অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী পরাজিত হলেও ফিরে আসার আশা ত্যাগ করে নাই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধটা যেমন হঠাৎ করে হয়ে গেল, ২য় বিশ্বযুদ্ধ তেমন ছিল না। বরং এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিনার ফসল! জার্মানী-ইটালি এবং জাপান পরিকল্পিতভাবে তৎকালীন বিশ্ব ব্যাবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই যুদ্ধ বাধায়!
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই যুদ্ধটি সহজ ভাবে বুঝার চেষ্টা করবো আজকে! যথারীতি তথ্যভিত্তিক নয় বরং বিশ্লেষনমুলক আলোচনা করবো। কি কারনে, কোন পরিস্থিতিতে এবং কিভাবে যুদ্ধ লাগে সেটারই একটি নিরপেক্ষ বিশ্লেষন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো!
১ম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নতুন বিশ্বব্যাবস্থা এবং মনে রাখার মত একটি ফ্যাক্ট :
-------১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্য, অটোমান সাম্রাজ্য এবং রাশিয়ান সম্রাটের পতনের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ময়দানে খেলোয়াড় বদল হয়। মানচিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসন্ন হয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আগমনে সবমিলিয়ে নেতৃত্ব উঠে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের হাতে! ওদিকে লেনিনের নেতৃত্বে রাশান রাজনীতিও ভিন্ন পথে চলে যায়।
উইলসন ছিলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, গণতন্ত্র এবং লিবেরালিজমের প্রবক্তা ও বাস্তবায়নের অন্যতম নায়ক।
যুদ্ধপরবর্তীকালীন নেতারা সবাই এই মর্মে একমত হয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুদ্ধ একটা অভিশাপ। সবাই ভবিষ্যতের সম্ভাব্য যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে একমত হয়ে উইলসনের সাথে একমত হয় যে, যেহেতু যুদ্ধের পুরো ক্ষতিটাই বহন করে জনগণ তাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যদিও তাদের কাজকর্ম সেই সময়ের তুলনায় বেশ "ইউটোপিয়ান" ছিল, কিন্তু তারা বেশ কিছু সমস্যার সঠিক কারন খুজে বের করে , গোপন সামরিক চুক্তি এবং গোপন আন্তর্জাতিক রাজনীতি যুদ্ধের সহায়ক ধারনা করে, "ওপেন ডিপ্লোম্যাসি"র প্রচলন শুরু হয়।
সরকারব্যাবস্থায় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সচ্ছতার নিশ্চয়তা করার লক্ষ্যেই জন্ম নেয় "লীগ অব নেশন্স"! সহজ ভাষায় যেটার দায়িত্ব ছিল বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধ প্রতিরোধে একটি "মুরুব্বী" কাউন্সিল হিসেবে কাজ করা! পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক সংস্থা যা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে গঠিত হয়!
আজকের " জাতিসংঘ" এর পুরানো বা ব্যার্থ ভার্সনই হলো এই "লীগ অব নেশন্স"।
এক কথায় বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পুরো আন্তর্জাতিক রাজনীতি উল্টো পথে চলা আরম্ভ করে। রাষ্ট্রগুলো শতাব্দী প্রাচিন "রিয়েলিজম" Click This Link দর্শনকে খারিজ করে বিশ্বব্যাপী " লিবেরাল" দর্শন গ্রহনে পদক্ষেপ নেয়।
জেনেভায় লীগ অব নেশন্সের সদর দপ্তর।
১ম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা যা ২য় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিল :
সহজ ইতিহাসকে সহজ রাখার উদ্দেশ্যে সংক্ষেপে পরবর্তী ঘটনাবলী : সহজ ইতিহাসের ক্ষেত্রে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের চেয়ে যুদ্ধের আগের ঘটনাবলী বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
যুদ্ধে পরাজিত জার্মানীকে ২৬৯ বিলিয়ন "গোল্ড মার্ক" জরিমানা করা হয়ে।
এবং ১৮৭২ এর যুদ্ধে জার্মান দখলকৃত "আলসাক-লরেন" এলাকা ফ্রান্স নিয়ে নেয়! জার্মানীকে অস্ত্রহীন করে ফেলা হয়। এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয়ান সাম্রাজ্যকে একদম খন্ড খন্ড করে ফেলা হয়।
অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য বেদখল করা হয় এবং তুরস্কের নানা অংশ দখল করার লক্ষ্যে ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইটালী-গ্রিস তুর্কী ভুখন্ডে ঢুকে যায় ( যদিও কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক নিজেদের ভুমি রক্ষা করতে সক্ষম হয় )।
