আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হজ শুরু, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা ময়দান

যাহা বলি সত্য বলি.... আজ পবিত্র হজ। মুসলিম বিশ্বের প্রধান ধর্মীয় এ জমায়েত উপলক্ষে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান। মিনা থেকে ভোরে মহানবী রাসুলের (সা.) বিদায় ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত এ ময়দানে আসা হাজিরা নিজেদের মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। আর হজের ফরজগুলোর মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী এ বছর ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান হজব্রত পালন করছেন।

এর মধ্যে ১৮ লাখ হাজী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন এবং সঙ্গে রয়েছেন ৭ থেকে ৮ লাখ অভ্যন্তরীণ হাজী। এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এ বছর নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে মিনা, আরাফাত ও মুজদালেফাসহ মক্কা এবং তার আশপাশের এলাকা। আকাশে সার্বক্ষণিকভাবে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা হেলিকপ্টার। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সেনা সদস্যসহ হাজীদের নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত রয়েছে ১ লাখ নিরাপত্তা কর্মী।

৬ হাজার গাড়িতে টহল ডিউটি করছে নিরাপত্তা বাহিনীর ২২ হাজার সদস্য। এছাড়াও ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়াসহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে হাজার হাজার কর্মী। কোনো ধরনের দাঙা ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হাজিদের পথ দেখানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ১২ হাজার নারী-পুরুষ কর্মী। দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসকসহ ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী।

প্রতি বছর ইরানি হাজিরা মক্কায় মিছিল করে থাকেন। এ বছর এ ধরনের কর্মকা- থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য হুঁশিয়ার করে দিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদি সরকার এ ধরনের কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শুক্রবার ভোরে। এদিন ফজরের নামাজের পরই হাজিরা বাস, গাড়ি অথবা হেঁটে মক্কা নগর থেকে ইহরাম বেঁধে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মিনায় যান।

হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থানের দিন। আর এই মিনাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ সালে হজ পালন করেন। মহান আল্লাহর কাছে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় আরাফাতের ময়দানে সমবেত ধর্মপ্রাণ এসব মুসলমান হাজিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। তারা জোহর ও আসরের নামাজও আদায় করবেন এ ময়দানে। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ বা সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন।

শুভ্র সেলাইবিহীন এক কাপড়ে সবাই হাজির হয়েছেন মহান আল্লাহর দরবারে তার নৈকট্য লাভের আশায়। মধ্যাহ্নের পর মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শেখ। দৃষ্টিহীন এ ইমাম তুলে ধরবেন মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি ও কোরআন-হাদিসের আলোকে করণীয় দিকনির্দেশনা। পরে আল্লাহর এসব মেহমানরা পাঁচ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে তাঁরা সেখানে অবস্থান করবেন এবং শয়তানকে মারার জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন।

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা আবার মিনায় যাবেন। আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার এক দিন আগে মিনায় জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। এ সুন্নত আদায় করতে হাজিরা হজের এক দিন আগে যথারীতি রাত মিনায় অবস্থান করেন। হজের নিয়মানুযায়ী হাজীরা বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিবেন এবং মাথার চুল ছেঁটে বা ন্যাড়া করে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় বদল করবেন।

পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে তাঁরা কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন এবং কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া সাই করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় এসে আরও দুই দিন অবস্থান করে হজের বাকি কাজ শেষ করবেন। পরে মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ শেষ করে যারা মদিনা যাননি, তারা মদিনা যাবেন। যারা আগে মদিনায় গেছেন, তারা নিজ দেশে ফিরে যাবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।