আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিলিপুট.........(২)(চলমান)

...............................................................................................................................................................। আনোয়ার এখন পদে পদে টের পাচ্ছে কতখানি গুরত্ব উচ্চতার। মানুষের গাঠনিক কাঠামো কতটা প্রয়োজনীয়। জগতের হিংসাপরায়ন মানুষ গুলো কিভাবে মানুষের দেহকে খেতে শিখেছে। তালগাছের মত ছেলে না হলে মেয়েরা প্রেম কিংবা বিয়ে করতে চায় না।

পাশাপাশি ছেলেগুলোরও ঐ রকম মেয়ে ছাড়া তাদের চলে না। জগত ভাল ভাবেই মানুষের দেহকে বুঝতে শিখেছে ,শিখিয়েছে। তাই এখন আনোয়ার সকাল না হতেই ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় দৌড়ায়। গাছের ডালে ঝুলে। সবাই দেখে দেখে হাসে,তাই লজ্জায় প্রতিদিন ব্যায়াম করতে পারেনা।

মাঝে মাঝে লুকিয়ে করে। একদিন করলে আবার কয়েকদিন করা হয়না। যেকারনে কোন লাভ হছেনা। ব্যয়াম করে শরীর ব্যথা করছে নিজেকে আর টেনে লম্বা করতে পারছেনা,প্রতিদিন ব্যয়াম করার পর মনে হয় সে বুঝি এক ইঞ্চি বেড়েছে। কিন্তু না ব্যয়াম শরীর সুস্থ থাকে ঠিকই,আনোয়ার আর লম্বা হচ্ছেনা।

আনোয়ারকে এখনো প্যডেল চাপ দিয়ে পা উঠিয়ে আবার প্যডেলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অনেক কাত চিত হয়েও ভালোভাবে বড় সাইকেল চালাতে পারেনা। প্রতিদিনের ডিম, দুধ, কলা, তাকে লম্বা হতে সাহায্য করে না। তবে তার এ পরিকল্পনা কিছুটা হলেও কাজে লেগেছে লম্বা না হলেও আনোয়ার আগের থেকে একটু বেড়েছে,ওজন কিংবা শরীর। আনোয়ারদের পরিবারে আর কেউই এমন হয়নি।

এমনকি তার ছোট ভাইটাও আজ তাকে লম্বায় অনেকখানি ছাড়িয়ে গেছে। আনোয়ারের মা বাবা কেউই খাটো নয়। শুধু আনোয়ারই ব্যতিক্রম। হতে পারে কোন হরমোন জনিত সমস্যা। যাই হোক এতে তো কার হাত নেই।

সৃষ্টিকর্তাই তাকে এমন বানিয়েছেন। আনোয়ারের মা বাবা সহ সমস্ত পরিবার তাকে নিয়ে চিন্তিত। তাদের পরিবারে আনোয়ার বেমানান। ইতমধ্যে আনোয়ারের উপর থেকে সবার দৃষ্টিভংগি পাল্টাতে শুরু করেছে। দিনদিন কেমন যেন একটা দুরত্ব বেড়ে চলেছে।

আনোয়ার নিজেও কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। তার এ গঠনের জন্য কে দায়ী?সৃষ্টকর্তা নাকি সে?মানুষ কেন এমন?কিছু বুঝে উঠার আগেই পেছনে হাটা শুরু করে। এতদিন বাইরের মানুষ নিয়ে চিন্তায় থাকত। কারন তারা আনোয়ারকে বেশি ব্যংগ করে,দুরত্ব রেখে চলে। আজ তার পরিবারই সে ধরনের মানসিকতা বহন করছে।

