স্বার্থপরতাকে ঘৃণা করি তীব্রভাবে
-ইস , বৃষ্টি আসছে না কেনো ?!?
অনেকক্ষণ ধরেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটছে অনঘ । মনটা খারাপ হলেই বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে অনঘের । আজ তাঁর অনেক মন খারাপ কিন্তু কারো সাথে বলতে করতে পারছে না ব্যাপারটা । বৃষ্টি হলে একটা সুবিধা হলো তখন ইচ্ছে মতো কাঁদা যায় !! অনঘ ছেলে হলেও খুব আবেগপ্রবন যা হওয়া মোটেও উচিত নয় , কিন্তু সে জন্ম থেকেই এমন হয়ে গেছে ! জানে না , কেনো একটু কষ্ট পেলেই কাঁদতে ইচ্ছে হয় তাঁর ।
আর সবার সাথে দুঃখ ভাগ করে নিলে নাকি তা আরো কমে যা আর তাই সে বৃষ্টির সময়টাই বেছে নেয় ।
কারণ তখন সে পথে একা একা হাটে আর কাঁদে । মানুষ ভাবে তাঁর চোখ দিয়ে বুঝি বৃষ্টির ধারাই নামছে কিন্তু সে জানে কতটা দুঃখ সে উগরে দিচ্ছে তাঁর প্রতিটি চোখের জলের কণায় !! বোকা মানুষগুলোকে দেখলেই তাঁর মনটা ভালো হয়ে যায় কোন এক অদ্ভুত আনন্দে । হতে পারে সবাই তাকে বোকা ভাবে অথবা সে আসলেই অনেক বোকা । আসলে নিজেকে বোকা ভাবাটা নাকি অনেক জ্ঞানীর লক্ষণ কিন্তু নিজেকে অতি চালাক ভাবাটা কিসের লক্ষণ সেটা অনঘ এখনো জানে না । অতি চালাকের গলায় দড়ি হলে সেই দড়ি কোথায় তা এখনো সে জানেই না !!
দেখতে দেখতেই অনঘ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে ।
আগে এলাকার যেই চায়ের স্টলে বসে সবাই আড্ডা দিত , যাদের দেখলেই মাথা নিচু করে পাশে দিয়ে চলে যেতে হতো সেখানে সে এখন মহা গর্বে আড্ডা দেই , চা খায় , মাঝে মাঝে সিগারেট । সিগারেট খাওয়াটা আবার আল্টা মর্ডান ফ্যাশন কিনা ?? নিজেই নিজে হাসে অনঘ । আসলেই সে একটা আস্ত বোকা !! না , এবার নিজেকে বেশ চালাক মনে হচ্ছে অনঘের । নিজের উপর সমীহটা হুট করেই বেড়ে গেলো কয়েকগুন !!
আচ্ছা , চালাক মানুষদের কি পরিবারের বাইরে কাউকে দরকার হয় ?? জানে না অনঘ , তাই তো এখনো এমনভাবে কাউকে পায় নি । যে নাকি তাঁর কথা বলবে , পাগল ছেলে বলে মাথার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিবে বা দেরিতে ঘুম থেকে উঠায় ফোনে ইচ্ছামতোন গালি দিবে !! এসব ভালো নাকি সে জানে না শুধু জানে এসব করলে হয়তোবা মজা আরো বেশি ।
আর তাই সে চায় এমন কাউকে। অবশ্য সে অভাববোধাটা খুব কম মনে হয় । কারণ দুইটা হতে পারে ।
১) ওর মা অকে অনেক আদর করে । আসলে সব মায়েরাই এমন ।
সব সময় সন্তানদের ভালোবাসেন এভাবে ।
২) তাঁর বন্ধুমহল । অর বন্ধু মহলটা আসলেই আসাধারণ । ইচ্ছে করলেই মনের কথাগুলো ভাগ করে ফেলা যায় অবলীলায় ।
কিন্তু নিজের কথাগুলো বা সমস্যাগুলো তাদের সাথে ভাগ করতে ইচ্ছে হয় না ওর ।
