আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) ঢাকায় বাইরে খুব একটা আত্নীয় নেই আর ঘোরার উদ্দেশ্যে এপর্যন্ত শুধু একদিনের জন্যে সিলেট যাওয়া হয়েছিলো, যদিও খুব ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াতে।
যাগগে আজকে বলবো প্রথমবারের মতন ঢাকা-গ্রামের বাড়ী বাদে ঢাকার বাইরে যাওয়া।
সময়টা ০৮ সালের এপ্রিলের দিকে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে দাদুকে বেশ কষ্ট করে ঢাকায় এনেছিলাম। এর পরে আর আসেননি। ছোট ফুপু ফুপার চাকরীর সুবাদে সৈয়দপুর (নীলফামারী) থাকেন। অনেক দূরে বলে সাধারনত কারো যাওয়া হয়না সেখানে।
এ নিয়ে তাদের বেশ দুঃখ। আর দাদু বেশ আফসোস করে বলছিলেন তার চোট মেয়ে কোন জায়গায় থাকেন তা দেখার ইচ্ছা। আম্মা আব্বাকে বলে রাজী করালেন। যাক দাদুর উছিলায় যাওয়ার সুযোগ পেলাম কোথাও যদিও তার কিছুদিন পরেই আমার পরীক্ষা ছিলো। হোক পরীক্ষা তাতে কি!
ঠিক হলো নিলসাগর ট্রেনে যাবো।
খুব এক্সাইটেড ছিলাম জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নি। আমার কাজিন(ফুপাত ভাই) সব সময় গেলেও ও কখনও নীল সাগরে যায়নি তাই ওটার টিকেট কাটার সিস্টেম ভাল বুঝতে পারে নি। ট্রেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে ছাড়লেও ওখান থেকে টিকেট কাটলে সিট নম্বর দেয় না। সিট নম্বর পেতে কমলাপুর থেকে কাটতে হয়। ব্যাপারটা জানাছিলো না।
যখন জানলাম মেজাজ খারাপ ছাড়া কিছু করার ছিলো না। এ বগি ও বগি ঘুরে মোটামুটি ফাঁকা এক বগিতে বসলাম। সিটের ব্যাপারটা মনে হয় টিটির সাথে বলে মিটিয়েছিলো।
আমাদের সীটের সামনের দিকে এক লোক তার বোন ও বোনের দুই ছেলেকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন মনে হয়। ।
যাগগে সে কথায় আসছি পরে। ট্রেন ছাড়লে মনটা একটু খারাপ হলো, এত্ত দিন ধরে ভাবতআম ট্রেন চলবে অনেক দ্রুত, সবকিছু দেখতে দেখতেই যলে যাবে কিন্তু একি ! ট্রেন এত আস্তে চলছে কেন! ভুলটা ভাংলো জয়দেবপুর ছাড়াল. সবচেয়ে চিন্তিত ছিলাম দাদুকে নিয়ে। উনি বাস জার্নি করলে আধমরা হয়ে যান। ভেবেছিলাম ট্রেনেও যদি ওরকম হয়, তাও ৮/৯ ঘন্টার জার্নি। কিন্তু দেখলাম সে খুব ভাল ভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন।
অনেক জায়গা থাকায় একাই দুই সিটে শুয়ে-বসে জানালা দিয়ে সব দেখতে লাগলেন।
বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তি ধরে যাচ্ছিলো। প্রথম থেকেই দেখছিলাম বোন সাথে করে এসেছেন যে লোক তিনি বেশ খাতির করার চেষ্টা করছিলেন। কি নাম আমার, কি করি, কোথায় থাকি....ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে জেনে নিলো। এর মাঝে আমার কাজিন ও আম্মার সাথেও বেশ খাতর জমিয়ে ফেললো।
বেশ বিরক্ত লাগছিলো আমার।
আর্মিতে আছে...ক্যান্টমেন্ট থাকে হেন তেন বললেন। আমার কাজিনকে এক ফাঁকে নাকি তার আইডেন্টি কার্ডও দেখায় পরিচয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে! এখানেই শেষ না, বিষ্ময় আরো অপেক্ষা করছিলো।
জোহরের নামাজের সময় হলে টয়লেটে গেলাম ফ্রেশ হয়ে অযু করে নামাজ পড়বো বলে। দেখি সেখানেও সে হাজির।
কাজিনের সাথে আলাপ জুড়ে দিয়েছে। আমি নামাজ পড়ে আসলে আম্মা গেলেন। এর মাঝে সে পেলো মোক্ষম সুযোগ। আমাকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করে ফোন নাম্বারটাই চেয়ে বসলেন। দিতে রাজী না হলে সে তআর নিজেরটাই একটা কাগজে লিখে দিলেন।
শুধু তাই নয় দিয়ে বললেন "আজকে থেকেই আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো"
কিয়ের কি ট্রেনে থাকতেই নাম্বার দিলাম জানালা দিয়া ফালাইয়া।
আমার দাদু পুরো ব্যাপারটা লক্ষ করছিলেন এবং বেশ রেগেই গেলেন বলে ব্যাটা কি চায়, কথা কইস না....।
লোকের বকবকানী শুনতে শুনতে কানটা যাচ্ছিলো পঁচে। তাই ঘুমের ভান করে পড়ে থাকলাম। এর মাঝে প্রায় বিকেলের দিকে নেমে গেলেন এক স্টেশনে (মনে হয় জয়পুরহাটে)।
নামার সময় বিদায় নিতে কথা বলছিলেন কিন্তু চোখটা আর মেলিনি।
অবশেষে বিকেল চারটে তে নামলাম সৈয়দপুরে। সেখানে তিনচার দিন ছিলাম মনে হয়। বেশ এনজয় করেছিলাম ঐ কটা দিন। শহরটা আমার খুব পছন্দ হয়।
ছিমছাম সাজানো গোছানো।
স্বপ্নপুরী গেলাম, কাজিনদের সাথে রিক্সায় ঘুরলাম, বেশ দৌড়াদৌড়ি করে প্রায় শেষ সময়ে চিড়িয়াখানায় ঢুকে দেখি ৫ মিনিটেই সব দেখা শেষ!
ফেরার পথে শিক-পরটা, ফালুদা খেতে গিয়ে যে ধরাটাই না খেলাম। চরম বাজে ফালুদা ছিলো।
বেশ মজায়ই কাটিয়ে রাতে ট্রেনে ফিরলাম। জার্নিতে আমি সাধারনত ঘুমাতে পারিনা।
প্রায় সারাটা রাস্তা রাতের দুনিয়া দেখেই পার করলাম। ট্রেনের সবাই ঘুমাচ্ছে, বাইরে সুনসান নিরবতা। সব চেয়ে মজা লাগে দেখতে দেখতে যখন সকাল হয়ে যায়।
দেখতে দেখতে ট্রেন এক পর্যায়ে ক্যান্টনমেন্ট এসে পৌছলে জার্নিটাও শেষ হয়ে গেলো।
এভাবেই শেষ হয়ে গেলো আমার জীবনের প্রথম এবং এ পর্যন্ত শেষ ট্রেন জার্নি।
এতক্ষন আজাইরা বকবক শোনার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।