‘‘Rap গান’ গান’ এর সাথে আমাদের পরিচয় মুলত ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গীত শিল্পীদের মাধ্যমে। ৮০র দশকের শেষ দিকে এই বিদেশি ঢঙের গান বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। মুলত ‘Rap গান’ এর কথা উঠলেই চোখে ভাসে গানের ছন্দে জীবনের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতে থাকা কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের মুখ। কারন আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পিরা এই গানগুলো বেশি গাইতো। কিন্তু ১৯৯৩ সালে প্রথম বুঝলাম আমাদের দেশের শিল্পীরাও অতি চমৎকার ভাবে মানসম্পন্ন ‘Rap গান’ গাইতে জানে।
সেই ১৯৯৩ সালেই প্রথম প্রকাশ পায় বহু আলোচিত ও জনপ্রিয় “ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা “ নামে ৩জন শিল্পীর প্রথম বাংলা Rap গান’। যেখানে ছিলেন পার্থ বড়ুয়া, আশরাফ বাবু ও আজম বাবু (সাউনড ইঞ্জিনিয়ার)। এরা সেই অ্যালবাম দিয়ে তখনকার মেলোডি গানের বাজারে একটা ভূমিকম্প ঘটিয়ে দিয়ে বছরের অন্যতম ব্যবসা সফল অ্যালবাম এর স্থান দখল করে নেয়। সেই সময় অলিগলি গ্রামে গঞ্জে যেখানেই যাই সেখানেই দেখি এই “ত্রিরত্ন” আছেই। তাদের গানের মাঝে সেসময় অতি চমৎকার ভাবে আমাদের চোখের সামনে অহরহ ঘটতে থাকা অনেক বিষয় নিয়ে তারা ব্যাঙ্গাত্তক ভাবে তুলে ধরে।
যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। অ্যালবাম এর প্রথম গানেই মানুষ বুঝতে পারে যে অ্যালবামটি কত মজা দিবে শ্রোতাদের। প্রথম গান ‘চলছে” এর মাঝে ফুটে উঠে টেলিভিশন ও চলচিত্রের বিভিন্ন জনপ্রিয় বিষয় কে অতি চমৎকার ভাবে তুলে ধরে। গানের মাঝখানে একটা কথা ছিল “ও শ্রোতা শুনছেন নাকি আমাদেরই বিটলামি, সময় নষ্ট করবে জানি আমাদের এই গানটি” কতটুকু বুদ্ধিমান শিল্পী হলে শ্রোতাদের এমন কথা বলে গানটা পুরো শেষ না করে আপনি যে চলে যেতে পারবেন না তা বুঝিয়ে পারে একজন শিল্পী তা এই গানটি প্রমান করে। গানটা যে প্রথম শুনবে সেও পুরো গান না শুনে থাকতে পারবে না।
তার কারন গানের বিষয়বস্তু,কথা ও সুর এতো চমৎকার ভাবে সমন্বয় করা হয়েছে যা সত্যিই না শুনলে বিশ্বাস হবে না। এমন কি পুরো অ্যালবাম এর কোন গানেই আপনি বুঝতে পারবেন না যে শিল্পিরা এই প্রথম “Rap গান” গাইছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনে হবে অনেক পেশাদার ‘Rap গান’ এর শিল্পিরা এই অ্যালবাম তৈরি করেছে। সবগুলো গানের বিসয়বস্ত, কথা ও সুর এতো নিখুঁত ও চমৎকার ছিল যে শিল্পিরা একটি বারও সেই বিষয়ের বাহিরের কোন বিষয় ভুলক্রমেও স্থান দেয়নি।
অথচ আজ থেকে ১৮ বছর আগে প্রজুক্তির এতো সুবিধা শিল্পীদের ছিল না।
