যত বড়ই ক্রিকেটভক্ত হোন মাঝরাতে শুরু হওয়া টেস্ট দেখতে 'দেশপ্রেম' লাগে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ খেললেই দেখা যেত। অথবা কোনো ইউরোপিয়ান ফুটবল। তাই বলে রাত জেগে টেস্ট? স্রেফ 'বেসম্ভব'! সাতসকাল থেকে যাও দেখা যেত কিন্তু শহীদ মিনারের দায় উপেক্ষা করতে না পারায় একটা অসাধারণ টেস্টের রোমান্সকর শেষটা সরাসরি দেখতে পারিনি। তারপর থেকে বসে ছিলাম, কখন হাইলাইটস দেখাবে।
শেষমেশ দুধের স্বাদ ঘোলে মিটেছে।
জিততে হলে এই ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ৪৮০ রানের পাহাড় টপকাতে হতো, বিশ্ব রেকর্ড লিখতে হতো নতুন করে। আজকের পঞ্চম দিনের অসমান বাউন্সের উইকেটে করতে হতো ৬ উইকেট নিয়ে ৩৮০ রান। যারা একটু আধটু ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখে, তারা বুঝবে এটা আশি বছরের বুড়োর হিমালয় জয় করার মত একটা বিষয়। সুতরাং সেপথে হেঁটে সব খোয়াতে না বসে যেটুকু করার ছিলো, ইংল্যান্ড সেটুকুই করার চেষ্টা করলো।
তাতে মহাকাব্যিক একটা টেস্টের ট্যাগ লাগিয়ে দিতে পারলো অকল্যান্ডের তৃতীয় টেস্টটার গায়ে।
২০০৯ এর দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষের কেপটাউন টেস্টকে মনে করানো এক ইনিংস খেললেন ইয়ান বেল। ওই টেস্ট বাঁচাতে সময়ের দাবীতে ২৮৬ বলে মাত্র ৭৮ রান করে এক অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেছিলেন পল কলিংহুডকে নিয়ে। কলিংহুড ৪০ রান করতে ওই সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই খেলেছিলেন ২৭৬ টা বল। মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন মরকেলের ভয়ংকর পেস-বাউন্স আর স্টেইনের সুইং এর সামনে।
আজও সময়ের দাবী মেটাতে ইয়ান বেল করলেন ২৭১ বলে ৭৫ রান। কেপটাউনে সাথে পেয়েছিলেন পল কলিংহুডকে। আজ পাশে পেলেন ম্যাট প্রায়রকে, ১১০(১৮২)।
অনেক নাটক হয়েছে আজ। ক্রিকেটে যে ভাগ্যটাও পাশে লাগে তার প্রমানও মিলেছে।
উইকেটে বল লেগেও বেল না পড়ার ঘটনা ঘটেছে ম্যাট প্রায়রের! সহজ ক্যাচ পড়েছে ইয়ান বেল, জনি বেয়ারেস্টোর। আউট দেওয়ার পরেও ডিআরএস নিয়ে বেঁচে গেছে ম্যাট প্রায়র। নিজের সহজাত অ্যাটাকিং খেলা বাদ দিয়ে স্টুয়াট ব্রড খেলেছে ৭৭ বলে মাত্র ৬ রানের 'অতি মূল্যবান' ইনিংস। রানের খাতা খুলতেই ব্রডের লেগেছে ৬২ টা বল!
যখন ম্যাচের মাত্র ৫ ওভার বাকি, ইংল্যান্ডের হাতে ৩ উইকেট অক্ষত, ইংল্যান্ড ড্র করে ফেলেছে, এটা মোটামুটি অবধারিত তখনই টেস্টটাকে মহালের হাতে স্থান দেওয়ার দায়িত্ব বরতালো ম্যাকালামের মাথায়। রেগুলার বোলারদের দিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশ ব্রেন্ডান ম্যাকালাম বল তুলে দিলেন পার্টটাইমার কেন উইলিয়ামসনের হাতে।
টপাটপ ব্রড-অ্যান্ডারসন আউট! শেষ ব্যাটসম্যান মন্টি পানেসারকে নিয়ে উইকেটে ম্যাট প্রায়র। দিকভ্রান্ত দেখালো প্রায়রকে। তিন ওভারের খেলা বাকি তখনও। শেষ উইকেটে পানেসারকে নিয়ে ড্র করার আরেকটা টেস্টের কথা মাথায় ঘুরপাক খেলো আমার। ২০০৯ এর কার্ডিফ টেস্ট।
জনসনের পেস, হিলফেনহাসের ব্যানানা সুইং আর পিটার সিডলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংএর বিপক্ষে পল কলিংহুড খেললেন ৪০ রানের অবিস্মরণীয় একটা ইনিংস। ৪০ রান করতেই লাগালেন ৩৪৪ বল। সে কী যুদ্ধ। পা দিয়ে, শরীর দিয়ে বল ঠেকিয়ে হলেও আউট হবো না টাইপ পণ। সে কী ধনুকভাঙা প্রতিজ্ঞা! কিন্তু শেষমেশ দেখলেন পাশে আছে শুধু পানেসার! একেকটা বল হয় আর কলিংহুড পানেসারকে কী যেন বলে আসেন দৌড়ে ক্রিজের ওপাশে গিয়ে।
আজ হয়তো ততটা করেননি প্রায়র কিন্তু পানেসারের ব্যাটিং রেকর্ড যে সকলের জানা! পানেসার আজও পেরেছেন। দু'বারই ১ উইকেট হাতে রেখেই ড্র করতে পেরেছে ইংল্যান্ডও। পানেসার না পারলে যে টেস্টটা মহাকাব্যিক হতো না। কলিংহুড-ইয়ান বেলের ইনিংস গুলো কেউ মনেই রাখতো না হয়তো। অথচ 'ব্যাটসম্যান' মন্টি পানেসারই দুটো টেস্টকে ইতিহাসের পাতায় লিখে দিলেন একার্থে!
৩ টেস্টের সিরিজ ০-০ তে ড্র।
হ্যা, ১৫ দিন খেলেও এই সিরিজের একটা ফলও আসেনি। নিন্দুকেরা এখন হয়তো অনেক কিছুই বলতে আসবে। তবে 'রিপ টেস্ট ক্রিকেট', 'টেস্ট দেখা মানে স্রেফ সময় নষ্ট' বলে মুখে ফেঁনা ওঠানো তথাকথিত ক্রিড়ানুগীদের জন্য উদাহরন তৈরি করে দিলো কেপটাউন-কার্ডিফ আর অকল্যান্ডের তিনটা 'ড্র' টেস্ট! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।