আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ই-কৃষির দিন সনি্নকটে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে যাত্রা ...

কৃষক ঘরে বসে বোতাম টিপবে, যন্ত্র থাকবে মাঠে ফসলের মাঠে বলদের হাল চাষ, বীজ তলা তৈরি, চারা রোপণ, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সেদিনের চেনা দৃশ্যগুলো হারিয়ে গিয়ে যে যন্ত্র এসেছে তাও থাকছে না। কৃষিও 'ই-যুগে' প্রবেশ করছে অতি দ্রম্নত। দুর্যোগ মোকাবেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বিজ্ঞানীরা কৃষিকে নিয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক (ই) ডিভাইসে। এই ভাবনায় যে সব যন্ত্র উদ্ভাবিত হচ্ছে তাও দ্রুত আসছে বাংলাদেশে। আবার দেশী কারিগররাও নিজের গরজে স্থানীয় প্রযুক্তিতেই তৈরি করছে অনেক যন্ত্র।

মাঠের কৃষক এ সব যন্ত্রের সঙ্গে সহজেই পরিচিত হতে পারছে। তাদের কায়িক শ্রম কমে গিয়ে বাড়তি সময় অন্য কাজও করতে পারছে। এখন কিষান মজুরেরও দরকার হয় না বেশি। সব কিছুই যন্ত্রে । একটা সময় কৃষক ঘরে বসে ই-ডিভাইসের বোতাম টিপেই কাজ করবে।

মাঠে থাকবে যন্ত্র। কৃষিতে যন্ত্র যুগে প্রথম প্রবেশ উত্তরাঞ্চলের বগুড়া জেলার প্রায় ৫০ বছর আগে ষাটের দশকে। এখন ই-যুগে প্রবেশের পথে পা বাড়িয়েছে। দ্রম্নত দেখা যাবে মাঠে শুধুই যন্ত্র। চারা রোপণের যে যন্ত্র এসেছে তা এতই আধুনিক যে দুর্যোগ মোকাবেলা জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করবে।

যন্ত্রটির নাম 'রাইস ট্রান্সপস্নান্টার। ' বীজতলা তৈরি করা থেকে চারা রোপণের জন্য কৃষকের যে খরচ হয় তা অর্ধেকে নামিয়ে দেবে এই যন্ত্র। একই সঙ্গে চারা তৈরির সময়ও কমিয়ে দেবে। বীজতলা বানিয়ে যে কোন জাতের ধানের চারা তৈরিতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন মাস। রাইস ট্রান্সপস্নান্টারের ট্রে ঘরের যে কোন স্থানে বসিয়ে চারা তৈরি করে দেবে মাত্র ১৫ দিনে।

এই ট্রে যন্ত্রের সঙ্গে সেট করে যন্ত্র চালিয়ে মাঠে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টায় আড়াই বিঘা জমিতে চারা রোপণ করে দেবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের তৈরি এই যন্ত্র গত বছরের শেষে বাংলাদেশে এসেছে। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে (আরডিএ) সেপ্টেম্বরের শেষে অনুষ্ঠিত মেলায় এসিআই কোম্পানির স্টলে এই যন্ত্রের প্রদর্শন করা হয়। এসিআইয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা তুষার জানান, রাইস ট্রান্সপস্নান্টার কৃষকদের মধ্যে পরিচিত করে পেঁৗছে দিতে ২৫টি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ব্রি) বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে (বিএডিসি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিক্রির জন্য ডিলারদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

বগুড়ায় যন্ত্রটির সঙ্গে অনেক কৃষকের পরিচিতি ঘটেছে। কেউ যন্ত্রটি কিনলে বিশেষ ধরনের দেড় ফুট বাই আড়াই ফুট মাপের ৫০টি ট্রে দেয়া হয়। বাড়তি দাম দিতে হয় না। পস্নাস্টিকের তৈরি এই ট্রের ভেতর নির্ধারিত মাপে মাটি ভরিয়ে জৈর সার ও অতি সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার মিশিয়ে বীজতলা বানিয়ে ঘরের কোন এক জায়গায় রেখে দিলে পনের দিনেই চারা গজিয়ে যাবে। একটি ট্রের চারা ২ শতকেরও বেশি জমিতে রোপণ করা যায়।