কারণ ওর ধারণা সবাই কেমন জানি একটু বিরক্ত হয় । আচ্ছা , ও কি নিজেও এমন করে জানে না সে । কারণ তাঁর কাছে নিজের বন্ধুদের অনেক আপন মনে হয় । তাদের উপর কখনোই বিরক্ত হয় না সে। যদি না মনে হয় কেউ তাকে অবজ্ঞা করছে , যখন মনে হয় কেউ এমন করছে ইচ্ছে করে দুনিয়াটা ভেঙ্গে ফেলতে ।
আসলে সে হারতে চায় না , হারার খাতায় তারপর তাঁর নামটা সব সময় কিভাবে জানি আগেই থাকে ।
হুট করেই নিজের চরিত্রটা বদলে ফেলে সে । নিজের বন্ধুদের সাথে অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়ে যায় , ফলে যা হবার তাই হলো । যাদেরকে অনেক ভালো বন্ধু মনে হতো তাদেরকে দেখলো নিজেরদের স্বার্থ নিয়ে দূরে চলে যেতে । আবাক হয়ে গেলো সে , তাহলে ভার্সিটির বন্ধুগুলো কি এমনি ।
ইচ্ছে করে আবার বৃষ্টিতে ভিজতে , কিন্তু বৃষ্টি না আসলেও এবার সে নিজেই কাঁদে নিজের ঘরের কোনায় দাঁড়িয়ে , সুর্যাস্তের দৃশ্য দেখে আর ভালো জানে না , মনে হয় লাল সূর্যটা তাঁর দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে হাসছে । ওর সাথেই কেনো এমন হয় । পরিবারের কারো সাথেও শেয়ার করতে পারে না ঘটনাটা । নিজের উপর লজ্জা হয় , ঘেন্না হয় । ছিঃ , তাহলে সে এতোদিন কি ভেবে এসেছে !! তাহলে এটাই কি সত্যিকারের জীবন ?? এই প্রথম তাঁর মনে হলো তাঁর ২ নং ধারণটা ভুল ।
আসলে তার নিজের কাউকে দরকার !! কিন্তু কাকে , এই প্রশ্নটা অনেক বড় । ওর তো কিছুই নেই , পাগলাটে খেপা কবি বলেও অনেকে ডাকে তাকে । ধুর , ওর সাথে কেউ যায় না । এইসব ভেবেই দিনগুলি চলছিল তাঁর ।
কিন্তু মনের মধ্যে খচখচানিটা তো ছিলই ।
একদিন মনে হলো ও আসলেই কাউকে নিজের মতো করে পেতে চায় । কিন্তু সে কথা বলার মতো দুঃসাহস তাঁর তো এখনো হয়নি , এখনো এতটা নিলজ্জ হতে পারেনি তাঁর আবেগ , এখনো একটা বেপরোয়া হয়ে উঠেনি তাঁর স্প্রররধা !! কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলেও সে কিছুই করতে পারে নি । হয়তো মাঝে মাঝে তাঁর সাথে কথা হয় ।
প্রথম দেখাতে ভালো লাগা বা এমন কিছুই হয় নি অনঘের । এমনি মানুষের কাছে শুনতে শুনতে কখন সে শ্রাবন্তীর প্রেমে পরে যায় সে এখনো জানে না ।
শ্রাবন্তীর চেহারার মধ্যে নিশ্চয় কোন লাবণ্য আছে , নাহলে এমন তো হওয়ার কথা নয় । তাকে দিয়ে প্রেম হবে এটা কেউ বিশ্বাস করবে না । কিন্তু এখন তাকে বলতেই হবে তাঁর ভালোবাসসার কথা । কে যেনো সেদিন বলল , ভালোবাসার কথা সময়মতো বলতে না পারলে পাখি উড়ে যায় !! কথাটা একটু অশ্লীলভাবে শুনলেও কথাটা আসলেই সত্যি , যদি সে নাই বলে তাহলে কখনো কি আর শ্রাবন্তী বুঝতে পারবে তাঁর মনের কথা !!
