আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কবিতা লিখে কবি হয়েছিলেন নন্দিত অথবা নিন্দিত....

বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই , পড়েনি ব্যাকরণ পড়েনি মূল বই ভাতদে হারামজাদা - রফিক আজাদ ভীষণ ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে অনুভূত হতে থাকে- প্রতিপলে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা অনাবৃষ্টি- যেমন চৈত্রের শষ্যক্ষেত্রে- জ্বেলে দ্যায় প্রভুত দাহন- তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ দু’বেলা দু’মুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবী অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর- ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠান্ডা বা গরম সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল হ’লে কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী; অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা চাইনিতোঃ নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক; যে চায় সে নিয়ে যাক- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও জেনে রাখোঃ আমার ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই। যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘ’টে যাবে ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন- সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমেঃ থাকবে না কিছু বাকি- চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে। যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে ধরো পেয়ে যাই- রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে। সর্বপরিবেশগ্রাসী হ’লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে। দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।

জন্মই আমার আজন্ম পাপ - দাউদ হায়দার “জন্মই আমার আজন্ম পাপ, মাতৃজরায়ু থেকে নেমেই জেনেছি আমি সন্ত্রাসের ঝাঁঝালো দিনে বিবর্ণ পত্রের মত হঠাৎ ফুৎকারে উড়ে যাই পালাই পালাই সুদূরে চৌদিকে রৌদ্রের ঝলক বাসের দোতলায় ফুটপাতে রুটির দোকানে দ্রুতগামী নতুন মডেলের চকচকে বনেটে রাত্রির জমকালো আলো ভাংগাচোরা চেহারার হদিস ক্লান্ত নিঃশব্দে আমি হেঁটে যাই পিছনে ঝাঁকড়া চুলওয়ালা যুবক। অষ্টাদশ বর্ষীয়ার নিপুণ ভঙ্গী দম্পতির অলৌকিক হাসি প্রগাঢ় চুম্বন আমি দেখে যাই, হেঁটে যাই, কোথাও সামান্য বাতাসে উড়ে যাওয়া চাল- অর্থাৎ আমার নিবাস। ঘরের স্যাঁতসেতে মেঝেয় চাঁদের আলো এসে খেলা করে আমি তখন সঙ্গমে ব্যর্থ, স্ত্রীর দুঃখ অভিমান কান্না সন্তান সন্তুতি পঙ্গু পেটে জ্বালা, পাজরায় তেল মালিশের বাসন উধাও- আমি কোথা যাই? পান্তায় নুনের অভাব। নিঃসংগতাও দেখেছি আমি, উৎকন্ঠার দিনমান জ্বলজ্বলে বাল্বের মতোন আমার চোখের মতো স্বজনের চোখ- যেন আমুন্ড গ্রাস করবে এই আমাকেই আমিই সমস্ত আহার নষ্ট করেছি নিমেষে। শত্রুর দেখা নেই, অথচ আমারি শত্রু আমি- জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায় কোথায় ডাক্তার কম্পাউন্ডার যারা আমাকে অপারেশন করবে? পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি, কুড়ি টাকায় একসের চাল ও অন্যান্য সামান্য দ্রব্যাদী মিলবে তো? আমার চৌদিকে উৎসুক নয়ন আহ্লাদী হাসি ঘৃণা আমি পাপী এরা কেন জন্ম নেয়? এরাই তো আমাদের সুখের বাধা অভিশাপ।

মরণ এসে নিয়ে যাক, নিয়ে যাক লোকালয়ের কিসের ঠাঁই এই শত্রুর? -বলে প্রাসাদ প্রেমিকেরা আমিও ভাবি তাই, ভাবি নতুন মডেলের চাকায় পিষ্ট হবো আমার জন্যই তোমাদের এত দুঃখ আহা দুঃখ দুঃখরে! আমিই পাপী, বুঝি তাই এ জন্মই আমার আজন্ম পাপ। বাতাসে লাশের গন্ধ - রুদ্র মুহান্মদ শহীদুল্লাহ আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি, ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে… এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ? বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ। এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো। জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর, আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়। এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী, স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ? একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ? জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

বাতাশে লাশের গন্ধ নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান। মাটিতে রক্তের দাগ - চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড় এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা- তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার, নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি ঘুমুতে পারিনা… রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা। স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন - স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।

ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা। আসাদের শার্ট-শামসুর রাহমান গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের জলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়। বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো হৃদয়ের সোনালি তন্তুর সুক্ষ্মতায় বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে। ডালিম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট শহরের প্রধান সড়কে কারখানার চিমনি-চুড়োয় গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে উড়ছে, উড়ছে অবিরাম আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে, চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়। আমাদের দূর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক; আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।

সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে - হুমায়ুন আজাদ আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা। অস্ত্র আর গণতন্ত্র চ’লে গেছে, জনতাও যাবে; চাষার সমস্ত স্বপ্ন আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে একদিন সাধের সমাজতন্ত্রও নষ্টদের অধিকারে যাবে। আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।

কড়কড়ে রৌদ্র আর গোলগাল পূর্ণিমার চাঁদ নদীরে পাগল করা ভাটিয়ালি খড়ের গম্বুজ শ্রাবণের সব বৃষ্টি নষ্টদের অধিকারে যাবে। রবীন্দ্রনাথের সব জ্যোৎস্না আর রবিশংকরের সমস্ত আলাপ হৃদয়স্পন্দন গাথা ঠোঁটের আঙুর ঘাইহরিণীর মাংসের চিৎকার মাঠের রাখাল কাশবন একদিন নষ্টদের অধিকারে যাবে। চলে যাবে সেই সব উপকথাঃ সৌন্দর্য-প্রতিভা-মেধা; এমনকি উন্মাদ ও নির্বোধদের প্রিয় অমরতা নির্বাধ আর উন্মাদদের ভয়ানক কষ্ট দিয়ে অত্যন্ত উল্লাসভরে নষ্টদের অধিকারে যাবে। আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে। সবচে সুন্দর মেয়ে দুইহাতে টেনে সারারাত চুষবে নষ্টের লিঙ্গ; লম্পটের অশ্লীল উরুতে গাঁথা থাকবে অপার্থিব সৌন্দর্যের দেবী।

চ’লে যাবে, কিশোরীরা চ’লে যাবে, আমাদের তীব্র প্রেমিকারা ওষ্ঠ আর আলিঙ্গন ঘৃণা ক’রে চ’লে যাবে, নষ্টদের উপপত্নী হবে। এই সব গ্রন্থ শ্লোক মুদ্রাযন্ত্র শিশির বেহালা ধান রাজনীতি দোয়েলের স্বর গদ্য পদ্য আমার সমস্ত ছাত্রী মার্ক্স-লেনিন, আর বাঙলার বনের মত আমার শ্যামল কন্যা- রাহুগ্রস্থ সভ্যতার অবশিষ্ট সামান্য আলোক আমি জানি তারা সব নষ্টদের অধিকারে যাবে। হুলিয়া - নির্মলেন্দু গুণ আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর, আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ, শোঁ শোঁ করছে হাওয়া। আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;- আমি সবাইকে মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷ কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, একজন রাজনৈতিক নেতা তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন, মুখোমুখি বসে দূর থেকে বারবার চেয়ে দেখলেন-, কিন্তু চিনতে পারলেন না৷ বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি, অথচ কী আশ্চর্য, পুনর্বার চিনি দিতে এসেও রফিজ আমাকে চিনলো না৷ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷ সেই একই ভাঙাপথ, একই কালোমাটির আল ধরে গ্রামে ফেরা, আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷ আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর, আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ, শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া৷ অনেক বদলে গেছে বাড়িটা, টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল, ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল; চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷ পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷ স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল, গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে; যেন সবখানেই সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷ একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়, আমাকে দেখেই পালালো একজন, একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷ হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম, অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক, একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা; অনায়াসে দু’জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷ আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷ সেই বাসন্তী, আহা, সেই বাসন্তী এখন বিহারে, ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷ পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ, শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে – -৷ আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে ডাকলুম,— “মা’৷ বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি, বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না, মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷ বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি, চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে, অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম; সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷ মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন; আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম, দেখলুম দু’ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল, সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস; আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷ মা পুকুর থেকে ফিরছেন, সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে ফিরবেন বাবা, তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷ সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন, পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷ খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন, তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷ রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷ ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর: – আমাদের ভবিষ্যত্ কী? – আইয়ুব খান এখন কোথায়? – শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন? – আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে? আমি কিছুই বলবো না৷ আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷ উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার, আমি চিত্কার করে কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো: ‘আমি এসবের কিছুই জানি না, আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷’ নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় – হেলাল হাফিজ এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় মিছিলের সব হাত কন্ঠ পা এক নয় । সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে, কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।

কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে, কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় । যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান তাই হয়ে যান উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় । এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় বাংলা কবিতায় এই কবিতাগুলো প্রবলভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁর সময়কে , তাঁকে ঘিরে থাকা সমাজকে । কবি হয়ে উঠেছিলেন সমাজ নিয়ন্ত্রক , মৌলবাদী এবং সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবিদের রক্তচক্ষুর শিকার । তবে তাঁরা যা পেয়েছিলেন তা হলো সাধারন মানুষের ভালোবাসা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।