যে জন্য আনোয়ারের মনে আরো বেশি কষ্ট হয়। যাদের চোখের সামনে যাদের লালন পালনে,যাদের সহায়তায় আনোয়ার আজ পর্যন্ত এসেছে,আজ তারাই তাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করেছে ভেবে আনোয়ারের খুব কষ্ট হয়। আনোয়ারের কাছে বাইরের মানুষদের ব্যাঙ্গ এখন কিছুই মনে হচ্ছেনা। কারন তার পরিবার তাদের হার মানিয়ে দিয়েছে। আজ আনোয়ার সমগ্র এলাকা জুড়ে একনামে পরিচিত ‘লিলিপুট আনোয়ার’ নামে।

এলাকায় একজনই লিলিপুট আর সে আনোয়ার। সবাই তার সাথে এমন আচরন করছে যেন তার এ লিলিপুটত্বের জন্য সে নিজেই দায়ী। আনোয়ার ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। বের হলেই সাত বছরের শিশু থেকে শুর করে আশি বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই তাকে লিলিপুট বলে ডাকে। অথচ কোন শিশু কিংবা বৃদ্ধ উচ্চতায় লিলিপুটের সমান আবার কেউবা কম।

আনোয়ার এখন রয়েছে মহা ঝামেলায়,ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রনায়। দিনের শেষে যখন ঘুমোতে যায় আনোয়ার বিছানায় তিন থেকে চার ঘন্টা শুধু এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করে। ঘুম আসেনা। মানুষের যন্ত্রনা তাকে ঘুমের মধ্যেও অতিষ্ঠ করে তোলে। অতিষ্ঠ করে তোলে নিজের ভাবনাও।

তার ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাড়াবে সে বুঝে উঠতে পারছেনা। সে জানেনা তার ভবিষ্যত কি?আদৌ তার সংসার করা হবে কিনা ?মানুষের যন্ত্রনা থেকে আদৌ মুক্তি পাবে কিনা?বিকৃত মস্তিস্কের মানুষগুলো কখনো কি স্বরুপে ফিরে আসবে?মানুষের শারিরিক গঠন বাদ দিয়ে তার চরিত্র,মেধা,………বিচার করবে কিনা?পরিবারের দৃষ্টিভংগির কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও তারা ঠিকই আনোয়ারকে সহযোগিতা করে আসছে। বিশেষ করে আর্থিক দিক থেকে। সে তো পরিবারেরই একজন। আনোয়ার এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চলে গেছে।

সে এখন অনার্সে পড়ুয়া একজন ছাত্র। যৌবনের উত্তাল হাওয়া রীতিমত তার গায়ে দোলা দিয়ে যায়। কিন্তু সে হাওয়ায় শত চেষ্টা আর ইচ্ছা সত্ত্বেও ভাসতে পারেনা। যখন সে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এক দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে থাকে। একজন আরেকজনকে আঙ্গুল দিয়ে আনোয়ারকে নির্দেশ করে আর ফিস ফিস করে বলে ঐ দেখ দেখ আমাদের কলেজে একটা লিলিপুট ভর্তি হয়েছে।

কেউ বলে আরে না!কারো ছোট ভাই হয়ত আবার কেউ বলে আরে না! সত্যিই সে আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েছে,আমি শুনেছি। আর সবাইতো অট্ট হাসি আনোয়ারকে দেখে। আনোয়ার লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মাথা নিচু করে ক্লাসে চলে যায়। চারপাশ থেকে যখন সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তখন লজ্জা পাওয়াটা স্বাভাবিকই বটে।

তবে আনোয়ারের পানে চাহনি যেন অন্যরকম,কোন………………। আনোয়ার ভেবেছিল এখানকার সবাই আগেরদের মত হবেনা। এরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র। সবাই জ্ঞান ভান্ডারে ভরপুর। এরা বড় হয়েছে।

এদের মস্তিস্ক বিকৃত থাকার কথা নয়। কিন্তু দেখলো তার উল্টোটা। এত লজ্জা সত্ত্বেও আনোয়ার পড়ালেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখেনি। তার জীবন সংগ্রামে একান্ত আপনজন হিসেবে সে পড়ালেখাকেই বেছে নিয়েছে। কারো কোন ব্যাংঙ্গ উক্তি আনোয়ারকে পড়ালেখা থেকে বিরত রাখতে পারে নাই।

