অলস ছেলে দলীয়করণ ও আত্মীয়তার রাহুগ্রাসে পিএসসি
ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়কুলের রাহুগ্রাসে বন্দি এখন সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে ব্যাপক দলীয়করন ও আত্মীয়করণ। বড় পদ, ছোট পদ—সব ক্ষেত্রেই স্বজনদের ছড়াছড়ি। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও এমপিসহ সরকারি দলের প্রভাবশালীদের আত্মীয় এবং অনুগতরা ছাড়া এ সংস্থায় এখন অন্য কারও ঠাঁই নেই। কমিশনে বর্তমানে চেয়ারম্যানসহ ১৪ সদস্যের ১৩ জনই দলীয় অনুগত ও প্রভাবশালীদের আত্মীয়।
সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ও জনতা মঞ্চের রূপকারও আছেন কয়েকজন। পিএসসির সদস্য হয়েও সর্বেসর্বার আসনে আছেন আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. এমরান কবির চৌধুরী। তত্ত্বাবধায়ক সময়ে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যানসহ সরকার সমর্থক বাদে অন্যরা প্রচণ্ড চাপ এবং কোণঠাসা হয়ে আছেন। দাবড়ে বেড়াচ্ছেন সরকার সমর্থকরা।
জনপ্রশাসন: কোটার নিষ্পেষণে মেধাবীরা কোণঠাসা; প্রতিবন্ধী হওয়ার পথে দেশ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।
এর কারণ বহুবিধ এবং এটি বড় ধরনের গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। তবে সহজভাবে দেখা যায়, বিদেশে চাকরির ভালো সুযোগ, দেশে অধিকতরও সুযোগ-সুবিধায় বেসরকারি চাকরি, সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে বেতন-ভাতাদির শোচনীয় অপ্রতুলতা এবং সরকারি চাকরির যুগবাহিত মর্যাদার হ্রাস এর মূল কারণ। তা সত্ত্বেও যেসব মেধাবী তরুণ-তরুণী সরকারি চাকরিতে আসতে চাইছেন বা এসেছেন, তাঁরাও সম্মুখীন হয়েছেন বা হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার। দীর্ঘকাল এ অবস্থাটি সরকারি চাকরিতে তুলনামূলকভাবে মেধাহীনদের সমাবেশ ঘটিয়েছে। তাই আজ দায়িত্বশীল মহল থেকেই প্রস্তাব আসছে, চাকরির শীর্ষ পর্যায়ে বাইরে থেকে মেধাবীদের আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দিয়ে নিয়ে আসার।
এর জন্য কৌশলে একটি আইনি বিধান করার চেষ্টাও লক্ষণীয় হচ্ছে। কিন্তু সমস্যার গভীরে না গিয়ে এ ধরনের সমাধানের প্রয়াস বিপরীতধর্মী ফলই দেবে।
সামগ্রিক বিষয়াদি আলোচনার জন্য অনেক বড় পরিসর আবশ্যক। সেটা বর্তমান নিবন্ধে সম্ভব নয়। মেধাবীদের একটি বড় অংশ সরকারি চাকরিতে আকর্ষণ হারানোর পরও যাঁরা আসতে চাইছেন, তাঁরা যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, তার দু-একটি প্রধান বিষয় আলোচনা করব।
বলা বাহুল্য, সাংবিধানিক পদগুলো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ব্যতীত সব বেসামরিক চাকরিতে এ প্রতিবন্ধকতা বিরাজমান। প্রধান প্রতিবন্ধকতাটি হচ্ছে, একটি বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতি। বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের জন্য কোটার বিন্যাস হচ্ছে শতকরা হিসাবে—মেধা ৪৫, মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০, উপজাতি (এ নামেই কোটাটি সংরক্ষিত আছে) ৫ এবং প্রতিবন্ধী ১। যোগ করলে ১০১ হয় বিধায় অনুসন্ধানে জেনেছি, সেই ১ শতাংশ অন্য কোনো কোটা পূরণ না হলে তা থেকে দেওয়া হয়। এসব পদের মধ্যে সনাতন ক্যাডার সার্ভিস ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, কৃষিবিজ্ঞান, প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি রয়েছে অর্থাৎ আমরা শুধু প্রশাসন, পুলিশ, কূটনীতিক, হিসাব ও নিরীক্ষা, শুল্ক ও কর—এসব পদেই মেধাবীদের প্রবেশ সীমিত করিনি; সীমিত করেছি কলেজশিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিজ্ঞানী, প্রাণিসম্পদবিদসহ সব ক্ষেত্রেই।
বছর দুই আগে থেকেই অধস্তন বিচার বিভাগেও এ কোটা পুনরায় চালু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পৃথক জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠনের পর প্রধানত মেধাই প্রাধান্য পেত। অব্যাহতভাবে এ ধরনের নিয়োগের পরিণতি কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। উল্লেখ করা যায়, ৩১তম বিসিএসে প্রাধিকার কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ৭৭৩টি পদ শূন্য রাখা হয়েছে বলে পিএসসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন (কালের কণ্ঠ, ৯ জুলাই)। অথচ সম্মিলিত মেধাতালিকায় ওপরের দিকে অবস্থান করেও অনেকে চাকরি পেলেন না।
কী নির্মম পরিহাস!
২৯তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারের ৪১২ জনের মধ্যে ২১১ জন কোটায় আর ২০১ জন মেধায় নিয়োগ পান।
২৮তম বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে মোট ৬৫৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪৭ জনই নিয়োগ পান বিভিন্ন কোটায়।
মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি রয়েছে।
৩২তম স্পেশাল বিসিএস সার্কুলারে ক্ষুব্ধ মহিলা প্রার্থীরা: দেড় হাজারে ১৩০ মহিলা ১১৫৮ মুক্তিযোদ্ধা ও ২০১টি উপজাতি কোটা।
কোটা বন্টন (ক্যাডার, ননক্যাডার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার জন্য):
মেধা তালিকা: ৪৫%
জেলাকোটা: ৫৫%
মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৩০%
নারী কোটা: ১০%
আদিবাসী কোটা : ৫%
সাধারণ কোটা: ১০%
উৎসঃ Click This Link §ionid=4&id=180&Itemid=27&lang=bn ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।