আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড় বিলাইয়ের ডায়রী থেকে: করাচী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট

আমার ব্যক্তিগত ব্লগ {ভূমিকা: বড় বিলাই এর ইরান যাওয়া ঠিক হওয়ার পর ওকে আমার ডায়রী দিয়ে বলেছিলাম ভ্রমন কাহিনী লিখতে, এখানে ওর লেখা তুলে দিচ্ছি} অক্টোবর ১৯, ১৯৯৪, ৪-১৮ পিএম, করাচী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট জিন্নাহ টারমিনাল আড়াইটের সময় প্লেন করাচী পৌছছে, এখন পর্যন্ত এখানেই আছি। আজ রাত এগারটায় তেহরান রওনা হবো। পাকিস্তানে আমাদের জন্য হোটেল বুক করা হয়নি। তেহরানে যাওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। এখানকার একজন লোক দয়া করে খাওয়া দাওয়া ফ্রী করে দিয়েছেন।

স্যুপ এসে গেছে। ৪-৫৫ পি এম স্যুপ শেষ করে খেলাম চিকেন কাকলেট। এরা সম্ভবত: লবন পছন্দ করে না। একটা খাবারেও লবন নেই। আমি জোর করে খানিকটা পেটে ঢুকিয়ে দেখি, আমিই সবচেয়ে বেশি খেয়েছি।

খালেদা খালাম্মা (মেয়ে প্রতিযোগীদের কেয়ারটেকার) লবন নেই শুনে একটা খাবারও মুখে দিলেন না। ক্বারী হুজুর (ছেলে প্রতিযোগী) কফির ওর্ডার দিলেন। বিশ্রী পানীয়। ৫-৩৯ পি এম কফি খাওয়া শেষ করে এখন বসে আছি। ক্বারী হুজুরের ভাষায় "কপি"।

পাশেই ফুল ভলিয়্যুমে টিভি চলছে। কিছুক্ষন পিটিভি২ চলে আবার কিছুক্ষন বি বি সি। অসহ্য লাগছে। ক্বারী হুজুর এখানকার দোকান থেকে কিছু কিনতে চাইছে, আমি বলে রেখেছি, আমাকে রেখে যেন কিনতে না যায়। সামনেই একটা টয়োটা করোলা কার রাখা আছে।

সম্ভবত: বিক্রি হবে। গাঢ় নীল রং, খুব সুন্দর। ৫-৫৭ পি এম আসরের নামায পড়ে এলাম। এখানকার নামাজ ঘর খুবই সুন্দর। আর এখানকার লোকগুলিও খুব ভাল।

এখানে মেয়েদের আলাদা ওযুর জায়গা নেই বলে আমরা ছেলেদের জায়গাতেই ওযু করতে গিয়েছিলাম। তা দেখে একজন লোক উর্দুতে আমাদের বলল, গোসলখানায় দরজা বন্ধ করে ওযু করলেই আমাদের জন্য ভাল হয়। এখানে এসে একজন পাকিস্তানিকেও পেলাম না যার গায়ের রং কালো। তারপরও আমাদের সাথে এখানকার লোকজন প্রথমে উর্দুতে কথা বলে। আমরা যতদূর পারি উর্দুতে উত্তর দেই।

আর একটু ইতস্তত: করলেই আবার এরা ইংলিশে কথা বলে। আমাকে একজন লোক শুধু জিগ্যাসা করেছিল, "আপ কাহা সে আয়ি হে?" আমি জিজি স্যার (ছেলে প্রতিযোগিদের কেয়ারটেকার)কে দেখিয়ে বলেছি, "মে উনকো সাথ আহি হু"। কারন এর আগে ওরা জিজি স্যারকে জিগ্যেস করেছে, কোথ্থেকে এসেছেন। ৬-৫৩ পি এম আল্লাহ জানেন, আর কতক্ষন এভাবে বসে থাকতে হবে। এদিকে নাক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে মাথা ভার হয়ে আছে।

আশে পাশে খুব সামান্য লোকজন বসে আছে, তারা আছে বলেই হাত পা ছড়িয়ে শুতে পারছিনা। ও হ্যঁা একজন কালো পাকিস্তানি মহিলা দেখেছি। এখানেই কাজ করে। আমাকে কিছুক্ষন পর পর ডায়রী লিখতে দেখে ফরিদা (অন্য প্রতিযোগী) বলল, ওর ডায়রীটা লাগেজের ভিতরে রেখে দিয়েছে। তাই কিছু লিখতে পারছে না।