আনোয়ারের প্রতিটা দিন এখন যেন কেমন কাটে!কিছুই ভালো লাগেনা। তার কোন মেয়ে বন্ধু নেই। কোন মেয়ে তাকে পছন্দ করেনা। নিজেও সাহস পায় না কোন মেয়ের সামনে গিয়ে কথা বলার। বাধা শুধু একটাই তার দৈহিক গঠন।

এদিকে আনোয়ার তার কলেজের এক মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছে। মেয়েটিকে তার খুবই ভালো লেগেছে। তার ইচ্ছা মেয়েটিকে নিয়ে সে সামনে এগুবে। কলেজে গিয়ে তাকে একবার না দেখলে আনয়ারের ভালো লাগেনা। আনোয়ার এখন দ্বিতীয় বর্ষে আর তার পছন্দের মেয়েটি প্রথম বর্ষে।

আনোয়ার ক্লাসের ফাকে কিংবা ক্লাসের আগে যখনই সময় পায় তাকে দেখার জন্য চলে যায়। যৌবনের উত্তাল হাওয়া আনোয়ারকে ভালোভাবেই উড়াচ্ছে। আনোয়ার ঘুমোতে পারেনা,তার দু,চোখে ভেসে আসে মেয়েটি,মেয়েটিই তার ঘুম। আনোয়ার খেতে পারেনা,তার ক্ষুধা যেন মেয়েটির চাহনি। আনোয়ার এখন একাকিত্ব ভালোবাসে।

সময় ফেলেই নদীর ধারে বা রেললাইনে গিয়ে একা বসে থাকে। বলা যায় এই বয়সের একজন যুবকের যেমন চাহিদা বা লক্ষন বা চলাফেরা যাই বলি না কেন সবই এখন আনোয়ারের মনে লক্ষনীয়। সে এখন একজন নবাগত পাগল প্রেমিক। সে ভালোবাসা দিতে চায় পেতে চায়। তার মনের আঙ্গিনায় এখন একজনই খেলা করে।

সে হল সেই মেয়েটি। মেয়েটি তার থেকে উচ্চতায় বেশি,কিন্তু আনোয়ার সেটাকে মুল বিষয় মনে করছেনা। আনোয়ারের মতে ভালোবাসা সংসার জীবন উচ্চতার উপর নির্ভর করে না। নিজের মেধা,চারিত্রিক গুনাবলী-ই হচ্ছে মুল বিষয়। তারপরও আনোয়ার ভয় পাচ্ছে।

কারন মেয়েটি অনেক সুন্দর এবং বাস্তব ও কল্পনায় অনেক ব্যবধান। ভাবা যায় অনেক কিছুই কিন্তু কতখানি সত্য হয়। মেয়েটি এবং তার মধ্য উচ্চতার ও একটা ফারাক রয়েছে। যা অনেকটাই বেমানান এবং আনোয়ারেরও মনে হয় মেয়েটি তাকে আদৌ মেনে নিবে না। বাস্তবতা আর বোধের উপলব্ধি সত্তেও আনোয়ার যেন মেয়েটিকে ভুলতে পারছেনা।

আনোয়ার এখন কি করবে? নিজের পছন্দের কথা বলে ফেলবে?নাকি মনের মুকুরে জমা রাখা ব্যাথা বাড়াবে?বলার পর যদি মেয়েটি তার বান্ধবীদের বলে দেয় তাহলে আনোয়ার হবে হাসির পাত্র। তাছাড়া আনোয়ারের কথা মেয়েটি হয়ত সিরিয়াসলি না ও নিতে পারে। আনোয়ার তার মনের বহু দিনের জমানো কথা অনেক আগ্রহ সহকারে একটু কাপা শরীরে তোতলানো ভাবে বলবে আর মেয়েটি হাসবে,কেমন দেখাবে না!মুহুর্তেই আনোয়ার চরম অপমানের সহিত হাসির পাত্র হিসেবে পরিগনিত হবে!এই ভাবনাও আনোয়ারকে কুড়ে খাচ্ছে। তাই আনোয়ার অনেকতা অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে। কি করবে বুঝতে পারছেনা?আনোয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে তার মনের কথা মেয়েটিকে জানিয়ে দিবে,সাড়া আসুক আর নাই আসুক।

