বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই , পড়েনি ব্যাকরণ পড়েনি মূল বই
পথের পাঁচালী ১৯৫৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। ছবিটির প্রযোজক পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং পরিচালক সত্যজিৎ রায়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস পথের পাঁচালী অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র তথা তাঁর প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র-সিরিজ অপু ত্রয়ী-র প্রথম ছবি। ছবির মুখ্য চরিত্র অপু। বিশ শতকের বিশের দশকে বাংলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অপুর বেড়ে ওঠার গল্পই এই ছবির প্রধান বিষয় ।
এই সিনেমাটি বারবার দেখেও কখোনো বিরক্তি আসেনি ।
এমন সিনেমা বছরে না হোক পাঁচ বছর পরপর তো আমাদের পরিচালকরা বানাতে পারেন নাকি আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে ? কতদিন ? এর প্রেরণায় সমমানের আরো অনেক চলচ্চিত্র তৈরি হতে পরতো। তৈরি হতে পারতো সত্যজিতের মতো আরো অনেক তরুণ চলচ্চিত্রকার। তবু কেন হলো না? সিনেমা একটা খরচান্ত শিল্প বলে? ভালো ফিল্মের দশর্ক নেই বলে? দুটো সমস্যাই পথের পাঁচালীর ক্ষেত্রেও ছিলো। তবু সে মুক্তি পেয়েছিলো, ৫৫ বছর আগে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাইরে…
অথচ এত দীর্ঘ সময়েও বোদ্ধা দর্শকের কাছে এর আবেদন ক্ষয়ে যায়নি এতটুকু।
কি অসাধারণ ধ্রুপদী গুণ থাকলে একটি চলচ্চিত্র সময়কে জয় করতে পারে!
কিন্ত তেমন আর একটাও কেন হলো না? আজ থেকে ৫৫ বছর আগে পথের পাঁচালীর মত এমন শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র তৈরি হওয়া সত্ত্বেও দুই বাংলার( উপমহাদেশের কথা বললাম না কারণ মুম্বাইয়ের উত্তরণ ঘটেছে। অবশ্য নকল ছবিরও উত্তোরণ হয়েছে খুব) মূলধারার সিনেমাগুলোর বেহাল দশা কেন?
জ্ঞানীরা ভাবতে থাকুক। এই ভাবনায় যেন আর ৫০ বছর না পেরোয় সেই আশায় দিনগুনি।
পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রটি এদেশের গ্রামীণ সমাজের খন্ডচিত্রের একটি সাধারণ সমাবেশ। একজন গ্রামের দর্শক দেখবেন এ তার পাশের বাড়ির কিংবা তার বাড়িরই কোন নিত্য ঘটনা।
শহুরে বাবুটিরও মনে পড়ে যাবে অতীত জীবন কিংবা উচ্ছন্নে যাওয়া গ্রামকে বাঁচাতে ব্যবসায়িক স্বার্থে করা তার সাম্প্রতিক ট্যুরের কথা। মোদ্দাকথা একজন সাধারণ দর্শক পথের পাঁচালীতে পাবে চিরন্তন গ্রামীণ জীবনের চিত্র। কিন্তু জ্ঞানীদরে জন্য এতে রয়েছে গভীর চিন্তার বিষয়……..
