আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইন প্রণেতাদের আচরণবিধি ও বাস্তবতা

যে কোন দেশের আইন প্রণয়নের নিমিত্তে একটা আইনসভা থাকে। দেশভেদে ইহা ভিন্ন ভিন্ন নাম ধারণ করলেও ইহার মূখ্য কাজ একটাই দেশের জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন ও নীতি নিধারণ করা। আর এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাখেন সরাসরি ভূমিকা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো। এই আইনপ্রণেতাদের (খধসিধশবৎং) জন্যও কিছু বিধি মালা রয়েছে।

কারণ তারাও আইনের উর্দ্ধে নন। তাদের জন্যও রয়েছে শিষ্টাচার বিধিমালা, কিভাবে তারা আইনসভায় ভূমিকা পালন করবেন কিংবা আইন প্রণয়নের স্বার্থে কি কি আইন মেনে চলবেন? ইত্যাদি। সংসদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যে কোন সচেতন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক কি বিধিমালা রয়েছে তাদের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৬৭ নং বিধিতে উল্লেখ আছে যে, সংসদের বৈঠক চলাকালে কোন সদস্য সংসদে প্রবেশ করার বা সংসদ-কক্ষ ত্যাগ করার সময়, এবং তাহার আসন গ্রহণ বা ত্যাগ করার সময়ে সভাপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিবেন; কোন সদস্য বক্তৃতাকালে তাহাকে উচ্ছৃঙ্খল উক্তি বা গোলমাল সৃষ্টি বা অন্য কোনরূপ বিশৃঙ্খল আচরণ দ্বারা বাধাপ্রদান করিবেন না; সংসদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নহে এমন কোন বই, সংবাদপত্র বা চিঠি-পত্র পাঠ করিবেন না; সভাপতি এবং বক্তৃতারত কোন সদস্যের মধ্যবর্তী স্থান দিয়া চলাচল করিবেন না; স্পীকার কর্তৃক সংসদে ভাষণদানকালে সংসদ-কক্ষ ত্যাগ করিবেন না; সর্বদা সভাপতিকে সম্বোধন করিবেন; স্বীয় আসন হইতে ব্যতিরেকে নীরবতা পালন করিবেন; সংসদে বক্তৃতা ব্যতিরেকে নীরবতা পালন করিবেন; সংসদের কাজে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিবেন না এবং বক্তৃতা চলাকালে কোন প্রকার টিকা-টিপ্পনী কাটিবেন না, শিস দিবেন না; কোন সাধারণ গ্যালারী বা বিশেষ গ্যালারীতে কোন আগন্তুক প্রবেশ করার সময়ে কোনরূপ হর্ষ-ধ্বনি করিবেন না; এবং বক্তৃতাকালে কোন গ্যালারীতে উপবিষ্ট কোন আগন্তুকের উদ্দেশ্যে কোন উক্তি করিবেন না। ২৬৮ নং বিধিতে বলা হয়েছে ঃ কোন সদস্য বলার জন্য দাঁড়াইলে স্পীকার তাহার নাম ডাকিবেন। একই সময়ে একাধিক সদস্য দাঁড়াইলে স্পীকার যাহার নাম ডাকিবেন, তিনিই বলার অধিকারী হইবেন।

যে সদস্য সর্বপ্রথম স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, স্পীকার যথাসম্ভব তাহাকেই বক্তৃতাদানের সুযোগ দিবেন। ২৬৯ নং বিধিতে বলা হয়েছেঃ কোন সদস্য সংসদে কোন বিষয়ে বক্তৃতা করিতে চাহিলে, তিনি তাহার নিজ জায়গা হইতে বলিবেন এবং দাড়াইয়া বলিবেন এবং স্পীকারকে সম্বোধন করিয়া বলিবেনঃ তবে শর্ত থাকে যে, কোন সদস্য অসুস্থতা বা দুর্বলতাহেতু অক্ষম হইলে তাহাকে বসিয়া বলিবার অনুমতি দেওয়া যাইতে পারে। ২৭০ নং বিধিতে বলা হয়েছেঃ বাংলাদেশের যে কোন অংশের কোন আইন-আদালতের বিচারাধীন কোন বিষয়ে উল্লেখ করিবেন না ; সংসদে আলোচনাধীন বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে যতটা একান্ত অপরিহার্য মন্তব্য ব্যতীত কোন সদস্য, মন্ত্রী বা সরকারী পদে অধিষ্ঠিত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোন অভিযোগ করিবেন না ; কোন আলোচনা যথাযথ ভাষায় লিখিত বাস্তব প্রস্তাব-ভিত্তিক না হইলে, রাষ্ট্রপতি বা সুপ্রীম কোর্টের কোন বিচারকের ব্যক্তিগত আচরণ সম্পর্কে কটাক্ষের সমতুল্য কোন মন্তব্য করিবেন না ; রহিত করার প্রস্তাব ব্যতীত সংসদের কোন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কটাক্ষপাত করিবেন না ; সংসদের পরিচালনা বা কার্যপ্রবাহ সম্পর্কে কোন অপ্রীতিকর ভাষা ব্যবহার করিবেন না ; কোন আক্রমনাতœক, কটু বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করিবেন না ; দেশদ্রোহিতামূলক, রাষ্ট্রবিরোধী বা মানহানিকর উক্তি করিবেন না ; ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাহার বক্তৃতাদানের অধিকার প্রয়োগ করিবেন না ; কোন বিতর্ক অসৌজন্যমূলকভাবে কোন সদস্যের উল্লেখ করিবেন না এবং সংসদ-বিগর্হিত কোন কথা বলার অনুমতি তাহাকে দেওয়া হইবে না ; ১৬ (১) নং বিধিতে বলা হয়েছেঃ কোন সদস্য স্পীকারের কর্তৃত্বকে অমান্য করিলে এবং বারবার ও ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদের কাজে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিধিসমূহের অপব্যবহার করিলে স্পীকার তাহার নাম উল্লেখ করিতে পারিবেন এবং ঐ সংসদ সদস্যকে সংসদ হইতে বর্হিষ্কারের জন্য প্রস্তাব করিতে পারিবেন। এই হলো আইনের বা বিধিমালার কথা। কিন্তু বাস্তবতা দেখে যে কোন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক তারা কি আদৌ ইহা সম্পর্কে অবগত? যদি অবগতইবা থাকেন তাহলে এ পরিস্থিতি কেন? কেনইবা স্পীকার ইহাকে আজ মাছের বাজারের সাথে তুলনা করেছেন? এসব প্রশ্ন আসলে বিবেকের, আমরা তাদেও কাছ থেকে ভালো কিছু আশাইবা করবো কিভাবে, যেখানে অধিকাংশই ব্যবসায়ী।

তৈল, নুন, চিনি সিন্ডিকেট দেখবেন তারা না আচরণবিধি পালন করবেন। সে আর যাই হোক জাতি এর থেকে উত্তরণ চাই, বুঝলেন মাননীয়রা? মোঃ তরিক উল্লাহ আইন বিভাগ(৩য় বর্ষ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।