ঘাসফুলর গন্ধময় েভারেবলায় েতামােক ছুঁ
ঢাকা: বিশ্বনেতার পত্নীর কোলে উঠে স্বর্গীয় হাসিতে মেতে উঠলো বাঙালি শিশু জাওয়াদ। অথচ পাগল বলে এড়িয়ে চলতো সমাজের মানুষ।
কেউ এ শিশুটির সঙ্গে খুনসুটি বা দুষ্টুমি করেনা। যেমনটি করে থাকে আর ১০টা শিশুর সঙ্গে। কিন্তু সোমবার শিশুটার ভুবনে সূর্যালোকের ছটা।
সমাজের মিথ্যে মানুষগুলোর অনাদর-অবহেলার কালো আবরন ভেদ করে শিশুটির মুখে আজ অফুরন্ত প্রানের হাসি। সে হাসির আভায় হেসে ওঠে চারপাশ।
কার কোলে উঠেছো তুমি?
নিজের নামটাই বলতে পারছে না। সেখানে বান কি মুনের স্ত্রী ‘ইউ বান সুন তায়েক’ নামটা উচ্চারণ করাটা অকল্পনীয়।
সোমবার বিকেলের আলোটা তখন ফিকে হয়ে এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে।
চারপাশ জুড়ে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনি।
মেডিক্যালের অটিস্টিক কেন্দ্রে (সিএনএসি) স্বর্গীয় শব্দ করে পাখির মত কিচির-মিচির করছিল অটিস্টিক শিশুরা।
সুন তায়েক ঢুকলেন। কোথাও না বসে দেখতে লাগলেন কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষ। নানা খেলনা, পুতুল, আঁকাআঁকি, চিত্রকর্ম শোভিত কক্ষগুলো ঘুরতে ঘুরতে খোঁজ খবর নিলেন শিশুদের।
পরিদর্শনের শেষ কক্ষটিতে গিয়ে তিনি থামলেন। বাচ্চারা বসে আছে চেয়ার-টেবিলে। রঙিন টেবিলে বই। রঙতুলি-শ্লেট।
তাদের মাথায় মায়ার পরশ বুলিয়ে দিলেন তায়েক।
তুলতুলে গালে আলতো করে ছুঁয়ে এক শিশুকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? বাচ্চাগুলোর মুখে কোনও কথা নেই। সবাই হাসছে। তায়েক যেন ওদের কতো চেনা। নিজেদের যেন একটু গোছানোর চেষ্টা। কোমল চপলতা।
চোখে-মুখে অপার আনন্দ।
প্রায় আট নয়টি শিশু। সমাজের সঙ্গে আর আট-দশজনের মত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে না ওদের কেউই। মানসিক বুদ্ধিমত্তাও তুলনামূলকভাবে কম।
তাই ওদের বলা হয় অটিস্টিক শিশু।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের একটি কেন্দ্রে তাদের স্কুলিং ও ট্রিটমেন্ট করা হয়।
সমাজে ওদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। মনে তাদের অবর্ণনীয় কষ্ট। মাঝে-মধ্যে বাবা-মারাও বিরক্ত হয়ে পড়েন এই শিশুদের নিয়ে।
আজ তাদের কাছে আসলেন তায়েক।
পরম মমতায় বুকে টেনে নিলেন এই শিশুদের। হৃদয় দিয়ে অনুভব করলেন বাচ্চাগুলোর কষ্ট। শিশুরাও তার হাতে তুলে দিলেন উপহার।
এক পর্যায়ে তায়েক কোলে তুলে নিলেন জাওয়াদকে। একটি হাত উচিয়ে ধরলেন।
যেন আর্শীবাদ করলেন আগামীকে জয় করার। প্রতিবন্ধকতাকে ভুলে জীবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।
`এই বাচ্চারা সুন তায়েককে চিনবে না। কিন্তু তার আদরটা তো বুঝবে। অবশ্যই এ আয়োজন তাদের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে।
মানসিকভাবে তারা শক্তি পাবে। `-- বললেন, মেডিক্যালের সহকারী অধ্যাপক ডা.কানিজ ফাতেমা।
মোহাম্মদপুর থেকে মা আসমা খাতুনের সঙ্গে এসেছে ছোট্ট অম্লান। আসমা জানান, আমার বাচ্চাটা অসুস্থতার কারণে সবসময় আড়ালেই পড়ে থাকে। সমাজে কোনও মূল্য নেই তার।
আজ অনেক ভালো লাগছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের স্ত্রী এসে তাদের আদর করলেন।
ধানমন্ডি থেকে আসা অটিস্টিক শিশু মাহিনের মা সাকিনা বলেন, `মনের ভেতর অনেক দু:খ বাচ্চাটাকে নিয়ে। সবাই আমার এই বাচ্চাটাকে পাগল ডাকে। অবজ্ঞা করে।
আজ আশার আলো দেখছি। `
পরিদর্শন শেষে মেডিক্যালের মিলন হলের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেন সুন তায়েক। তিনি বললেন, `শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরা সমাজে বিভিন্নভাবে অনেক অবদান রাখতে পারে। কিন্তু যথাযথ শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবে তা করা যাচ্ছে না।
`
তিনি এই শিশুদের জন্য কাজ করার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠান শেষ। বাচ্চাগুলো আনন্দে ছোটাছুটি করছিল মিলনায়তন জুড়ে। সঙ্গে থাকা বাবা-মারা স্বপ্নাতুর চোখে তাকিয়ে আছেন। আমাদের সবার কামনা- প্রিয় সন্তানদের এমন মুহুর্ত যেন থাকে সারা জীবন জুড়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।