আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই হচ্ছেন "আল্লামা" নামধারী শয়তানের কুকীর্তি যা কিনা স্বয়ং আল্লাহও মাফ করবেন না

চারদিকে এতো জীবিত মানুষ...মাঝে মাঝে লজ্জাই লাগে নিজেকে মৃত দেখলে.. মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। একসময় ভানু সাহা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। সোমবার সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) পড়ার সময় এ তথ্য জানান প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান।

সূচনা বক্তব্যের ১১৮ নম্বর প্যারায় রয়েছে, স্বাধীনতার পর সাঈদী নিজের অপরাধকে আড়াল করার জন্য অস্ত্রসহ যশোরের মো. রওশন আলীর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। অনেকদিন পর তার অপরাধ কাহিনী জানাজানি হলে তিনি পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপন থেকে বের হয়ে আসেন এবং ভুয়া মাওলানা পরিচয়ে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন। এভাবেই তিনি আল্লামা মাওলানার পরিচয়ে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করেন। বক্তব্যের ১১২ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে সাঈদীর নেতৃত্বে একদল রাজাকার পিরোজপুরের হুগলাবুনিয়া গ্রামে হানা দেয়।

রাজাকারদের আগমন দেখে গ্রামের অধিকাংশ হিন্দু নারী পালিয়ে যায়। কিন্তু মুধুসুদন ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী ঘর থেকে বের হতে পারেননি। তখন সাঈদীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তাকে ধর্ষণ করে। এর ফলে স্বাধীনতার পর তিনি একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এ নিয়ে গ্রামে বিভিন্ন কথা উঠায় শেফালী ঘরামী দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন।

প্যারা নম্বর ১১৪-তে রয়েছে, নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বিভিন্নভাবে নির্যতন চালাতো। তাদের বাড়ি-ঘর লুঠ করাসহ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিত। পরে লোকজন সব হারিয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। আর যারা যেতে পারেননি তাদের সাঈদী ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করেন। তাদের নিয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়তেন, তাদের মুসলমান নামও দেন তিনি।

ওপেনিং স্টেটমেন্ট থেকে সৈয়দ রেজাউর রহমান আরও বলেন, ‘সাঈদী আরবি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী এবং বাকপটু। এর কারণে পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এই কারণে তিনি রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হতে সক্ষম হন। ’ ‘তার নেতৃত্বে এবং তার সহযোগিতায় পারেরহাট বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করে। পিরোজপুরেই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় হত্যা করে।

’ ট্রাইব্যুনালের বক্তব্য শেষে সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এটা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার। তিনি মানবতার বিপক্ষে নয়, মানবতার পক্ষে পৃথিবীর অর্ধশত দেশে ভ্রমণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের জন্য কোনও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই। তৎকালীন কর্মকাণ্ডই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইতিহাসও তাই বলে।

এর আগে সোমবার বেলা সাড়ে ১০ টায় ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমসহ দুই বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির এবং একেএম জহির আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের সামনে ওপেনিং স্টেটমেন্ট পড়ে শোনানো হয়। এর আগে সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রোববার ৮৮ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্য পড়েন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। এর আগে রোববার সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়।

একই সাথে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের আগামী ৭ ডিসেম্বর সাক্ষীদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সাঈদীর অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে মোট আট বার পিরোজপুরে গিয়েছি। আর তার বিরুদ্ধে মোট ৭৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ’ গত বছর ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি সময়ে এসে এই প্রথম অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করছে ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় গত বছরের ২৯ জুন সাঈদীকে তার শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর ২ আগস্ট তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই আনা অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। সেদিন সাঈদী দাবি করেছিলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এক যুগেরও বেশি সময় তাকে নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ১৯৮০ সালে তিনি যখন জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে সুরার সদস্য হন তখনই তাকে নিয়ে অভিযোগ ওঠে।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয় সেখানে তিনি ২০ মিনিটের বক্তব্য দিয়ে বলেছিলেন, তিনি রাজাকার নন। সেই ২০ মিনিটের বক্তব্যের একটি কথাও এক্সপাঞ্জ করা হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন একটি রচনা ছাড়া আর কিছুই নয় উল্লেখ করে সাঈদী বলেন, ‘এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন মিথ্যা। এমন মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য আল্লাহর আরশ কাঁপবে। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে যারা এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে, আমি সেই নালত দেখার অপেক্ষায় আছি।

’ সাঈদী আরও বলেন, ‘একাত্তরে আমি কোনো অপরাধ করিনি। কোনো বাহিনীর কমান্ডার তো দূরের কথা, পদেও ছিলাম না। ’ তিনি বলেন, ‘মাবতাবিরোধী নয়, মানবতার পক্ষে আমি বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে বক্তব্য দিয়ে এসেছি। ’ তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের স্বাক্ষী হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের সব কথাই মিথ্যা। কোরআন শরীফে আছে, যারা মিথ্যা বলে তাদের ওপর আল্লাহর লানত পড়বে।

’ ‘মুক্তিযুদ্ধকালে ভানুকে নিয়মিত নির্যাতন করতেন সাঈদী’ স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মা-বোনদের ওপর কি অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল পাকিস্থানি জানোয়ারা তা একবার দেখে নিন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।