ইতিমধ্যেই অনেকবার ফোনে কথা হয় অদের দুজনের । কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারেনি অনঘ ।
কি আর করার , সাতপাঁচ ভেবে এই হেমন্তটাকেই বেছে নেয় সে । যদিও আকাশে বৃষ্টি নেই তাও !! কান্নার জল হয়তো সবাই দেখবে , তাও !! কারণটা কি সেটা মনে হয় বিশ্বকবিও বলতে পারবে না !! না শীত , না গরম , না কিছু এই অসহ্য যন্তণা থেকে বাচার একটাই উপায় ।
অনেক ভেবেচিন্তে শেষ পর্যন্ত নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে সে , কি বলবে শ্রাবন্তীকে ।
কিভাবে বলবে তাঁর ভালোবাসার কথা , তাকে নিয়ে গড়া ছোট ছোট স্বপ্নগুলো যে
আজ পাহাড়সম হয়ে গেছে । ফোন দিয়ে শ্রাবন্তীকে একটা পার্কে আসতে বলে অনঘ ।
কিন্তু পারবে কি সে ?????
শেষ পর্যন্ত সেইদিন আসল । নিজেকে বেশ পরিপাটি করে গুছিয়ে নিল সে ।
অপেক্ষা করতে লাগল কখন আসবে শ্রাবন্তী ?? হঠাত করেই দেখল সে আসছে ,
অনঘের হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ । যখন সে দেখল যে শ্রাবন্তী আসছে ভয়ে সব গুলো
ফেলে দিল পাশে !! জানে না শ্রাবন্তী দেখেছে কি না কিছু !! হৃদ-স্পন্দনটা যেনো
বেড়ে গেলো বহুগুন !! শ্রাবন্তীকে আজ একদম অন্যরকম লাগছে । এতো সুন্দর
আগে কখনো লাগে নি তো অনঘের ।
দুজন মিলে অনেকক্ষণ কথা হলো , একসাথে খাওয়া – দাওয়া করলো ।
অনেকবার ভালোবাসার কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারে না সে , আজকালকের
ছেলেরা কত সহজে প্রতারণা করতে পারে , ও কেনো পারে না । আচ্ছা ,
শ্রাবন্তী কি বুঝতে পারছে সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না । না মনে হয়
না , আসলে মেয়েদেরকে বুঝা নাকি আইনস্টাইনের সুত্রের চেয়েও কঠিন !!
বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে গেলো কিন্তু সে কিছুই বলতে পারলো না শ্রাবন্তীকে ।
মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেলো ওর ।
শ্রাবন্তীকে বিদায় জানিয়ে সে একটা সিগারেট ধরাল । এখন অনেক বদভ্যাসের
একটা হলো মন খারাপ থাকলেই সিগারেট খাওয়া । এটাও কি আল্টা-মর্ডান
যুগের কাহিনি নাকি সে জানে না । এখন কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না । অন্য সময়
হলে হয়তোবা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থালা ভিক্ষুককে কিছু টাকা দিত সে , কিন্তু আজ
সে একদম ব্যতিক্রম ।
কিন্তুই করছে না । উলটো একটা টোকাইকে ইচ্ছামতোন
ঝাড়ি দিল । ঠিক তখনি তাঁর ফোনটা বেজে উঠল । দেখল একটা মেসেজ ,
শ্রাবন্তী পাঠিয়েছে । সেখানে লিখা ,
"tumi ekdom boka, kichui bolte paro na,tumar sob kothay ami bujhechi tumi ki
bolte chao,kintu tumake dekhlam tumi ki korte paro !! kichui parle na.....ami achi
tumar swopner raj konna hoye.......:-)...."
অনঘের বিশ্বাস হয় না কথাগুলো , অনেকবার ফোনটা দেখলো সে।
সে ভুল দেখছে
নাতো !! নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখলো সে , না সত্যি !! আকাশের দিকে
তাকিয়ে দেখলো আকাশে এই হেমন্তেও মেঘ জমেছে । তাঁর তো আজ বৃষ্টির দরকার
নেই , তাঁর আজ দরকার বৃষ্টির পর একটা বর্ণিল রংধনুর । সে আর শ্রাবন্তীর হাত
ধরে সেই রংধনু দেখবে আজ । বিধাতা নিশ্চয়ই তাঁর সাথে আজ খেলা করবেন না !!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।