এখন আমি একা বসে আছি। কিভাবে একা হলাম বলি, প্রথমেই তিন ব্যাটা আমাদের তিনজন মেয়েকে একা রেখে তিন দিকে ভেগে গিয়েছে। কিছুক্ষন আগে খালেদা খালাম্মা ফরিদাকে নিয়ে হাটতে বেরিয়েছেন। আমি যায়নি, আমার তো বসে থাকতেই বেশি ভাল লাগে। এইমাত্র ওরা ফিরে এলো।

৭-২২ পি এম মাগরিবের নামায পড়ে আসলাম। এখন আমাদের দলের পুরুষরা নামায পড়তে গিয়েছে। যখন আমরা নামায পড়তে যাই, তখন শুধু এরা আমাদের লাগেজ পাহাড়া দেয়। বাকী সময়টা এরা ঘুরে বেড়ায় আর আমরা পাহাড়া দেই। তবে এবার ওরা ফিরে এলে ক্বারী হুজুরকে নিয়ে আমি আর খালেদা খালাম্মা দোকানে যাব।

ক্বারী হুজুর ৭টা আতর আর ২টা কোটি কিনেছেন ২৭ ডলার দিয়ে। দেখি আমি কি পাই। ৯-৪৮ পি এম এখানে খুব বেশি দাম চাইছে। এখান থেকে কিছু কিনবো না। তাছাড়া কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেন এসে পড়বে।

কাজেই শপিং করলে, পরে কোন এক সময় করতে হবে। আমি কিছুক্ষন পর পর ডায়রী বের করে লিখি বলে জিজি স্যার জিগ্যেস করলেন, "কি তুমি কবিতা টবিতা লেখ নাকি?" আমি লজ্জা পেয়ে বললাম "জি না"। উনি আবার বললেন, "কি তুমি লেখা লেখি করো? তাহলে তো তোমাকে আমার দরকার" আমি হেসে বললাম, না লিখিনা । বলে তাড়াতাড়ি ডায়রী বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলাম। তারপর স্যার এন্টাসিড, সেটামল আর হিস্টাসিন দিলেন আমাকে।

আমি খালেদা খালাম্মাকে দিয়ে দিলাম। ১০-৪১ পি এম একটা কথা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। করাচী এয়ারপোর্টে এসে এ পর্যন্ত একটা মাত্র মশা চোখে পরেছে। আমার আশে পাশেই উড়ছে। এখনও কামড়ায়নি।

১১-০৪ পি এম মশাটা মারলাম না। নীচে চলে এসেছি। সাড়ে এগারোটায় মানে বাংলাদেশ সময় সাড়ে বারোটায় ফ্লাইট। আবার সেই বসে থাকার পালা। অসহ্য লাগছে।

আরও অসহ্য লাগছে টিভিটাকে। ঢিলা একটা গান চলছে, তাও ফুল ভলিয়্যুমে। একজন লোক, থামের পিছনে লোকটার মুখ, শুধু পা দেখা যাচ্ছে, লোকটা কিছুক্ষন পর পর ধ্যানে চলে যায় আর গানের তালে তালে মেঝেতে পা দিয়ে ঠকাস ঠকাস শব্দ করে, এক সময় ধ্যান ভাংলে চুপ হয়ে যায়। একটু আগে আবার শুরু হয়েছে। নভেম্বর ২০, ১৯৯৪, ১২-০১ এ এম এখানে এখন ১১টা বাজে।

আরও আধা ঘন্টা পর আমাদের ফ্লাইট। আমাদের লাগেজ কোথায় আছে, কে জানে? বিচিত্র মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে এখানে এসে। পায়ে তাল দেয়া লোকটা আর নেই। আরও একটা সুন্দর পরিবারের দেখা পেয়েছি। একটা ছোট্ট বাচ্চা (হাটতে পারে), তার বাবা-মা, সম্ভবত: খালা আর নানা-নানী।

বাচ্চাটাই সবচেয়ে সুন্দর, মা খালারাও সুন্দরী, বাবাটা বেশি সুন্দর না। নানী শুটকি আর নানা একরকম। ১২-১৭ এ এম একটু আগে ক্বারী হুজুর খবর দিল, আমাদের ফ্লাইট টা রাত ১টায়। অর্থাৎ রাত ২টায়। আরও আড়াই ঘন্টা বসে থাকতে হবে।

সত্যি বাস্তব আর কল্পনা পার্থক্য। এখন টিভিতে একটা ছোট ছেলে (আমার বয়সী) গান গাইছে। খুব সুন্দর গায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।