আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিচ্চিবেলায় মোটা হওয়ার জন্য এক ফাইল ভি,পি যোগে কিনেছিলাম.... আর এখন চিকন হওয়ার ফাইল খুঁজছি হন্যে হয়ে

ইচরে পাঁকা শব্দটার মানে বুঝার আগেই আমি যে সেটা হয়ে গিয়েছিলাম সেটা নিশ্চিত। তার একটা সংক্ষিপ্ত নমুনা তাও আবার ভি,পি যোগে মোটা হওয়ার ফাইল কেনা , সেই বয়সে , কল্পনা করা যায়??? এখন সেটা কল্পনাতীত হলেও কাজটা যে করেছিলাম সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু কিভাবে ? ক্লাস সিক্সে পড়ি, শরীর এতটাই হালকা-পাতলা যে মনে হয় মোটামুটি জোরে বাতাস বইলেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে, অবশ্য সেটা আসল ব্যাপার না। যেটা আসল ব্যাপার সেটা হলো বাচ্চা-কাচ্চার সাথে কোন খেলাতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতাম না। স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমে অন্যেরা যখন শেষ প্রান্তে দড়িতে বুক লাগিয়ে কে প্রথম, কে দ্বিতীয় সেটা নিয়ে মারামারিতে ব্যস্ত , আমি তখন ১০০ মিটারের ২০ মিটার পার হয়েই চিৎপটাং, আর ফুটবল খেলায়? ৩০ মিনিটে দুই/একবার বলের কাছাকাছি পা পৌছুলেও সেটা বলের নাগাল পেতো কিনা সন্দেহ , তার আগেই আরেক জনের ধাক্কায় মাটিতে গড়াগড়ি তার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার ছিলো সমবয়সী চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোনদের সামনে মা যখন জামা খুলে কলের পাড়ে গোসল করাতেন সেই সময়টা, বুকের হাড্ডি যে ২০ মিটার দূর থেকেও এক/দুই করে গোনা যেতো..।

লজ্জায় একেবারে মরে যেতাম তো এহেন অবস্থা থেকে কিভাবে রেহাই পাই? বাপে-মায়ে হাজারো রকমের পথ্য আর খাবারে আমাকে স্বাস্থবান করে তুলতে চাইলেও সেটা অরণ্যে রোদন ছাড়া কোন ফল প্রসব করতোনা। সুতরাং সমাধান একটা চাই.. ই.. চাই। বাসায় রেগুলার পেপার রাখা হতো এবং সেটা সেই পিচ্চি কালেই কিভাবে পড়তে হয় বাবার কাছ থেকে শিখে ফেলেছিলাম। যদিও পেপার থেকে বিভিন্ন মানুষজনদের ছবি কেটে রাখাতেই বেশী আগ্রহী ছিলাম। একদিন চোখের কোনে পড়লো "মোটা হউন" বিজ্ঞাপন, তাও আবার এক মাসেই( আরো চটকদার কিছু কথাবার্তা এবং ভিপি যোগে ঘরে বসেই হাতে পাবার অপূর্ব সুযোগ।

যদিও ভি,পি কি সেটা তখন জানতামই না ) , অনেক ভেবে চিন্তে (!!!) অবশেষে পোস্টকার্ডে নাম ঠিকানা লিখে এক ফাইল ভি,পি যোগে পাঠানোর অনুরোধ করে দিলাম ঢাকায় পাঠিয়ে। সেকি উত্তেজনা!!! আর কত লুকোচুরি!!! কেউ যদি জেনে ফেলে সেই ভয়ে স্কুল ছুটির পর প্রতিদিনই পোস্ট অফিসে একবার গিয়ে পোস্টমাষ্টার চাচার কাছে খোঁজ নিই ঢাকা থেকে কিছু এসেছে কিনা। সম্ভবত ১৫/২০ দিন পর একটা প্যাকেট আসলো এবং পোস্ট মাষ্টার চাচা বললেন সেটা তুলতে ৪৫ টাকা দিতে হবে মাথায় হাত , এইবার কি করি ??? টাকা লাগবে সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। চাচাকে পরের দিন প্যাকেট টা নিব বলে বাসায় চলে গেলাম। সারারাত এক ফোটাও ঘুমাতে পারিনি।

সমস্যা দুইটা। এক: এত টাকা কোথায় পাব? দুই: আমি টাকা না দিলে পোস্ট মাস্টার চাচা প্যাকেট টা বাবাকে দিয়ে দিলে আমার বাদরামীটা বাবা জেনে গিয়ে আমাকে মেরে যে বর্তমানের চেয়ে আরেকটু হালকা করে দিবে সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ। আরেকটা দিন চলে গেলো, কাউকে কিছু বলতেও পারছিনা, ভেতরে ভেতরে টেনশনে ফেটে যাচ্ছি। যা হোক সম্ভবত মামা বেড়াতে এসেছিলেন এবং আমার ত্রাণকর্তা হয়েই । রাখে আল্লাহ মারে কে! ৫০ টাকা মামার কাছ থেকে নিয়ে সোজা পোস্ট অফিসে ।

প্যাকেট টা নিলাম, খয়েরী রং এর কাগজের একটা বড় এনভেলাপ ভেতরে কি আছে??? কি সেই ম্যাজিক যা দিয়ে এক মাসেই মোটা হয়ে যেতে পারবো!!! নাহ , খামাটা খুললাল না। বাসায় নিয়ে গেলাম। নিজের পড়ার রুমে ঢুকে খামটা ছিড়লাম, শরীরের প্রতিটি রোমখোপে রক্তের শিহরন , কি সেই জাদুর জিনিস!!! মনটা ভেংগে গেলো ৪৫ টি টাকার জন্য মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। ইস টাকাটা কেন জলে ফেলে দিলাম , কত কিছু কিনতে পারতাম! একটা ৩ সাইজের ফুটবল ! ঝালমুড়ি খেতে পারতাম! লজেন্স কিনতে পারতাম অথবা একটা র‌্যাকেট!!!! প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিলো, টাকাটা এভাবে নষ্ট করার জন্য এবং এরকম একটা বোকামী করার জন্য । এরকম একটা জিনিসের জন্য গত ১৫/২০ টা দিন কি উত্তেজনা আর আশায় বুক বেঁধে ছিলাম.... আমার ছেলেবেলায় সর্বপ্রথম প্রতারিত(?) হলাম, চোখের জলে পাকনামীর মূল্য দিলাম।

আজ ৩০ প্লাস বয়সে আবারো একটা ফাইল খুঁজছি, তবে সেটা মোটা হওয়ার জন্যে নয় , কিভাবে চিকন হওয়া যায় সেই আশায় ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।