সবচেয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে , যুদ্ধ পরবর্তী মূল নেতা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলসনের সাথে! মার্কিন নেতৃত্বে পুরো দুনিয়া বদলে দেবার স্বপ্ন দেখিয়ে ইউরোপ থেকে দেশে ফেরার পর মার্কিন কংগ্রেস উইলসনের সমস্ত প্ল্যান খারিজ করে দেয়, এবং নিজেদের ইউরোপীয়ান ঝামেলা থেকে দুরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়!!!!! ( যেটা শুরুতেই বর্ণিত নতুন বিশ্ব ব্যাবস্থা সফল করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে যায় )
এই অবস্থায়, ১০ বছর পেরিয়ে যায়। তখনো বিশ্ব জুড়ে ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ সাম্রাজ্য ছিল এবং নিদৃষ্ট যোগ্য কোন নেতৃত্ব না থাকায় দেশগুলো নব্য লিবেরাল আইডিয়া ঠিক মত আত্মস্থ করতে ব্যার্থ হওয়ায়, ফলে "লীগ অব নেশন" কার্যত কাজ করতে পারছিল না! এবং রাষ্ট্রগুলো নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করার নীতি এবং সামগ্রিক চিন্তার অভাবে ধীরে ধীরে এটা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে
এই অবস্থায়, বিজয়ী ব্রিটেন বা ফ্রান্স আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে অনাগ্রহী হয়ে নিজ নিজ হিসাব ঠিক রাখায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
ফ্রান্সের লক্ষ্যে ছিল জার্মানীর ভবিষ্যত যুদ্ধ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ নিশ্চিন্হ করে ফেলতে, কিন্তু ব্রিটেন হয়তো "নেপোলিয়ান" যুগের কথা স্বরন করে "ব্যালেন্স অব পাওয়ার" ঠিক রাখার জন্যই জার্মানীর সামরিক উপস্থিতির সমর্থন করে! এবং জার্মানী আবার নিজেদের সামরিক বাহিনী গঠনের অনুমুতি পায়! ( এটা একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, কারন ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানীর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ উন্মুক্ত হয় এর দ্বারাই)
এরই মাঝে বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় "অর্থনৈতিক মহামন্দা" ( বর্তমান সময়ের মতই অবস্থা! ) করুন অর্থনৈতিক পরিবেশে ইটালীতে ফ্যাসিস্ট মুসলিনির আবির্ভাব ঘটে এবং জার্মানীতে নির্বাচিত হয়ে যায় এডলফ হিটলার!!!
অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলায় সব দেশই নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এবং চিরসত্য হলো, সামাজিক-অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খল পরিবেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির চেয়ে স্বৈরাচারী শাষন বেশী কার্যকর। তাই ফ্রান্স-ব্রিটেনের তুলনায় জার্মানী-ইটালী'র অর্থনীতি দ্রুত সংগঠিত হচ্ছিল!
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম পক্ষ, তুর্কী এইবার নিজেদের বেশ কৌশলে যুদ্ধ থেকে দুরে রাখে। যদিও তুর্কি জনগণ জার্মানদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল, কিন্তু তুর্কি সরকার মিত্র বাহিনীর সাথে মিত্রতা রক্ষা করে চলে পুরো সময়জুড়ে!
এবং এশিয়ার শক্তি জাপানও যখন ফ্যাসিস্ট নীতি গ্রহন করে তখন, জার্মানী-ইটালী ও জাপান ৩টি দেশ মিলে সারা বিশ্বে তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ব্যাবস্থা বদলে "জাতিভিত্তিক" নতুন ব্যাবস্থা প্রণোয়নের পরিকল্পনা গ্রহন করে।
এবং সেই লক্ষে কাজ করা শুরু করে দেয় শীঘ্রই!
যুদ্ধের নিরেট ইতিহাস :
পরবর্তী ইতিহাস বেশ সহজ!
ফ্যাসিস্ট ইটালি এবং জার্মানীর সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আংশিক জয়ী জাপানও সামরিক বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পেয়ে ফ্যাসিস্ট রিজিম কায়েম হয়!
এবং এই ৩ দেশ তৎকালীন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। ওদের দাবী ছিল, তৎকালীন ব্যাবস্থা সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন এবং ফ্রান্সেরই সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করছে, অন্যদের ঠকাচ্ছে ঐ ব্যাবস্থা!
