আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশ পরিচিতি: মালয়েশিয়া

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা বর্তমান মালয়েশিয়া অঞ্চলে উপনিবেশ এবং আশ্রিত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। একে ব্রিটিশ মালয় বলা হতো। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপান ধীরে ধীরে মালয়েশিয়া দখল করতে থাকে। ১৯৪৮ সালে মালয় উপদ্বীপে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলসমূহের সমন্বয়ে মালয় ফেডারেশন গঠিত হয় যা ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। সিঙ্গাপুরের ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং পূর্ব মালয়েশিয়ান রাজ্য ১৯৬৩ সালে ফেডারেশনে যুক্ত হয়, আর তখনই মালয়েশিয়া স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ভৌগলিক অবস্থা :দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত তেরটি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবিশিষ্ট দেশ মালয়েশিয়া। চীন সাগরের দক্ষিণে অবস্থানরত মালয়েশিয়ার সাথে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই এবং ফিলিপাইনের সীমান্ত রয়েছে। মালয়েশিয়া দুটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত; একটি মালয়েশিয়া উপদ্বীপ, অপরটি বর্নিও মালয়েশিয়া। এই দুটি প্রধান অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা বিভক্ত। দুটি অংশই আয়তনের দিক থেকে প্রায় সমান।

দেশটি সমুদ্র উপকূলীয় সমতল ভূমি থেকে গভীর ঘন অরণ্যবিশিষ্ট পর্বতমালায় সজ্জিত। এর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ বর্নিও দ্বীপে অবস্থিত কিনাবালু যার উচ্চতা ৪,০৯৫.২ মিটার। দেশটি বিষুবরেখার নিকটবর্তী হওয়ায় এর জলবায়ু গ্রীষ্মপ্রধান। শীতকালে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এবং গ্রীষ্মকালে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় এবং বর্ষাকাল পর্যন্ত থাকে। জহর রাজ্যে অবস্থিত তানযুং পিয়াই এশিয়া মহাদেশের সর্বদক্ষিণ প্রান্ত।

উপদ্বীপ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার মাঝে অবস্থিত মালাক্কা প্রণালি বিশ্বের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ। রাজধানী শহর কুয়ালালামপুরে ব্যস্ততা হ্রাসের জন্য পুত্রজায়াকে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংসদ ভবন, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বেশির ভাগই কুয়ালালামপুরে অবস্থিত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে রয়েছে—জর্জ টাউন, ইপো, জহর বারু, কুচিং, কোতা কিনাবালু মিরি, মালাক্কা ইত্যাদি। প্রাকৃতিক সম্পদ :প্রাকৃতিক সম্পদে মালয়েশিয়া ব্যাপক সমৃদ্ধশালী; বিশেষ করে কৃষি, বন এবং খনিজ সম্পদে।

কৃষিক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বের বৃহত্ প্রাকৃতিক রাবার ও পাম ওয়েল রপ্তানিকারক দেশসমূহের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। কোকো পাউডার, মরিচ, আনারস এবং তামাক কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাম ওয়েলের ভূমিকা অপরিসীম। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বন সম্পদ দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানেও প্রায় ঊনষাট (৫৯) শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল।

জনসম্পদ :মালয়েশিয়া বহু বর্ণগোষ্ঠীর আবাসস্থল। সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫০.৪%) মালয় এবং এরা অন্যান্যদের তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সাবাহ এবং সারওয়াক রাজ্যের ভূমিপুত্র (Son of the Soil) বা মালয়েশীয় আদিবাসীরা জনসংখ্যার মোট ১১ শতাংশ। মূলত যারা মালয় সংস্কৃতি এবং প্রথা পালন করে তারা মুসলিম। সংবিধান অনুযায়ী যে কোনো সম্প্রদায়ের মুসলিম জনগোষ্ঠী মালয় হিসাবে পরিগণিত এবং তারা মালয়দের সমান সুবিধা ভোগ করে।

২৩.৭ শতাংশ জনগণ চীনা বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান। অন্যদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান রয়েছে ৭.১%। অন্যান্যদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া, ইউরোপ, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের জনগণ ৭.৮ শতাংশ। মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২,৭৭,৩০,০০০ এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি জনগণ মালয় উপদ্বীপে বসবাস করে আর বাকিরা কম বসতিপূর্ণ পূর্ব মালয়েশিয়ায়। সম্প্রতি বিশ্ব মন্দার প্রভাব মালয়েশিয়াকেও প্রভাবিত করার কারণে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং হচ্ছে।

বহু নৃ-গোষ্ঠীর আবাসস্থল হওয়ায় মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সরকার ও রাজনীতি :মালয়েশিয়া একটি কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্রবিশিষ্ট দেশ। দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানকে ‘ইয়াং দি পেরতুয়ান আগং’ বলা হয়; যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে অর্থ হয় ‘যিনি প্রভু হয়েছেন’ অর্থাত্ সর্বোচ্চ শাসক। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার দেশটির দীর্ঘ মেয়াদি (১৯৮১-২০০৩) প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ-এর নেতৃত্বে মালয়েশিয়া বর্তমান বিশ্বের একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে এক নজরে রাজধানী এবং সর্ববৃহত্ শহর : কুয়ালালামপুর দাপ্তরিক ভাষা : মালয় সরকার ব্যবস্থা : কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং সংসদীয় গণতন্ত্র রাজা : মিজান যাইনুল আবেদিন প্রধানমন্ত্রী : নাজিব তুন রাজ্জাক আয়তন : ৩,২৯,৮৪৭ বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যা : ২,৭৭,৩০,০০০ জনসংখ্যার ঘনত্ব : প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৪ জন জিডিপি : ৩৮৮.৩১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০০৮) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার : ৫.৫% মুদ্রা : মালয়েশিয়ান রিঙ্গিট জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার : ১.৭২৩% জন্মহার : প্রতি হাজারে ২২.৪৪ জন মৃত্যুহার : প্রতি হাজারে ৫.০২ জন গড় আয়ু : ৭৩.২৯ বছর সাক্ষরতার হার : ৮৮.৭% ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।