কোন কৃষক বেশি চারা রোপণ করতে চাইলে বেশি ট্রে কিনতে পারে। এভাবে ঘরের মধ্যে চারা উৎপাদনে দুর্যোগের কবলে পড়তে হবে না। সাধারণত বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, ঘন কুয়াশায় চারা নষ্ট হয়। চারা নষ্ট হলে তা পুনরায় বীজতলা তৈরিতে বাড়তি সময়ও লাগে। ফলে ফসলের সময়ও চলে যায়।

রাইস ট্রান্সপস্নান্টার যন্ত্র এ ধরনের সমস্যা দূর করে দিয়েছে। চারা তৈরিতে সময় কম লাগায় বাড়তি সময়ে অন্য কোন ফসল আবাদ করে ৩ ফসলি জমিকে ৪ ফসলিতে পরিণত করা যায়। জমিতে চারা রোপণে যে সময় লাগত তা অনেক কমে গিয়ে একেবারে 'টু দ্য পয়েন্টে' চারা রোপিত হয়ে ফলনও বাড়বে। এক ঘণ্টা চালাতে খরচ হয় এক লিটার জ্বালানির। এমন আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে ই-কৃষি ব্যবস্থা দ্রম্নত ধেয়ে আসছে।

কম্বাইন্ড হারভেস্টর নামে এক যন্ত্র দ্রম্নত ধান কেটে কৃষকের আঙ্গিনায় নিয়ে গিয়ে মাড়াই করে দেয়। আধুনিক থ্রেসার যন্ত্র শ্যালো ইঞ্জিনের কনভেয়ার বেল্টের সাহায্যে চলে যেখানে ধানের অাঁটি ঢুকিয়ে দিলে নিচে ধান ওপরে গোলাকৃতির চোঙ্গা অংশ দিয়ে খড় আলাদা হয়ে উড়ে গিয়ে উঠানে পড়ে। শ্যালো ইঞ্জিনে ভ্রাম্যমাণ ধান ভানার যন্ত্র কৃষকের উঠানে গিয়ে পেঁৗছেছে। আলু তোলার যন্ত্রসহ নানা ধরনের যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন হয়ে দেশে এসেছে। বগুড়ার কারিগররাও নিজেদের মেধায় উদ্ভাবন করেছে থ্রেসার যন্ত্র।

এসিআই চারা রোপণের যে 'রাইস ট্রান্সপস্নানটার' এনেছে তার দাম ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা (৫০টি পস্নাস্টিকের ট্রেসহ)। তবে এই দাম কমতে পারে। বর্তমানে অনেক কৃষক সমবায়ী ভিত্তিতে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর কিনছে। সমবায়ী ভিত্তিতে চারা রোপণ যন্ত্র কিনতে পারে তারা। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায়, কৃষির নতুন যে উদ্ভাবনই আসে দ্রম্নত পেঁৗছে যায় কৃষকের কাছে।

ধনী কৃষক নিজেই কেনে। মধ্যম কৃষক সমবায় ভিত্তিতে কেনে। যাদের যন্ত্র আছে তারা ক্ষুদ্র কৃষকের জমিতে চাষ দেয়া থেকে সেচ দিচ্ছে যন্ত্র ভাড়া দিয়ে। ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, উন্নত দেশে এ সব যন্ত্রেই কম্পিউটারাইজড করে দেয়া হয়েছে। যন্ত্রের বোতাম টিপলেই কৃষির যাবতীয় কাজ করে দেয় অনেকটা রোবটের মতো।

কম্পিউটারের দিন বেশি দূরে নেই যেদিন বাংলাদেশের কৃষক ই-কৃষিতে বোতাম টিপে যন্ত্র চালাবে। বগুড়ায় টিলারের পাশাপাশি ট্রাক্টর এসেছে। অনেক এলাকার কৃষক আইল তুলে দিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে দ্রম্নত চাষ করে নিচ্ছে। বগুড়ায় কৃষির প্রায় সকল কাজই হচ্ছে যন্ত্রে। বগুড়া অঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে গোয়ালঘর নেই।

টিলার, সেচ যন্ত্র, থ্রেসার মেশিন সবই আছে। এখন মাঠে গেলে কৃষককের সারিবদ্ধভাবে ভাটিয়ালি গান গেয়ে কাজ করার দৃশ্য চোখে পড়ে না। সময় আসছে ঘরে বসেই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের বোতামে টিপ দিয়ে কৃষি কাজের। ফসলের মাঠের কৃষি কাজের সেদিনের দৃশ্যগুলো চলচ্চিত্রের ফ্রেমে ইতহাস হয়ে থাকবে। অতি নিকটেই ই-কৃষির দিন শুরম্ন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।