ক্লাশ এইট-এ থাকতে যখন "জুলভার্ন সমগ্র" পড়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল জুলভার্নের চেয়ে ভালো রাইটার বোধহয় আর নেই।
কিন্তু ক্লাশ টেন-এ উঠার কিছুদিন পরে যখন সলোমনের গুপ্তধন বইটি পড়লাম, তখন আমার ভুল ভাংলো ! তারপর যখন দ্য পিপল অফ দ্য মিস্ট পড়লাম, আমি প্রায় উদভ্রান্তের মতো হয়ে গেলাম। বইখাদক যতো ফ্রেন্ড ছিলো, সবার কাছে ধরণা দিলাম। কিন্তু হ্যাগার্ডের একটা বই ও কারো কাছে পেলাম না।
যে আমি কোনদিন একা একা সিলেটের বাইরে যাওয়ার কথা কল্পনাও করি নি, সেই আমি বাসার কাউকে না বলে নিজের যতো জমানো টাকা আছে, তা নিয়ে সিলেট টু ঢাকা ট্রেনে চড়ে বসলাম ! তা ও আবার বিনা টিকেটে !!! উদ্দেশ্য্ঃ সেবা প্রকাশনি, সেগুনবাগিচা, ঢাকা !
ট্রেনে টি.টি-র খপ্পড়ে পড়ি নাই, ফলে কোন ঝামেলা ছাড়া-ই ঢাকা পৌছলাম।
তারপর বহুকষ্ঠে "সেবা"য় গিয়ে হাজির হলাম । হ্যাগার্ডের সেবা প্রকাশিত সবগুলি বই যখন বগলদাবা করে শো-রুম থেকে বের হলাম, তখন আমার মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি !
ওদিকে সিলেটে তখন গরুঁখোজা চলছে ! আমি ট্রেনে উঠার সময়ই ভয়ে হাদারামের মতো মোবাইল বন্ধ করে দিসি ! আমার খোঁজে চার/পাঁচটা টিম নামানো হয়েছে। চাচাতো ভাই পুলিশে খবর দিয়েছেন ! আম্মু ফিট হওয়ার পথে, সবাই মিলে তাকে সান্তনা দিচ্ছেন। আমার ছোট ভাই-বোন দুইটা এইসব দেখে প্রথমে কিছুক্ষণ ইতি-উতি তাকিয়ে-- চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলো ! কে জানি আব্বুকে ফোন করে বলে দিসে ! ... সবাই ভাবলো, আমি কিডন্যাপড হয়ে গেসি। কারণ, ওই সময় [২০০৯ সাল] সিলেটে কিডন্যাপিং বেড়ে গেসিলো ! সব মিলায়া পুরা নরক গুলজার ! ।
আমি এইসবের কিছুই জানি না ! পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে আমার মাথা আউলা লাইগা গেসিল । সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুড়াঘুড়ি করে সিএনজি নিয়া কমলাপুর ষ্টেশনে গিয়ে হাজির হলাম । তারপর লম্বা লাইনে দাড়িয়ে টিকেট নিয়ে ট্রেনে উঠলাম !
রাত প্রায় ১০ : ০০ টায় ট্রেন ছাড়লো। একবার ভাবলাম বাসায় কল দিয়ে জানাই, কিন্তু ভয়ে আর কল দিলাম না ! ভোর ০৫:৩০ টার দিকে সিলেট পৌছার পর একটা রিকশা নিয়া সোজা বাসায় । বাসার সামনে গিয়া দেখি গেট পুরা খোলা ! আমি গেট লাগায়া পুরা নবাবের মতো চিল্লায়া, "আম্মু ! এত সকালে গেট খোলা কেন? বাসায় ডাকাত পড়ছে না কি!" কইয়া কইয়া ড্রইংরুম ঢুকলাম আর সামনের দিকে চাইয়া পুরা তব্দা খায়া গেলাম ! আমার বলার মতো যত রিলেটিভ আছেন, সবাই ড্রইংরুমে অগোছালো ভাবে বইসা আছেন !
আমারে দেইখা সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল ! ছোট মামাকে সবার সামনে দেখে বল্লাম, "কি হইছে মামা ? কোন সমস্যা?"
আমার কথা শুনে মামা কিছুটা থতমথ খেয়ে গেলেন।
পরক্ষণেই রাগে কিরমির করে বল্লেন, "তুমি কোথায় ছিলা, নবাবজাদা ? " তারপর আমার হাতে প্যাকেট দেখিয়ে বললেন, "তোর হাতে ঐটা কি?"
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, "ইয়ে ! কয়েকটা বই কিনতে ঢাকা গেসিলাম!"
আমার এই কথা শুনে বড়চাচা বারান্দা থেকে দৌড়ে আসলেন, তারপর এক রাম থাপ্পর !!! থাপ্পড়ের চোটে আমার হাত থেকে বইয়ের ব্যাগ ছিটকে সব বই ছড়িয়ে পড়ল ! প্রায় সবগুলি বইয়ের প্রচ্ছদেই মাইয়্যা মাইনষের ফটুক ! মুরুব্বিরা এইগুলা দেখে কি ভাবলো কে জানে ! .. আমার ছোট ভাই আর বোনটা এসে বইগুলা তুলে রাখলো (পিচ্চি দুইটা বড় ভালা ) ।
যাই হোক, এরপর শুরু হলো উপদেশ পর্ব !
দুই ঘন্টার সেই ম্যারাথন উপদেশ পর্বের বিভীষিকা আজও আমায় স্বপ্নের মাঝে তাড়া করে ফেরে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।