আমি যখন কলেজে পড়ি, গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে বাসে আসা যাওয়া করে ক্লাশ করতাম। একদিন বাসের একটা জানালার ফাটা কাঁচ থেকে কিভাবে যেন ছোট-সুক্ষ একটা কণা হাতের আঙুলে ঢুকে গেলো। কাঁচের কণার ধারালো দিকটা ভেতরের দিকে ছিলো। পাত্তা দেইনি যে কারনেই হোক। কিছুদিনের মধ্যে ক্ষত সেড়ে গেলো।
কিন্তু কাঁচের কণাটুকু ভেতরে রয়ে গেলো আর ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে ঢুকতে লাগলো।
অনেক অনেকদিন পর। ঢাকায় এসেছি। মনে হয় সেকেন্ড ইয়ারে তখন। হঠাৎ একদিন টের পেলাম ডান হাতের পুরোটা ঝিনঝিন করতেছে।
আমার মন বললো, এতদিনে সেই ২-৩ বছর আগের কাঁচ আঙুলের হাড়ে গিয়ে পৌছেছে। হাড়ে আঘাত করার কারনে ঘাড় থেকে আঙুলের ডগা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া। ঠিক ব্যাথা না। একটা অস্বস্তি। ঝিনঝিন অনুভূতি।
আঙুলের সেই ডগাটায় চাপ লাগলে তখন ব্যাথা লাগতো।
মেডিকেল সেন্টার থেকে ডিএমসিতে যেতে বললো। সেখানে এক্সরে দিলো, ঘাড় সহ হাতের। এক্সরে তে কিছু পাওয়া যায়নি । তারপর কিছুদিন ওখানে লেজার লাইট না আরো কি কি যেন আলোর উত্তাপে হাতের ব্যায়াম টাইপ চিকিৎসা দিল।
ঘাড়ে কলার পড়িয়ে দিলো। ১০ দিনের মত গিয়ে বিরক্ত হয়ে গেলাম। যাইনি আর।
পড়াশুনার পার্ট শেষ করে একদিনে ব্যাথাটা নিয়ে উদ্বেগ আরো বেড়েছে। কাচের কণাটুকুর বয়স এতদিনে ৮-৯ বছর হয়ে গেছে।
আমার এখন মনে হয় ঘাড় সহ পুরো হাত ব্যাথা। কব্জি - কণুই - বাহু আর ঘাড় - জয়েন্টগুলোতে তীব্র অস্বস্তি । শুধু আঘাত পাওয়া আঙুলের ডান হাতটায়।
মাসকয়েক আগে আবার ডিএমসির এক ডক্টরের কাছে গিয়েছি । পেনরিফ, একটা ভিটামিন আর ঘুমের ঔষধ দিলো।
২ মাস খেতে হবে। খেলাম। ব্যাথাটা কমেছে বলে মনে হলো কিনতু ২ মাসের পরের সপ্তাহ থেকে আবার আগের মত অবস্থা।
একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, ঘুমের ঔষধ কেন ? তারপর শুনলাম আমার ব্যাথাটার সাথে নাকি মানসিক কোন ব্যাপারে সম্পর্ক আছে। তাই গভীর ঘুম দরকার এটা কমানোর জন্য! মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
তখন শুনলাম, ডাক্তারের ওপর মেজাজ খারাপ করাটা নাকি মানসিক অসুখের ই লক্ষণ । আমি ভাবি আমার হাতে কোন ফরেইন বডি ঢুকে আছে, আসলে নেই - এটা নিছক ই আমার কল্পনা! ওকে, এই লক্ষণটা মিনিমাইজ করতে নিজেকে কন্ট্রোল করলাম। মেজাজ খারাপ করলাম না আর। সিজোফ্রানিয়া রোগীদের গল্পও শোনালো পরিচিত লোকজন। তারপর শুনলাম ওই পরিচিত ডক্টর যে বাসায় থাকেন, সেখানের আরো ৬-৭ জন ডক্টর মিলো মিটিং করে এই ডিসিশনে পৌছেছে যে আমার ভয়ের কোন কারন নেই, এটা আসলেই স্রেফ মানসিক ব্যাপার।
সপ্তাখানেক আগে অফিসের কাজে কুমিল্লা গিয়েছি। সেখানে গিয়ে আরেক ডক্টরের সাথে দেখা। উনার একটা কথা খুব অদ্ভূত লাগলো! ব্যাথা বা ঘা বা ইনফেকশনের সাথে নাকি গ্রাভিটির সম্পর্ক!!!! এটা নিচ থেকে উপরে উঠেনা। উপরে থেকে নিচে নামে! হাতের আঙুল থেকে ব্যাথা ঘাড়ে যেতে পারবে না, ঘাড় থেকে নিচে নামতে পারে!! সো, আমার ভয়ের কারন নেই। এটা মানসিক ব্যাপার ই! ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে ভুলে যেতে পারলে ব্যাথা কমে যাবে !
আমি তো পাত্তা দিচ্ছিনা শুরু থেকেই! আমার তো মনে হয় শুরুতেই কঠিন পাত্তা দিয়ে আঙুলের ওই ডগাসহ কেটে ফেলে দিলে এই যন্ত্রণার মুখে পড়তে হতো না ! "মানসিক" এই রোগেও ভুগতে হতো না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।