এভাবে কৌতুহল,যন্ত্রনা মনে ধরে রেখে আর চলা যায় না। যা হবার হবে,অন্তত নিজেকে তো হালকা করা যাবে। পুব আকাশে যথারীতি সুর্যের আগমন। ঝলমলে রোদে চমৎকার পরিবেশ। মাঝে মাঝে মন জুড়ানো হিমেল হাওয়া।

বাতাসের কারনে রোদের উজ্জলতা প্রখরতা কিছুটা কম মনে হয়। গতকাল থেকে আনোয়ার খুব উজ্জীবিত। আজ সে তার মনের মানুষকে ভালোবাসার কথা জানাবে। গতরাত তার ঘুমই হয়নি। সারাটা রাত শুধু বিছানার এদিক ওদিক গড়াগড়ি আর পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিল।

কিছুটা ঘুম ভোর পর্যন্ত তাকে ভুলিয়ে রেখেছে। সকাল বুঝি হয়েই গেল?ভোর বেলা উঠে নামাজ পড়েই অপেক্ষা করতে লাগলো,পুব আকাশে সুর্যটাকে একনজর দেখার জন্য। গতকালই দোকান থেকে শার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করে আনা হয়েছে। সকাল বেলা গোসল করে আনোয়ার আজ সুগন্ধি খোঁজ করছে। এর আগে আনোয়ার কোনদিন সুগন্ধি ব্যবহার করেনি।

এমনকি পছন্দও করতো না। অথচ আজ নিজেই ব্যবহার করতে মন চাচ্ছে। সমস্ত শরীর সুগন্ধি দিয়ে গোসল করালো। আগে কখনো ব্যবহার করেনি তাই একটু এলোমেলো হয়ে গেল,কম হয়েছে মনে করে দিতে দিতে সমস্ত শরীর ভাসিয়ে দিল। আনোয়ার এখন সুগন্ধিতে পরিপুর্ন।

তার চারপাশ এমনকি চারপাশের চারপাশ থেকেও সুগন্ধি বের হচ্ছে। একেবারে সমস্ত রাস্তা জুড়ে সুবাতাস বইয়ে দিয়ে আনোয়ার হেটে যাচ্ছে। একটা ফুলহাতা চেকশার্ট আর কালোপ্যন্ট সাথে একজোড়া জুতা। । শার্ট প্যান্টের ভিতর ঢুকানো,আর হাত প্যন্টের পকেটে দিয়ে আনোয়ার হেঁটে চলেছে।

যেন অফিস সাজে অফিসে যাচ্ছে। আনোয়ারকে আজ বেশ দেখাচ্ছে,এমনকি জুতা একটু উচু হওয়ায় আজ তাকে একটু লম্বাও দেখাচ্ছে। আশেপাশের লোকজন তো দেখে অবাক,লিলিপুট এত সেজেগুজে কই যাচ্ছে?পাশের বাড়ির একজন তো পথে বলেই ফেলল ‘কি লিলিপুট এত সাইজ্যা গুইজ্যা কই যাইতাছো ভিতরে ভিতরে কি কাম গডাইতাছো,আমাগরে জানাই ও কিন্তু,আমরা মুরুব্বিরা আছি কিসের লাইগ্যা?’একটু বয়স্ক ধরনের লোক,আনোয়ারের সাথে প্রায়ই মজা করে। আনোয়ার তো চাচার কথা শুইনা সে কি মুচকি হাসি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।