প্রথম আগ্রাসী হয় জাপান, ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়া, ১৯৩৭ সালে চীনের মুল ভুখন্ড দখল করে।
ইটালী ১৯৩৫ সালে আবিসিনিয়া এবং ১৯৩৯ আলবানিয়া দখল করে।
এবার এ্যাকশন শুরু করে হিটলার! তারও স্বপ্ন ছিল তৎকালীন বিশ্বব্যাবস্থা বদলে দিয়ে একটি জাতিভিত্তিক ব্যাবস্থা প্রনোয়ন করা। তার মতে তৎকালীন ব্যাবস্থা বদলে জার্মান জাতির সন্মান পুনরুদ্ধার এবং শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়!
১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়াকে জার্মানীর সাথে একীভুত করা হয়। ( যদিও অস্ট্রিয়ানরা বলে হিটলার এমনটা জোর করে করেছিল , কিন্তু আমার মনে হয় ঘটনা ভিন্ন )
১৯৩৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় বসবাসরত জার্মানদের নিরাপত্তার অজুহাতে চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে ফেলে!
ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ততদিনে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হতে শুরু করেছে। কিন্তু জার্মান শক্তির কথা মাথায় রেখে ধৈর্য্য ধরে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিল এবং নাৎসিদের চেক দখল পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু নাৎসীদের পরবর্তী সম্ভাব্য শিকার পোল্যান্ডের উপর নজর রাখছিল! এই অবস্থায় ২৩ আগস্ট ১৯৩৯ সালে দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়ে নাৎসি হিটলারের সাথে রাশিয়ার কম্যুনিস্ট নেতা স্ট্যালিন একটি অনাগ্রাসন চুক্তি সম্পন্ন করে!
রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যাবার পর ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এখন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না চিন্তা করে জার্মানী একসপ্তাহ পরই ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমন করে!
কিন্তু নাৎসীদের অবাক করে দিয়ে, পোলিশদের পাশে দাড়ায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং তারা জার্মানীর বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষনা করে দেয়!
হিটলার দ্রুতই প্রচন্ড শক্তিশালী জার্মান সেনাবাহিনীকে বলকান অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম ইউরোপ অভিমুখে যাত্রা করায়। তারা নরওয়ে, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, হল্যান্ড দখল করে নেয়। ফ্রেঞ্চ-ব্রিটিশ সব প্রতিরোধ উড়ে যায়! ১৯৪০ সালেই জুলাই মাসের মধ্যে প্যারিস পর্যন্ত দখল করে ফেলে নাৎসি জার্মানী! এবং ব্রিটেনের উপর ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়!
এরপরই ঘটে অদ্ভুদ সেই ভুল! কোন এক অজানা কারনে ব্রিটেন সম্পুর্ণ দখল না করেই সদ্য মিত্র রাশিয়া আক্রমন করে বসে! ( একই ভুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে করেছিল করেছিল জার্মান কাইজার দ্বিতীয় উইলহেইম )
এরপর অপেক্ষা করছিল তারচেয়ে বড় ভুল! জাপান পার্ল হার্বারে তখন পর্যন্ত যুদ্ধের বাইরে থাকা মার্কিন ঘাটি আক্রমন করে বসে!
( একই ভুল এর আগে করেছিল জার্মানি মার্কিন জাহাজ ডুবিয়ে)
এবং একই সময়ে জার্মানীও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষনা করে!
জাপানী আক্রমন এবং জার্মান যুদ্ধ ঘোষনার প্রেক্ষিতে একঘরে নীতি বাদ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট ব্রিটেন ও সোভিয়েত বাহিনীর সাথে মিত্রতা করে যুদ্ধে যোগ দেয়!
এরপর আরো ৪ বছর জার্মানী চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়া ফ্রন্টে যুদ্ধ করে যায় এবং কনসান্ট্রেশন ক্যাম্পে ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ হত্যা করে! রাশিয়ায় ব্যাপক সৈন্য হারিয়ে এবং মিত্র বাহিনীর বিমানহামলায় জার্মানীর অভ্যন্তর বিদ্ধস্ত হয়ে ব্যাপক শক্তি হারিয়ে এক পর্যায়ে ১৯৪৫ সালে আত্মসমর্পন করে!
