শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... ঈদ কেন একা একই করলাম।
এখন বাজে দুপুর তিনটা। আজ ঈদের দিন। কোন হোটেল খোলা নেই। খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই।
রুমে আছে বেঙ্গলের ফুড এর কিছু ড্রাই কেক। মাঝে মাঝে খেতে ভালই লাগে কিন্তু গতকাল থেকেই এই কেকের উপর দিয়ে যাচ্ছে। রাতে অল্প কিছু খেয়েছি। সকালে আর ইচ্ছে করেনি। শুয়ে আছি, বই পড়ছি।
একটি বই যোগার করেছি, স্টিফেন হিকং এর " এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম"। বইটা ভাল লাগছে। ফাঁকে ফাঁকে ব্লগ গুলোতে নতুন লেখার জন্য রিলোড করছি। ফেসবুকে বার বার স্টেটাস দিচ্ছি। কিন্তু আজতো ঈদের দিন, আনন্দের দিন।
কেন তারা ফেসবুক আর ব্লগ নিয়ে বসে থাকবে? কেউ থাকেনি। আমার মতো যাদের কিছুই করার নেই হয়তো তারাই বসে আছে।
কিন্তু কেন আমাকে পরিবার পরিজন, মা,বাবা, বোন,সবাইকে ফেলে একা একা ঈদ করতে হচ্ছে? কেনইবা খুশির দিনে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে?
ধারনা হতেই পারে।
আপনার কি পরিবারের সাথে ঝগড়া আছে?
আমি বলি না।
এবার কি আপনাদের কুরবানী দিচ্ছেনা?
দিচ্ছে।
বরং আগের চেয়ে বেশি ব্যয় করা হচ্ছে।
তাহলে কি আপনি কাজে খুব ব্যস্ত?
না , পাঁচদিন কোন কাজ নেই শুয়ে বসে কাটিয়েছি।
ঈদে তো বাস,ট্রেনে খুবই ঝামেলা হয়। অগ্রিম টিকেট কাটতে হয়। টিকেট পান নাই বুঝি?
ঢাকার বাইরে থেকে ঈদের সময় ঢাকা যাওয়া কোন সমস্যা না।
হাতে তাহলে টাকা ছিলনা, সময় মতো টাকা আসেনি ?
তাও এসেছে।
তাহলে? কেন বাড়ি যান নাই? আপনার কি মা-বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করেনা?
করে। মাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে,মাকেই শুধু দেখতে ইচ্ছে করে। বাবাকে নয়। যদিও বাবার সাথে আমার কোন ঝগড়া নেই,বাড়িতে গেলে কথা হয়।
অনেক সময় এক সাথে বসেই খাওয়া দাওয়া করি। বাবাও আমাকে খুব মিস করে। আমি পরিবারে একমাত্র ছেলে। এবঙ সবার বড়। আমাকে মিস না করার কোন যৌক্তক কারন নেই।
ঈদের দিন সকালে সবার সাথেই কথা হয়। সবাই আমার পাগলামীটা মেনে নিতে পারলেও একমাত্র মা ই মেনে নিতে পারেন নাই। মা রা মনে হয় এমনই হয়।
কিছু সহজ উত্তর আছে। কিন্তু সহজ কথা গুলো সহজে বলা যায়না।
আমিও পারছিনা। আমি বলে বুঝাতে পারছিনা কিছুই, বুঝতেই কি পারছি সব? পারছিনা। ঈদ উপলক্ষে,মৃত্তুর ঝুকি নিয়ে বাস,ট্রেন,লঞ্চের ছাদে উঠে বাড়ি যায় এক সাথে ঈদ করার জন্য। আর এত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও আমি কেন থেকে গেলাম?
