http://farm5.staticflickr.com/4084/5106907209_d4c9a50a8b_z.jpg
শাপলা বড়ুয়া
সার্কাস বা যাত্রারই কোন জোকার যেন। সাদা-কালোয় মোড়ানো শরীর। লাল-নীল-হলুদের মিশেলে বিরাটাকার চ্যাটালো ঠোঁট। কখনও কখনও আবার গাল ফুলিয়ে নাটুকে ঢংয়ে চারপাশ দেখে নেওয়ার চেষ্টা। সবকিছু মিলে ঠিক সেই জোকারের ছাঁচেই গড়া যেন এই আটলান্টিক পাফিনরা।
আর সেজন্যই নাকি এদের ডাক নাম ‘ক্লাউন’। তাছাড়া এদের এই আদলের জন্য ‘সামুদ্রিক টিয়া’ বলতেও কসুর করেন না কেউ কেউ। তবে দেখতে এমন হলে কী হবে ভাঁড়ামোর ধারে কাছেই নেই এরা। নিতান্তই গোঁবেচারা পাখি বলা যায় এদের। থাকে উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিকে।
আর জীবনের বেশীরভাগটাই কাটিয়ে দেয় তটভূমি ও সমুদ্রের উত্তাল জলে। তাই এখানে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা। জীবনের ঝুক্কি নিয়ে জলযোগের জন্য সাগরের ২০০ ফুট নীচ নেমে তুলে নিয়ে আসতে হয় ঈল ও ছোট ছোট নানান পদের সামুদ্রিক মাছ। কাজেই এদের শুধু দক্ষ উড়িয়ে হলেই চলে না, হতে হয় পটু সাঁতারুও। এমনকি সমুদ্রকে ঘিরেই চলে ওদের যত ঘরকন্না আর বেঁচে থাকা।
তাই বলে ঘরকন্নার কাজটি কিন্তু তেমন সহজ নয়। সারা জীবনের কথা মাথায় রেখে বেছে নিতে হয় নিজেদের পছন্দের সঙ্গীটিকে। সঙ্গে বাসা বানানোর ঝক্কি তো আছেই। রীতিমতো ঝাড়াই-বাছাই করে খুঁজে পেতে নিতে হয় সেই বাড়ী তৈরির জন্য উঁচু ও খাড়াই টিলা। এজন্য দিতে হয় প্রচুর শ্রমও।
এই যেমন তিন ফুট আন্দাজ দীঘল গর্ত খোঁড়া, মাটির ঢেলাগুলোকে ভেঙ্গে গুঁড়ো করা, একে একে সমুদ্রের পানা, ঘাস ও পালকের যোগারযনত্তর করা এমনতর কত্তো কাজই না পালা করে করতে হয় পাফিন দম্পত্তিদের।
এদিকে শীতের উষরতা পাফিনদের পা ও ঠোঁটে যে ম্যাড়ম্যাড়ে আস্তর লেপে দিয়েছিল তাতে ঝিলিক দেয়া শুরু করেছে আলোর রোশনি। জানান দিচ্ছে বসন্ত আসল বলে। কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি বাড়ি শুরু হয়ে যাবে ডিম পাড়ার তোড়জোড়। সেজন্যই বুঝি এপ্রিল থেকে আগষ্ট পুরো বসন্ত ও গ্রীষ্মের সময়টুকুতে হাজার হাজার পাফিন দম্পত্তিরা জড়ো হওয়া শুরু করেছে আটলান্টিক উপকূলে।
আর তাই এখন থেকেই আদা জল খেয়ে লেগে বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে হবে নতুন তরুন জুটিদের। এরপরই একটানা ৪২ দিনের টানা অপেক্ষার পরে ডিম থেকে গুঁটি গুঁটি পায়ে বেরুবে ফুটফুটে ‘ক্লাউন’ শিশুটি। আবার নতুন করে শঙ্খচিলদের মত চোখালে শিকারীদের চোখে ধুলো দিয়ে একছুটে সমুদ্রের নীচ থেকে নিয়ে আসবে ক্ষুদে মাছগুলোকে। এ যেন অবিরাম লড়াইয়েরই কোন জীবনপাঠ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।