বিশ শতকের বিশের দশকে বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অপু (সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়) ও তাঁর পরিবারবর্গের জীবনযাত্রার কথাই পথের পাঁচালী ছবির মুখ্য বিষয়। অপুর বাবা হরিহর রায় (কানু বন্দ্যোপাধ্যায়) নিশ্চিন্দিপুরের পৈত্রিক ভিটেয় তাঁর নাতিবৃহৎ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি পেশায় পুরোহিত।
আয় সামান্য। লেখাপড়া জানেন। তাই কিছু ভাল যাত্রাপালা লিখে অধিক উপার্জনের স্বপ্ন দেখেন। বাস্তবে তিনি অত্যন্ত ভালমানুষ এবং লাজুক প্রকৃতির লোক। সকলে সহজেই তাকে ঠকিয়ে নেয়।
পরিবারের তীব্র অর্থসংকটের সময়েও তিনি তাঁর প্রাপ্য বেতন আদায় করার জন্য নিয়োগকর্তাকে তাগাদা দিতে পারেন না।
হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া তাঁর দুই সন্তান দুর্গা (উমা দাশগুপ্ত) ও অপু এবং হরিহরের দূর সম্পর্কের বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুনের (চুনীবালা দেবী) দেখাশোনা করেন। দরিদ্রের সংসার বলে নিজের সংসারে বৃদ্ধ ন্যূজদেহ ইন্দির ঠাকরুনের ভাগ বসানোটা ভাল চোখে দেখেন না সর্বজয়া। সর্বজয়ার অত্যাচার অসহ্য বোধ হলে ইন্দির মাঝে মাঝে অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। দুর্গা পড়শির বাগান থেকে ফলমূল চুরি করে আনে ও ইন্দির ঠাকরুনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায়।
পড়শিরা এসে সর্বজয়াকে গঞ্জনা দেয়। একবার তো পড়শিরা এসে দুর্গাকে একটি পুতির মালা চুরির দায়ে অভিযুক্ত করে। তবে দুর্গাই যে চোর, সেকথা তারা প্রমাণ করতে পারেনি।
ভাইবোন অপু ও দুর্গার মধ্যে খুব ভাব। দুর্গা দিদি।
সেও মায়ের মতোই অপুকে ভালবাসে। তবে মাঝেমধ্যে তাকে খেপিয়ে তুলতেও ছাড়ে না। তারা কখনও কখনও চুপচাপ গাছতলায় বসে থাকে, কখনও মিঠাইওয়ালার পিছু পিছু ছোটে, কখনও ভ্রাম্যমান বায়োস্কোপ-ওয়ালার বায়োস্কোপ দেখে বা যাত্রাপালা দেখে। সন্ধ্যাবেলা দু'জনে দূরাগত ট্রেনের বাঁশি শুনতে পায়। একদিন তারা বাড়িতে না বলে অনেক দূরে চলে আসে ট্রেন দেখবে বলে।
কাশের বনে ট্রেন দেখার জন্য অপু-দুর্গার ছোটাছুটির দৃশ্যটি এই ছবি এক স্মরণীয় ক্ষণ। আবার একদিন জঙ্গলের মধ্যে খেলা করতে গিয়ে তারা ইন্দির ঠাকরুনকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।
গ্রামে ভাল উপার্জন করতে সক্ষম না হয়ে হরিহর একটা ভাল কাজের আশায় শহরে যায়। সর্বজয়াকে সে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় যে, ভাল উপার্জন হলে ফিরে এসে ভাঙা বসতবাড়িটা সে সারাবে। হরিহরের অনুপস্তিতিতে বাড়ির অর্থসংকট তীব্রতর হয়।
সর্বজয়া অত্যন্ত একা বোধ করতে থাকেন। বর্ষাকাল আসে। একদিন দুর্গা অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধায়। ওষুধের অভাবে তার জ্বর বেড়েই চলে। শেষে এক ঝড়ের রাতে দুর্গা মারা যায়।
এরপর একদিন হরিহর ফিরে আসে। শহর থেকে যা কিছু এনেছে, তা সর্বজয়াকে বের করে দেখাতে থাকে। সর্বজয়া প্রথমে চুপ করে থাকে। পরে স্বামীর পায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। হরিহর বুঝতে পারে যে, সে তার একমাত্র কন্যাকে হারিয়েছে।
তারা ঠিক করে গ্রাম ও পৈত্রিক ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে জীবিকার সন্ধানে। যাত্রার তোড়জোড় শুরু হলে, অপু দুর্গার চুরি করা পুতির মালাটা আবিষ্কার করে। সে মালাটা ডোবার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, অপু বাবামায়ের সঙ্গে গোরুর গাড়িতে চড়ে নতুন এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলেছে।
শ্রেষ্ঠাংশে
কানু বন্দ্যোপাধ্যায় - হরিহর, অপু ও দুর্গার বাবা
করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় - সর্বজয়া, অপু ও দুর্গার মা
সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় - অপু
রুমকি বন্দ্যোপাধ্যায় - শিশু দুর্গা
উমা দাশগুপ্ত - কিশোরী দুর্গা
চুনীবালা দেবী - ইন্দির ঠাকরুন
হরেন বন্দ্যোপাধ্যায় - মিঠাইওয়ালা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।