এরপর পরাজয়ের দাড়প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা জাপান সাধ্যমত লড়ে যাচ্ছিল কিন্তু জার্মানীর আত্মসমর্পনের ৩ মাস পর হিরোশিমা ও নাগাসাকির ২ টা এ্যাটম বোমার বিস্ফোরন তাদেরও আত্মসমার্পন তড়ান্বিত করে!
এবং ৫ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষের প্রানের বিনিময়ে ৬ বছরের যুদ্ধ শেষে দুনিয়ার রাজনৈতিক ব্যাবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ পরিবর্তনকামীদের পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়!
বিজয়ের স্বাদ এরাই পেয়েছিল!
শেষ কথা :
২য় বিশ্বযুদ্ধের পেছনে প্রধান কারন ছিল, হিটলারের উচ্চাভিলাষী, আগ্রাসী স্বপ্ন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারন হিসেবে হিটলারের "ইল এ্যাডভাইসড ডিসিশন" কে চিন্হিত করা হয়। এছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের গ্লানি এবং কঠিন চুক্তির হাত থেকে মুক্তি লাভের আকাঙ্খা! এবং তৎকালীন সমাজে ফ্যাসিজমের জনপ্রিয়তা ( মুসোলিনি, হিটলার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত স্বৈরাচার ছিল! )
জার্মানী এমন সুযোগ পায় মূলত তৎকালীন বিশ্বে কোন একক ক্ষমতার উপস্থিতি ছিল না, যে মুরুব্বী রোল প্লে করতে পারবে।
এবং "লীগ অব নেশন্স" গঠিত হলেও রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যমত না থাকায় এর অকার্যকর ভূমিকা শান্তিকামী মানুষদের হতাশ করেছিল!
ভাল অবস্থানে থেকেও "অক্ষ শক্তি"র ( জার্মানী-ইটালী-জাপান) যুদ্ধে পরাজয়ের মূল কারন আমার চোখে, ভুল স্ট্র্যাটেজি! ব্রিটেনের পতন নিশ্চিত করার আগেই রাশিয়ার শক্তিকে খাটো চোখে দেখে কাইজার উইলহেইমের মতই ভুল উপায়ে শীতকালে রাশিয়া আক্রমন করা। এর ফলে , পূর্ব-পশ্চিম উভয় ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হয়! তবে, জাপানের কারনে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে আগমন, ছিল সবচেয়ে বড় ভুল!
এছাড়াও নাৎসীদের চুড়ান্ত বর্বর উপায়ে মানুষ হত্যার একটি এফেক্টও ছিল হয়তো!
পরশিষ্ট : এমন একটি বিজয়ের পর বিশ্ব আর আগের ভুল করে নাই। যুক্তরাষ্ট্র আবার তার খোলশে গিয়ে ঢুকে নাই বরং আগ বাড়িয়ে এসে নেতৃত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। "জাতিসংঘ" প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ব শান্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।
কিন্তু ততদিনে সোভিয়েত রাশিয়াও শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রিয়াল হয়ে গেছে! আর ততদিনে আক্ষরিক অর্থে "গ্লোবাল" দুনিয়ায় কম্যুনিস্ট সোভিয়েত এবং পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নিজ আদর্শ ও স্বার্থ সংরক্ষন এবং প্রসারের লক্ষ্যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই একে অপরের প্রতি সন্দেহবাদী হয়ে উঠে!
তাই তো, বিজয়ীদের মিত্রদের মাঝে সবচেয় শক্তিশালী ২টি রাষ্ট্রের ভেতরেই শুরু হয় স্নায়ু যুদ্ধ / কোল্ড ওয়ার! যা পৃথিবীকে কাঙ্খিত শান্তির স্পর্ষ থেকে দুরে রেখেছিল প্রায় ৪৪ বছর!
আগামীতে স্নায়ু যুদ্ধ / কোল্ড ওয়ার নিয়ে লিখবো!
আসলে ইতিহাস জানানো নয় বরং ইতিহাস বিশ্লেষনের উদ্দেশ্যে লেখা হচ্ছে এই সিরিজ।
যেকোন তথ্যগত বা বিশ্লেষনজনিত ভুল পেলে জানাবেন দয়া করে, অথবা প্রশ্ন থাকলে সেটাও আলোচনার জন্য পেশ করুন। সবাই মিলে মিশে "সহজ ইতিহাস ও সহজ রাজনীতি"র উপর বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা গেলে এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে ?
সহজ ইতিহাস : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ --- Click This Link
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।