***************১***************
জানি না সব সত্যি ছিল নাকি বৃষ্টিতে ভেজার পর তীব্র জ্বরের ঘোর । সত্যিই হবে হয়ত । কারন,তুমিই বলেছিলে-‘বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসা তো দূরে থাক ঠান্ডাও লাগেনা । বিশ্বাস না হয় ইন্টারনেট দেখ । ‘
নাহ ।
আমি গুগল করিনি,জিজ্ঞেস করিনি আমার ডাক্তার কাজিনকেও। আমি জানি,তুমি যেমন তোমার কথাগুলোও তেমন,সত্য,সুন্দর।
দুরে থাকতে আমি ভয় পাইনি কখনও,দেখাইনি কাছে আসার চেষ্টা করবার স্পর্ধাও। তোমাকে আমি ভালবাসতে পারি যেকোন দুরত্ব থেকেই ।
কিচ্ছু চাই না ।
শুধু একটা ছোট্ট আবদার আছে,শুনবে? মরে গেলে শুধু একবার এসো । না ,না । গাল ছুঁয়ে দেখতে হবে না । আমার হালকা শরীরটা বনানী কিংবা আজিমপুর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেতেও দরকার হবেনা তোমার কাঁধের । একবার,শুধু একবার আমার খাটিয়াটা ধরে গলা ছেড়ে কেঁদো,প্লিজ ।
যেতে যেতে আমি শুধু একবার দেখতে চাই,কাঁদলে তোমাকে কত্তো সুন্দর লাগে । কী,কাঁদবে না?
******************২***************
পুতুলের ছবি আঁকা ডায়রীটায় মুক্তোর মতো ঝকঝকে হাতের লেখাগুলোতে পরম মমতায় হাত বুলোতে লাগলেন শাহানা চৌধুরী,লেখার নিচের তারিখটায় চোখ আটকে গেল । ্মাত্র তিনদিন আগে লেখা!’তবে কি আগেই কিছু বুঝতে পেরেছিলি সোনামণি?’
ড্রইংরুমের কার্পেটটা দিবাই পছন্দ করে কিনেছিল গত জন্মদিনে। ওটার উপরেই এখন শুয়ে আছে সে । ইশ,কী সুন্দর মুখ,এখনই যেন বলে উঠবে-‘আমি চোখ খুলতে পারছি না।
আপু,ফেসিয়াল লোশন আমার চোখে চলে গেছে,পানি দেন,পানি,পানি । ‘
এসিডে মুখ থেকে গলা অব্দি পোড়া শেফালী বিলাপ করে কাঁদছে –আপা,আপা গো,ওঠেন গো আপা,আমাদের তো কেউ থাকল না আর। সীমা,শানু,মিনারাদের কান্নাও বাধ মানছে না আজ । নানীর সাথে আসা ছোট্ট মিরাজ কিছুই বুঝছে না । ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শুধু ।
দিবার মুখটার দিকে তাকিয়ে চোখ মোছেন মিরাজের নানীও । বাবাহারা মিরাজের মাকেও যখন গতবছরের এক সন্ধ্যায় বস্তির কানাগলিতে পাওয়া গেল প্রানহীন,যোনী ক্ষতবিক্ষত অবস্থায়,তখন এই মেয়েটাই ছুঁটে এসেছিল তার বাড়ি । বলেছিল-‘ভাববেন না খালাম্মা,ওই হারামীদের আমি ফাঁসীতে ঝুলিয়েই ছাড়ব ইনশা আল্লাহ । আর মিরাজ কলেজে ওঠা পর্যন্ত ওর যাবতীয় খরচ আমার । হায়রে মিরাজ,কে এখন তোকে খেলনা কিনে দেবে মাসে মাসে?
দিবার বান্ধবী শায়লা যেন দুঃস্বপ্ন দেখছে কোন।
কী হয়ে গেল এসব?এই গতরাতেই তো দিবা ওকে বাসায় ডেকে এনেছিল আগামী সপ্তাহে ‘ইয়াং নাইটস’ অনুষ্ঠানে পরে যাবার জন্য একটা এক্সক্লুসিভ সালোয়ার-কামিজ ডিজাইন করে দিতে । এই তো,শায়লার আঁকা স্কেচগুলো এখনও পড়ে আছে দিবার ঘরে ।
দিবার ‘কন্যাসোহাগী বাপকে’(এই উপাধিটাও দিবারই দেয়া। ) কেউ সামলাতে না পারায় শেষমেশ ডাক্তার এসে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেছেন পেথিড্রিন দিয়ে । অনেকক্ষন বাদে শাহানা এসে একটু বসলেন মেয়ের পাশে ।
আহ!এই তো সেই মুখ,যেটি তার জীবনে এনে দিয়েছিল পরিপূর্ণতার আনন্দ । কপালে হাত ছোঁয়াতেই চমকে উঠলেন শাহানা। ইশ!বরফের মত ঠান্ডা ।
‘বুবু,বিদায় দে এইবার । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কবর দিয়ে দেওয়া ভাল ,বেশিক্ষন রাখা ঠিক না।
‘বোনের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বললেন দিবার ছোট মামা । । হ্যাঁ তাই তো । এই কান্নাকাটি,চেঁচামেচির মধ্যে মেয়ে শান্তিতে ঘুমোবে কী করে?তাড়াতাড়ি সব শেষ করে ফেলাই ভাল । কিন্ত ওর শেষ ইচ্ছে?জেনেশুনে কিভাবে তা অপূর্ণ রেখে দেবেন শাহানা?
-‘থাক না আরও কিছুক্ষন।
যদি কেউ আসে?’
-‘আর কে আসার বাকি আছে?’ বিরক্তি ঝরে পড়ে দিবার বড়ফুপুর কন্ঠ থেকে ।
নামীদামী এক ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক বিরক্ত হয়ে ক্যামেরার কাঁচ মুছছেন । ধুর,আর কত দেরী করবে এরা?তার পত্রিকাতেই উঠবে দিবার শেষ ছবি । মনে মনে একটা ক্যাপশনও ঠিক করে রেখেছেন-‘দ্য ফাইনাল জার্নি । ‘
সকাল গড়িয়ে দুপুর,দুপুর গড়িয়ে বিকেল ।
লিভিংরুম থেকে ক্রমাগত ভেসে আসছে কোরানপাঠের সুর । ‘এবার মায়া ছাড়ো বউ মা। মরতে তো একদিন হবেই । আর দেরি কইর না, মা। ওর আত্না কষ্ট পাইব ।
‘ কান্নাজড়ানো কন্ঠে ছেলের বউয়ের কাছে মিনতি করে ওঠেন দিবার বৃদ্ধা দাদী । হঠাৎই বেজে ওঠে বাসার কলিংবেলটা । পাগলের মত ছুটে যান শাহানা দরজার দিকে । অবশেষে সে কি এলো?নবপরিনীতা স্ত্রীর সাথে উষ্ণ হানিমুনের মায়া ত্যাগ করে সে কি সত্যিই ছুঁটে এল দিবার শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে?নিজের দুঃখী মুখটা একবার দেখিয়ে ওকে বিদায় জানাতে?সত্যিই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।