বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার। ধরুন, আপনার আপনি একজন হিন্দু, আপনার বাবাও একজন হিন্দু। একদিন আপনাদের পাড়াতে যে মসজিদ রয়েছে তার ইমাম সাহেবের সাথে আপনার বাবার কোন কারণে বিরোধ বাধলো। ইমাম সাহেব, আপনার বাবাকে "হিন্দু মালাউনের বাচ্চা, শয়তানের দোসর.... ইত্যাদি অকথ্য গালাগালি করল। সংখ্যায় কম হবার কারণে কিংবা ইমাম সাহেব অনেক প্রভাবশালী হবার কারণে, সালিশে সবাই ইমামকেই সমর্থন করল।
তখন, আপনার বাবা কি করবেন? হয় তিনি প্রতিবাদ জানাবেন অথবা লোকেরা যদি বুঝতে অসমর্থ হয় সেক্ষেত্রে তিনি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের নিম্নোক্ত কবিতাটি মনে করবেনঃ
"কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তায়।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে ভর্ৎসনা-ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
“তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নেই দাঁত !”
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়
দংশি কেমন করে !
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা ব’লে কুকুরে কামড়ানো কি রে
মানুষের শোভা পায় ?”
আর অবিশ্বাস্য উত্তর হচ্ছে, তিনি "ইহা ইমামের বাক স্বাধীনতা- এটা তার বলার অধিকার আছে" এই ভেবে নিজেকে শান্ত রেখে মহত্বের (এটা কি আদৌ মহত্ব?) পরিচয় দেবেন। আর সন্তান হিসেবে আপনি তখন কি করবেন, আপনি কি চাইবেন না ইমামের উপর প্রতিশোধ নিতে, কিংবা ইমামের কথার প্রতিবাদ করতে? অবশ্যই সেটা করবেন। না করলে আপনি কিসের সন্তান? আপনি যদি এর প্রতিবাদ না করেন তবে আপনি অযোগ্য, ভিরু, কাপুরুষ।
এবার একটু ধর্মীয় প্রসংগে আসি,
যারা ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্মের অনুসারি, কিংবা নিজ ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়েছেন, তারা জানেন (কিন্তু উপলব্ধি করতে পারেন না) যে, মুহম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি একজন মুসলমানের কাছে নিজ পিতার চেয়েও প্রিয়। তিনি ছিলেন একজন রাসূল (যদিও নাস্তিকদের কাছে কথাটি মূল্যহীন) এবং বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষ- শুধুমাত্র এই মানুষটির গায়ে সামান্য কলঙ্ক যেন লাগতে না পারে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিজেদের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে- এখনও দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে। আপনার কাছে আপনার পিতার অপমান যেমন সহ্য হবেনা, ঠিক তেমনই একজন মুসলমানের কাছে রাসূল (সাঃ) এর অপমানও সহ্য হবে না। তারপরও রাসূল (সাঃ) আমাদের প্রতিশোধ পরায়ণ হতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু সব মানুষ সমানভাবে সহনশীল নয়।
একজন ধির-স্থির মানুষের সামনেও তার পিতাকে যদি অপমান করা হয় তাহলে সেই ধীর-স্থির মানুষটিও প্রতিক্রিয়াশীলের মত আচরণ করতে পারে। যদি বেশি ক্ষেপে যায় তাহলে হয়তো অপমানকারীকে মেরেই বসবে। সাধারণ মুসলমানদের ব্যাপারটাও ঠিক এরকম। তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারা হয়তো রাসুল (সাঃ) এর প্রতি কটূক্তির প্রতিবাদ করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কটূক্তিকারীকে মেরে বসতে পারে।
সুতরাং দেশে শান্তি বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সহনশীল হবার প্রয়োজন।
চাকুরীর সুবাদে চট্টগ্রামের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমার বসবাস। ফলে শাহবাগে আমি মাত্র একদিন যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই শাহবাগের কর্মকান্ডের সাথে নিজের সমর্থন থাকলেও শাহবাগের সৈনিক হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করাটা হয়তো শোভনীয় হবে না। তার পরেও শাহবাগের ছেলেদের সম্পর্কে জামাত-শিবির-বিএনপির লোকজন যেভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তার জন্য আমাদেরদ্বেষ পত্রিকা যেমন দায়ী তেমনই দায়ী শাহবাগের কিছু মানুষ; যারা আবেগতড়িত সাধারণ মানুষদের নিয়ে আহমেদ রাজীব হায়দার বা থাবা-বাবা’র ব্লগস্ফিয়ারের ‘ভূমিকাটুকু’ জানা সত্ত্বেও –তার লাশকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে।
ফলাফল এখন আমজনতা ব্লগারদেরকে নাস্তিক হিসেবে চিনছে।
বাংলা ব্লগস্ফিয়ারে আস্তিক, নাস্তিক, হিন্দু, মুসলমান বিভিন্ন মতের মানুষ লেখালেখি করে। আপনি আপনার ধর্ম প্রচার করতে পারেন, আপনার মতকে ছড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু তা অবশ্যই কাউকে গালি দিয়ে নয়। যদি আপনি তা করেন তবে আপনি নিজেরই মতেরই ক্ষতি করছেন। এবং আপনি পৃথিবীতে আবর্জনার মত।
আর নাস্তিকতার নামে যে কুৎসিত আচরণ কেউ কেউ করেন তা কিন্তু অন্য ব্লগাররা মোটেও করে না। এমনকি এরকম ব্লগও খুব একটা নেই যেখানে ইসলামকে প্রচার করার উদ্দেশ্যে কোন বিখ্যাত হিন্দু চরিত্রকে গালি দেয়া হয়েছে কোন দেবদেবী কিংবা রাম-শ্রীকৃষ্ণকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করা হয়েছে। কিন্তু প্রগতিশীল (!) অনেক নাস্তিকই এই কাজটা করে দাঁত কেলান।
‘বাক স্বাধীনতা’ কথাটি আসলে আপেক্ষিক। মূর্খরা বাক স্বাধীনতাকে শুধু নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বুঝে।
কিন্তু বাক স্বাধীনতা অন্যতম বৈশিষ্ট- পরমতসহিষ্ণুতাকে অনেকেই বুঝে না। এই বিষয়ে আমাদের প্রত্যেকের নজর দেয়া প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে দেশে ব্লগের প্রভাব অনেক বেড়েছে। আমরা সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই ব্লগকে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের সমাজের সকল মতের মানুষের যে সহস্র বছরের শান্তিতে বসবাসের ঐতিহ্য ছিল তা আজ হুমকির সম্মুখিন।
আর এর জন্য ব্লগের কেউ কেউ অনেকাংশে দায়ী। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে ব্লগের আবর্জনা সমূহ দূর করে দেশে শান্তি আনয়নে সচেষ্ট হই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।