প্রথম বার বাড়ির বাইরে ঈদ করার চিন্তা করি ২০০৫ সালে। আমি তখন কলেজ হোস্টেলে থাকি।
ঈদে সব বন্ধ হয়ে যায়। বড় বড় গেট গুলোত তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তখন বড় ভবন গুলো হয়নি। ৭০ থেকে ৮০ জন থাকতাম। কিন্তু ঈদে কেউ থাকতে রাজি হতোনা।
হিন্দুরা পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে বাড়ি যায়। আমার সিদ্ধান্ত জানালাম হোস্টেল সুপারটেনডেন্টকে। তিনিতো মহা ক্ষেপা। ফাইজলামি পাইছ। ঈদে বাড়ি যাবা না।
এখানে কে তোমাকে রেঁধে খাওয়াবে? আমি সবিনয়ে বললাম। কারো দরকার নেই । আমি একলাই থাকতে পারবো? এবার তিনি আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে বললেন,
তোমার ভয় করবে,একা তোমাকে থাকতে দেয়া যাবনা।
আমি বললাম আমি জ্বীন ভূতে বিশ্বাস করিনা। ভয় পাবো না।
বাড়িতে তোমার কি নিয়ে ঝগড়া হয়েছে? না স্যার কোন ঝগড়া হয়নাই। ইচ্ছে করছে বাড়ির বাইরে ঈদ দেখতে কেমন লাগে।
দাও তোমার বাবার ফোন নাম্বার দাও।
দিলাম। যাও এক ঘন্টা পরে আস।
তিনি ফোন করে কি কথা বললেন জানিনা।
এক ঘন্টা পরে এই ঘটনা হলের সবাই জেনে গেছে। সবাই মিলে আমাকে দেখতে আসছে। আর প্রশ্নের পর প্রশ্ন। আমি হেসে বললাম, একবার করে দেখি না কি হয়।
বাবা নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ির কারো সাথে আমার ঝগড়া হয়নাই। এবার স্যার আমাকে পুরো হোস্টেলের চাবি বুঝিয়ে দিলেন। আরো নানান ব্যপারে সাবধান করে গেলেন। আমি মহা খুশিতে এক বোঝা চাবি নিয়ে রুমে চলে গেলাম।
ঐ ঈদে খুব একটা খাবার কষ্ট করতে হয় নাই।
আমার হোস্টেল সুপারের বাসা খুব কাছেই, ঈদের দিন সকালে স্যারের বাস থেকে ডিসভর্তি খাবার চলে আসে।
সেই ঈদটা ভাল কেটেছে। তার পর অনেক ঈদই বাড়ির বাইরে কাটিয়েছি। তার পর থেকে সকল রোজার ঈদই বাড়ির বাইরে করেছি। কিন্তু কখনো একলা করতে হয়নি।
আমি দেশের যেখানেই থাকি না কেন আমার বন্ধু বান্ধবরা আমার সাথে এসে হাজির হয়েছে, দল বেঁধে ঈদের আগের দিন থেকে আমরা উৎসব করতে শুরো করেছি।
তবে এবারই প্রথম কোরবানীর ঈদ বাড়ির বাইরে করলাম। এবং সারাদিন একলা কাটালাম। অবশ্য একজন বন্ধুর সাথে কাঁটানোর পরিকল্পনা ছিল । সে এই ঈদের মহা ছুটিতে রাঙ্গামাটি,বান্দারবন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
আমি একা হয়ে গেলাম। নোয়াখালী থেকে দুজন আসার কথা ছিল। তারা কেন যেন আর যোগাযোগ করেনি। আমিও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি।
তাবে তারা না এসে ভালই করেছে।
আমার মতো তাদেও ওপোবাস করতে হতো। ঈদের দিন না খেয়ে থাকার চেয়ে আমার উপর কিছুটা ক্ষেপে থাকা খারাপ কিছু না।
আমার বাবার বন্ধু একবার ঈদ নিয়ে আমার উপর মহা ক্ষেপা। তুমি ঈদে বাড়ি আসনা কেন? সবাই আসছে। আমার ছেলেটা চট্টগ্রাম থেকে চলে আসছে।
এই বাড়ি সেই বাড়ি সবাই এসছে। তোমার সমস্যাটা কি?
আঙ্কেল সবাইতো আর ভাল মানুষ হয়না। বাবার সব ছেলেই কি ভাল হয়। দু একটা থাকেনা অবাধ্য।
বেয়াদব আবার মুখে মুখ তর্ক কর।
বেয়াদবের কাজই মুখে মুখে তর্ক করা।
আঙ্কেল রাগে বেড়িয়ে গেল। আমি বসে থাকি ।
সব মানুসই বাধ্য ,ভাল মানুষ হয়না। সেই খারাপ মানুষ গুলো মাঝে আমি একজন।
যে কিনা তার জন্মদাতা মাকে নিয়মিত দেখতে যায়না, স্নেহের বোনের সাথে সময় কাটায় না। বাবাকে পছন্দ করেনা। ঈদের মতো একটি উৎসবে পরিবারের সাথে থাকেনা।
https://chourongi.wordpress.com/ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।