নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! প্রথমেই দেখে নিন সিঙ্গাপুরের ম্যাপ
ভারত মহাসাগরের কোলে ছোট্ট এ শহর (বা দেশটি)। আয়তন ৬৯৪ বর্গ কিমি। আর সম্প্রসারনের সুযোগ নাই। লোকসংখ্যা যথেস্ট। ৫২ লাখ প্রায়।
সমুদ্র বন্দর ছাড়া আর কিছু নাই। পানি, চাল, আটা, সবজি, কাপড় সবই আনতে হয় মালেয়েশিয়া থেকে।
এবার দেখুন চট্টগ্রাম
ভারত মহাসাগরের উপভাগ বঙ্গোপসাগরের কোলে ছোট্ট এ শহর। আয়তন ১৬৮ বর্গ কিমি। তবে চারপাশে তা সম্প্রসারনের অবারিত সুযোগ রয়েছে।
জনসংখ্যা ৩৮ লাখ প্রায়। সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকায় প্রচুর কৃষি ও খনিজ সম্পদ রয়েছে।
প্রাকৃতিক ভাবে প্রায় সমান একটা পরিস্থিতি ধারন করলেও 'মানুষের' হাতে পড়ে আজ সিঙ্গাপুর ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক। দিন যত যাচ্ছে চট্টগ্রাম ততই গলি ও বস্তির শহরে পরিণত হচ্ছে।
১৯৮৬ সালে এ শহরটিতে আমি প্রথমবার আসি।
১৯৯৪-২০০৩ একটানা ছিলাম। ২০১১ সালে আবার এসেছি। পরিবর্তন হয়েছে একটি জায়গায়। একতলা দোতলা বাড়িগুলো ভেঙ্গে 'এপার্টমেন্ট' হয়ে গেছে। কোথাও ৬তলা কোথাও ১৫তলা! বাদবাকী সবই আগের মত।
আর এ বিল্ডিংগুলোর মালিকরা ১ ইঞ্চি জমিও ছাড় দেননি। নিজেদের মৃতদেহ কিভাবে বাসা থেকে বেরুবে সে চিন্তাও কারো মাথায় আসেনি। আন্দরকিল্লা থেকে প্যারেড মাঠ, এ কে খান থেকে জি ই সি, বড়পোল থেকে বাদামতলী এ তিনটি চওড়া রাস্তা ছাড়া আর কোন চোখে লাগার মত অবকাঠামো উন্নয়ন এ শহরে ২৫ বছরেও হল না!
নামে আন্তর্জাতিক হলেও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাজে ঠনঠন। একটা পেপার ম্যাগাজিনের স্টল পর্যন্ত নাই। টয়লেট পানি শূন্য থাকছে প্রায়ই।
মোটাদাগে একটা ভুতুড়ে বন্দর। যাহোক, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে অপেক্ষারত না থাকলে এখানে নেমেই পড়তে হবে চরম ফাঁপড়ে। ২২ কিলোমিটার দুরের সিটি সেন্টারে যাওয়ার কোন 'সভ্য' ট্রেন, বাস, ক্যাব কিছুই নেই। ভাঙ্গাচোরা প্রাইভেট কারের রেন্ট এ কারের গাড়ীই ১ম ভরসা। এয়ারপোর্ট থেকে আগ্রাবাদ (১৫ কিমি) ১২০০ টাকা!! একদাম!!! সমিতি নির্ধারিত রেট!!! ২য় অপশন সিএনজি নামক মুরগীর খাঁচা।
২০০ থেকে ৫০০ টাকা। তা ও আপনার ভালো লাগল না। তা হলে গাট্টী বোচকা নিয়ে হাঁটা দিন। ১ কিমি হাঁটলে লোকাল বাসের স্টপেজ। পৃথিবীর নিকৃস্টতম বাসসার্ভিস গুলোর একটি এটি।
মাঝারি আকারের এ বাস গুলোই চট্টগ্রামের প্রধান গণপরিবহন। নোংরা, সিটভাংগা, হাঁটু ঢুকেনা, রংচটা, বেপরোয়া গতি, হিরিঞ্চি কিসিমের ড্রাইভার, কন্ডাকটর ও হেলপার, কোন নির্ধারীত স্টপেজ নেই, ভাড়া গাড়ীর ভেতর। কিছুটা সাশ্রয়ী ও বিকল্প না থাকার কারনে এতেই গাদাগাদি। বিকল্প যা যা আছে- রাইডার (বাসের চেয়ে ছোট, টেম্পোর চেয়ে বড়), টেম্পু, সিএনসি টেম্পু, লেগুনা, সি এন জি, রিকশা ও হাঁটা। কালো, সবুজ, হলুদ কোনো ক্যাবই চট্টগ্রামে এখন নাই।
অল্প কয়েকটা আছে নাসিরাবাদ বয়েজ স্কুলের সামনে আড্ডা মারে, কিন্তু কোথাও যেতে বললে যায়না!!!
সিঙ্গাপুরের চেঙ্গী বিমানবন্দর একটি আলাদা দুনিয়া। ১০০ হাত অন্তর মাগনা ইন্টারনেটের কিয়স্ক আছে। বয়স্ক/প্যারালাইজদেরদের জন্য আলাদা টয়লেট। ৫/৬ ঘন্টার ট্রানজিট চোখের পলকে কেটে যাবে। আর টার্মিনালের ভেতর থেকেই এমআরটি (ট্রেন), এসবিএস (বড় বাস)।
শহরের কেন্দ্রে, ধরা যাক নিউটন স্টেশন, যেতে ২.৫ থেকে ৩ ডলার লাগবে মাত্র। ক্যাবে গেলে ১৪-১৫ ডলার।
সেমি পাতাল সম্পূর্ন অটোমেটিক ও নেটওয়ার্কড এ রেলব্যবস্থা শহরটির প্রধান গণমাধ্যম। ভাড়া ২ থেকে ৪ ডলারের মধ্যে। টিকেট ফেরৎ দিলে ১ ডলার ফেরৎ!! ১৫/২০ মিনিটের মধ্যেই যে যার গন্তব্যে।
২য় ব্যবস্থাও খুব সুন্দর। বড় আকারের বাস। ৩য় ক্যাব। প্রচুর এবং যে কোনো গন্তব্যে যে কোন সময়। এর বাইরে প্রাইভেট কার।
এতদ্ভিন্ন অন্য কোন যানবাহন সিঙ্গাপুরের রাস্তায় নেই বললেই চলে। (চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।