গানের মাঝে ‘SOFTWEAR’ এর ব্যবহার ছিল না। যা করা হতো তা ছিল সব শিল্পীদের চেষ্টা ও আন্তরিকতা দিয়ে। এই অ্যালবাম এর রেশ কাটতে না কাটতে আবার বাজারে আসে “হ য ব র ল’ অ্যালবাম। যেখানেও ছিল ৩জন । ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা থেকে আজম বাবুর বদলে এখানে যোগ দেয় ‘চারু’ যে কিনা আরেকজন সাউনড ইঞ্জিনিয়ার।
এখানেও আগের মতই দুর্দান্ত পার্থ ও আশরাফ বাবু। দুর্দান্ত তাদের সব বিষয়বস্তু যেটি ১ম অ্যালবাম এর মতো সফলতা পায়। তাদের মাধ্যমে বাংলা গানের যে অপূর্ণতা ছিল সেটি পূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশে ‘র্যা প গান’ এর একটি ধারা সূচনা হয়। কিন্তু তাদের মতো করে এতো চমৎকার ও মানসম্পন্ন ‘Rap গান’ অন্য কেউ গাইতে পারেনি।
আজো আমার সমবয়সী সব শ্রোতাদের কাছে ঐ অ্যালবাম দুটো অতি প্রিয় অ্যালবাম এর তালিকায় আছে ও থাকবে। আমাদের এই প্রজন্মের অলস শিল্পীদের তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। যারা প্রযুক্তি নির্ভর করে অ্যালবাম এর গানে বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করে তাদের কে ঐ অ্যালবাম দুটো অনেক কিছু শিখাতে পারে। প্রযুক্তি তৈরি করেছে মানুষ, কিন্তু প্রযুক্তি মানুষ তৈরি করেনি এই সত্যটা কেন আমরা ভুলে যাই? মানুষ তার চেষ্টা ও স্রম দিয়ে কাজের মাঝে প্রজুক্তির চেয়েও সুন্দর বৈচিত্র্য আনতে পারে ঐ অ্যালবাম দুটো তারই প্রমান। অল্প “MICRO WAVE” এ রান্না করা পোলাও আর ‘মাটির চুলায়” রান্না করা পোলাও এর স্বাদ এক রকম নয়।
MICRO WAVE” এ রান্না করা পোলাও এর চেয়ে ‘মাটির চুলায়’ রান্না করা পোলাও এর স্বাদ বেশি হবে। কারন ‘’MICRO WAVE” এর রান্নায় তেমন পরিশ্রম ও মমতা নেই কিন্তু ‘মাটির চুলা”য় রান্নার করার মাঝে আছে পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও রান্নার প্রতি মমতা। তাই অতি ধীরে ধীরে সেখানে পোলাও রান্না করা হয়। আর ‘’MICRO WAVE” এ অতি দ্রুত ও অল্প সময়ে রান্না হয় যা হয়তো সময়কে একটু বাঁচিয়ে দেয়। কিন্তু মনে রাখবেন তাড়াহুড়ো করে কাজ করা যায় কিন্তু কাজটার মাঝে কোন আন্তরিকতা ও শ্রম থাকেনা বলে কাজটার মানও থাকে কম।
তাড়াহুড়ো করে কোন কাজ করা কখনও ভালো না। আমরা চাই আগে যেমন করে এতো বেশি ভালো ভালো ও চমৎকার গান পেয়েছি সেই রকম ধারা অব্যাহত থাকুক। শিল্পী যেন তার মেধা দিয়ে গান তৈরি করে, ঝটপট চুরি করে যেন গান তৈরি না করে। ১৮ বছর আগে যদি র্যা প গান এর মান ১০০ থাকে তাহলে ১৮ বছর পর কেন আমরা ৫০ % মান পাবো? এর চেয়ে আমার ১৮ বছর এর আগে ফিরে যাওয়াই ভালো!
‘ত্রিরত্নের ক্ষ্যাপা ও হ য ব র ল” অ্যালবাম দুটো পুরোটা পেতে হলে এখানে যান- (https://www.facebook.com/kokbd24)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।