গল্প ফোন (প্রথম পর্ব)
ফোন (দ্বিতীয় পর্ব)
ফোন (তৃতীয় পর্ব)
মতিন: কি করছিস?
সুমন: ভাবছি চুমকি ও জেরিনের কথা।
মতিন: ভাবনা-চিন্তা বাদ দে।
সুমন: বাদ দিতে পারছি না। ভাবছি চুমকিকে বলে দিব আমার ভুল হয়েছে। জেরিনকে ভাললাগে বলে তার কথায় রাজি হয়নি।
আর যদি সে প্রথম বার ভাললাগার ভাব দেখাত তবে রাজি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারন তখন কেউ ছিল না। তুই তো জানিস- জেরিন আমার সব কিছু বুঝে এবং আমার জন্য অনেক কিছু করে। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালবাসা সম্ভব না। সুন্দরী বা প্রচুর অর্থের মালিক হলেও তার মত কেউ হতে পারে না।
সে আমার জগৎ আলোকিত করেছে। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। আমাকে অনেক বিষয়ে সাহায্য করেছে এবং এখনও করছে।
মতিন: তবে ভালবাসি কথাটা বলে না কেন?
সুমন: আমি বুঝতে পারছিনা। এত কিছু বুঝতে পারে।
কিন্তু সহজ কথাটা কেন বুঝতে পারে না। তুই যা ই বলিস চুমকির সাথে দেখা করব।
মতিন: তুই দেখি সত্যিই পাগল হয়েছিস। চুমকির সাথে তোর দেখা করা বা কথা বলা ঠিক হবেনা। যদি সে আবার তোর কাছে আসতে চায়।
এমনি অনেক কষ্ট করে বাবা-মা বিয়ে দিতে রাজি করিয়েছে। তুই যদি আবার কথা বলতে চাস গোলমাল লেগে যেতে পারে।
সুমন: তবে কি করতে পারি?
মতিন: কিছু করার দরকার নাই। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। যা হয়েছে তা ভালর জন্যই হয়েছে।
পিছনের সব কিছু বাদ দে। পিছনের কথা টেনে কোন লাভ নেই। পিছনের দিকে তাকালে কাজের ঝটের মধ্যে পড়বি। সামনের দিকে তাকানোর সময় পাবি না। মনে করবি প্রত্যেকটি সময়ের মূল্য অনেক বেশি।
যা করতে পারিসনি তা বাদ দে। সময়ের কাজ সময়ে কর। যা হয় তা ভালর জন্য হয় ভেবে সামনের দিকে এগিয়ে যা। দেখবে সব কিছুর সমাধান হয়েছে। আর যদি এভাবে থাকিস ভবিষ্যতে নিশ্চিত বিপদ আছে।
সুমন: চুমকি, জেরিন বা নিপা কারও দারকার নেই। একলা চলব।
মতিন: একলা চলা যায় না। তোকে বলছি এখন যা করার তা করতে।
সুমন: আমি তাই করছি।
তোর কল করার জন্য পড়তে পারছি না। মোবাইল রাখ পরে কথা হবে।
মতিন: ভাল থাকিস। বাই।
সুমন: বাই।
মোবাইল রেখে দেওয়ার পর আবার ভাবতে শুরু করে। আমি কি ভুল করছি? না। ভুল করিনি। চুমকির সাথে প্রেম হলে এত দূর আসতে পারতাম না। চুমকির বয়স আর আমার বয়সের মধ্যে পার্থক্য মাত্র এক বছরের।
তার সাথে প্রেম করলে এত দিনে বিয়ে করতে হত। কাস করার বদলে শ্বশুর বাড়িতে আপ ডাউন করতে হত। আর বিয়ে না করলে দেখা করার ঝামেলায় অস্থির হতে হত। কারন পুরো দুইটা জেলা পার হয়ে তাদের বাড়ি। বাসের সংখ্যা কম।
সময় নিয়ে ট্রেন ধরতে হয়। রিক্সা করে শেষ রাস্তাটুকু যেতে হয়। প্রেম ভালবাসায় সময় এর হিসাব করে চলে না। এত দিনে কি অবস্থা হত এক মাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। যা হয়নি তা ভালর জন্যই হয়নি।
চুমকির সাথে প্রেম হয়ে যেত যদি প্রথম দুই বছরের মধ্যে ভাললাগার কথা বলত। কারন ভালবাসার টান তখন সামান্য হলেও হৃদয়ে ছিল। এখনও মনে পড়ে সে যখন পাশে এসে বসছিল- তার হাত-মুখ কেমন ছিল। অথচ আত্মীয় থাকায় প্রেম ভালবাসার অনুভুতি জাগেনি। জেরিনকে দেখেও প্রেম ভালবাসার অনুভুতি জাগেনি।
কিন্তু তাকে দেখলে কেন ভাল লাগে? তখন সেই উত্তর জানতাম না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভাল লাগার মাত্রা বাড়তে থাকে। তার কাছে গেলে ভাল লাগে। তার দলে খেলতে না পারলে কষ্ট লাগে। প্রতিদিন দেখতে না পারলেও অন্তত সপ্তাহে এক দিন না দেখলে অনেক কষ্ট হত।
এমন ভাল লাগা থেকে বুঝতে পারি তাকে আমার খুবই প্রয়োজন। সে আমার প্রয়োজন এবং চাওয়া বুঝতে পারে। সহানুভুতির দিক থেকেও যথেষ্ট বুঝে। তাকে ছেড়ে চুমকির সাথে প্রেম করা সম্ভব ছিল না। তার এবং চুমকির মাঝে একটি বিষয়ে বিরাট পাথক্য হল- সে চাওয়ার েেত্র যথেষ্ট সংযম এবং চুমকি সব কিছু মুহূর্তের মধ্যে চায়।
বুঝিনা চুমকি আর জেরিনের মধ্যে ভালবাসার পার্থক্য। অবশ্য চুমকির অধ্যায় শেষ। যে আছে তাকেই চাই।
না, আর ভাবলে চলবেনা। মাথাটা বিষন ঘুরাচ্ছে।
টেবিলের উপর থেকে বইটা নিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। আমার ল্েয পৌছতে হবে। যে কোন প্রকারে হোক। বই নিয়ে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে যায় টের পায় নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।