থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।
পর পর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে গেল এক মাসের ভেতরে। রাজনীতির কূটচালে সেই নির্বাচনগুলো পরিণত হয়েছিল অনেকটা জাতীয় রাজনীতির আসরে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও নির্বাচনে দেশের গেল সাড়ে চার বছরের সরকারের কাজের একটা জনমত যাচাই হয়েছে বলা যায়।
নির্বাচনে আম্লিগ জিতে নাই, কেননা তাদের সরকারের পারফরমেনস খুব আশাপ্রদ ছিল না।
২০০৮ সালের শেষে নির্বাচনে আম্লিগ যে ভাবে পরিবর্তনের কথা বলে ভোটারদের আকর্ষণ করেছিল, সেই স্বপ্নকে তারাই নিপুণতার সাথে ভেঙ্গে দিয়েছে অল্পদিনের ভেতরে। আসলে নির্বাচন মানেই তো পরিবর্তন এবং জনগণের স্বপ্ন দেখার নতুন মেয়াদের শুরু।
শেয়ার বাজার দিয়ে সরকারের ব্যাড পারফরমেনসের শুরু। মানতেই হবে প্রযুক্তির অগ্রপতির সাথে সাথে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বাইরে থেকেও শেয়ার মার্কেটের সাথে সংযুক্ত থাকা যায়। ফলে মানুষ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের চরমে থাকলেও শেয়ার বাজারে টুকটাক খেলেছে।
কেউ কেউ লাভ করেছেন, কেউ কেউ হেরেছেন। কিন্তু এই মিডিয়াম সাইজের বাজার স্ফীত হয়ে ধড়াস করে পরার আগে সরকারের অর্থমন্ত্রী বাজার নিয়ে কিন্তু তেমন ভাবিত হন নাই। বাজার নিয়ন্ত্রন যদিও কোন অথরিটি দিয়ে করানো হয়, কিন্তু আমাদের এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় বাজারের উপরে অর্থমন্ত্রীর শ্যেন দৃষ্টি থাকাটা আবশ্যক ছিল, উনি পারেন নাই তা করতে।
যা হোক, বাজার পড়ার পরে সরকার বাজারের কারসাজির পেছনে কারা তা বের করার জন্য একটা তদন্ত কমিটি করলেন। তাতে সুফি সরবেশ গোছের অনেকেরই চেহারা ভেসে উঠল।
কিন্তু সরকার তাদের গায়ে হাত তো তুললেনই না, তাদের সরকারি পাংখা দিয়ে আরো বাতাস করা হল।
সেই সাথে আবুল মন্ত্রীর পদ্মা ব্রিজ খেয়ে ফেলাটা সারা দুনিয়া জুড়ে আলোচনায় আসলেও প্রধানমন্ত্রী উনাকে দেশপ্রেমিক বলে অবিহিত করলেন। প্রমাণিত চোর যদি দেশপ্রেমিক হয়ে যায়, সেই দেশে আসলে বিচার চাওয়াটাই হয়ে যায় একটা তামাশা। ঠিক সেই তামাশা দেখানোয় নামলেন আইনমন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের নামে যা বানানো হল, তা একটা মশকরা বৈ কিছুই ছিল না।
মফস্বলের কয়েকটা ঘষা উকিলকে এনে নিয়োগ দেওয়া হল। তারা কেস সাজাতেও অক্ষম। বিচারকরা বার বার কেস ফাইল ফেরত দিয়েছেন, খোদ আম্লীগের নেতারা অনেক সমালোচনা করেছেন এইসব উকিলদের। তখনই বোঝা যাচ্ছিল এইটা জামাতের সাথে আম্লিগের একটা টম-এন্ড-জেরি খেলা। তারপরেও অসহায় মানুষ ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করেছে যে আম্লিগ ঠিক ঠাক মত বিচারটা করে ইতিহাসের একটা দায় মেটাক।
বিস্তারিত বলা এখন ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটাবে। তবে মনে রাখা দরকার, প্রতিদিন ছিল বিভিন্ন ধরনের সব গোল-পাকানো ঘটনা। সাগর-রুনীকে খুন করে খুনী (কথিত আছে যে সে এটিএন বাঙলার মালিকের ভাই) খোদ সরকার প্রধানের ছত্রছায়ায় দেশ থেকে বেরিয়ে গেল। মামলা সমাধান হবার যে ৪৮ ঘন্টার ঘোষনা ছিল, তা এখনও বজায় আছে মনে হয়। কিন্তু কেউই ধরা পড়ল না।
চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে সরানো হল, মাল মন্ত্রি বললেন, এতো কিছুই না।
খুন খারাবির কথা না বলাই ভাল। বলতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। একই কথা প্রযোজ্য সুশাসন, বাণিজ্য, ব্যবসা, যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, যুব শক্তির প্রতি সরকারের মনোভাব -- কোনটা বাদ দেওয়া যাবে বলুন?
২০০৯ থেকে রাজনীতির মাঠে কোন মতে টিকে থাকা বিম্পির, ইলেকশানে জেতা তো দূরের কথা, অংশগ্রহণ করাটাই যেন অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। তবে বিএনপি নেত্রীকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
উনি সহিংস আন্দোলনের ভেতরে না যেয়ে সামান্য চাপের মুখে রেখেছেন সরকারকে। শেষ মুহুর্তে এসে সিটি করপরেশনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার বিরোধী ভোট পুরাটাই নিজেদের ভোট বাক্সে পুরে নিলেন। এখন সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে আগামী নির্বাচনে কেমন ফল হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের এই মনোভাব এবং ধারাকে আমরা স্বাগত জানাই।
এই মূহুর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিলে আম্লীগের আপাত পরাজয় হলেও শেষ বিচারে আম্লীগ এবং সর্ববিচারে হাসিনাই জিতবে। একটু হিসাব করলেই দেখা যাচ্ছে যে আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে [ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ] নির্বাচন করলেও আম্লিগ হারবে। তাতে দলের ভেতরে এবং সারা দেশেই উনার নের্তৃত্বের প্রতি অনাস্থা জাগবে। দলের ভেতরে ছোটখাটো ক্যু হতে পারে এবং উনি ক্ষমতাবলয় থেকে দূরে ছিটকে পড়তে পারেন। অন্য দিকে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসলেই যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে ফিরিয়ে আনবেন, তা আমি মনে করি না।
তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি ফেরত না আনা হয় কোনভাবে, তা হলে, ইনশাল্লাহ আগামী ২০০১৬ সাল থেকে আম্লিগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে যাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।