বাসে তেমন একটা ভিড় ছিল না । সেই সময় আইডি ভবন এর সামনে থেকে বাসে উঠে এলো একটি মেয়ে ।
সবুজ চওড়া পাড়ের একটা শাড়ি পরনে ছিল । মাথার চুল খোলা । মেয়েটার গায়ের রঙ শ্যামলা কিন্তু চোখে মুখে স্নিগ্ধতা । মেয়েটি এসে বসলো গুল্লুর পাশে । ঘটনা কিছুই না ।
রোজ হাজার হাজার মেয়ে বাসে উঠে। কিন্তু অবাক ব্যাপার এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে- গুল্লুর যেন কেমন বোধ হচ্ছিল । মেয়েটি অনেক সুন্দর করে চোখে কাজল দিয়েছে । কপালের টিপও সুন্দর । সবচেয়ে বেশী সুন্দর থুতনিটা ।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, মেয়েটির চোখ ! যেন চোখ দিয়েই গুল্লুকে অজানা কোনো বার্তা পাঠালো । মেয়েটা তিনবার তাকালো গুল্লুর দিকে । কিছুটা হাসিও ছিল তার চোখে মুখে । যেন মেয়েটা কিছু না বলেই বলল, কি আমাকে চিনতে পারোনি ? গুল্লু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । তারা মুখে কথা বলেনি একটাও ! কিন্তু মনে মনে অনেক কথা হয়ে গিয়ে ছিলো ।
পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু;জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশ ।
'চলো বিয়ে করে ফেলি' লেখাটা এখানেই শেষ । হয়তো অনেকে বলবেন, নামের সাথে লেখাটার কোনো মিল নেই ! শুধু তাদের জন্য- " গভীর রাত । অনেকদিন পর গুল্লু হিমিকে ফোন দিলো । গুল্লু বলল- কেমন আছো ? অনেকক্ষন চুপ থেকে কাঁদতে কাদতে হিমি বলল- তারপর থেকে ভাঙ্গতে থাকি, গড়তে থাকি, পড়তে থাকি, উঠতে থাকি, ডুবতে থাকি, ভিজয়ে থাকি- তবুও কিন্তু চলতে থাকি ।
গুল্লু বলল- চলো বিয়ে করে ফেলি !
আপাত কার্যকারণ ছাড়াই যে সমস্ত ক্ষুদ্র ব্যাপার ঘটে তাই কেমন করে পরবর্তী সময়ে মানুষের সমস্ত জীবন বদলে দেয়, ভাবতে অবাক লাগে ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।