বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আবার হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসায় চাপের মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার রিজার্ভে ছিল ৯ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন (৯৬০ কোটি) ডলার, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোও সম্ভব নয়।
গত সেপ্টেম্বর মসে আমদানি ব্যয় বাবদ ৩ দশািমক ২৭ বিলিয়ন (৩২৭ কোটি ১৮ লাখ) ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। এই হিসাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে হলে ৯ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা দরকার।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, প্রত্যেকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বলছেন, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) আমদানি বিল পরিশোধের কারণে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা আবার পূরণ হয়ে যাবে।
এর ব্যাখ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে টাইট পলিসি (সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি) নিয়েছে, তাতে আগামীতে আমদানি ব্যয় অবশ্যই কমে আসবে। তখন আর রিজার্ভের ওপর চাপ থাকবে না। "
এই বিবেচনায় এখনকার ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভকে সন্তোষজনক বলেই মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।
অবশ্য গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেস্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "মোট আমদানি ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে জ্বালানি তেল আমদানিতে। খাদ্য আমদানি কমলেও জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েই চলেছে। আর এই বাড়তি অর্থের যোগান দিতে গিয়েই চাপের মুখে পড়েছে রিজার্ভ। "
তিনি বলেন, মূলত বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে কম দামে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুুৎ কেন্দ্রগুলোতে (রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট)
সরবরাহ করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে সরকার।
"এ জন্য প্রচুর বিদেশি মুদ্রা চলে যাচ্ছে", বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) খাদ্য (চাল ও গম) আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ শতাংশ কমেছে। আর এলসি নিস্পত্তির হার কমেছে ৪ শতাংশ।
অথচ গত ২০১০-১১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল ৮৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এলসি নিস্পত্তির পরিমাণ বেড়েছিল ২২৯ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১০৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর নিস্পত্তি বেড়েছে ১০২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ০৬ এবং ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জ্বালানি তেল আমদানির এই ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের ওপর চাপ কোনোভাবেই কমবে না বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতিতে আমদানি ব্যয় কমাতে 'অপ্রয়োজনীয় পণ্য' আমদানি নিরুৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।
কিন্তু তেল আমদানি বাড়তে থাকায় সেসব পদক্ষেপের কোনো ইতিবাচক প্রভাব রিজার্ভে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার গতিবিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় এরপর বেশ কিছুদিন রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরেই থাকে। এমনকি আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পরও গত তিন বছরে চার বার রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১১ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে গত বছরের অক্টোবর মাসে।
ওই বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি বছরের ২৮ ফেব্র"য়ারি রিজার্ভ ছিল ১১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। মার্চ মাস শেষে রিজার্ভ বেড়ে ১১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার হয়, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মজুদ।
কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলারের নিচে নেমে আসে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে (৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু ঈদের ছুটির পর বুধবার আকুর পাওনা বাবদ ৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
অথচ এই সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সর্বশেষ অক্টোবর মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১০৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার।
আগের মাসে (সেপ্টেম্বর) এসেছিল ৮৪ কোটি ডলার।
অন্যদিকে গত অর্থবছরের মতো এবারো আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এর বিপরীতে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় ২২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।