আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ জেলহত্যা দিবস।

আমি একজন মেকানিক্যাল ইন্জ্ঞিনিয়ার আজ ৩ নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে বেদনাময় ও কলঙ্কিত দিন। বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী মহান মুক্তিযুদ্ধের চার সিপাহসালার ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা জাতীয় চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে '৭১-র পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে বিরল।

এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল বিশ্ব। জেলহত্যা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মুছে ফেলাই ঘাতকদের উদ্দেশ্য ছিল। বাঙালি জাতির ইতিহাসে জাতীয় চার নেতার অবদান চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা হত্যা ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতারই অংশ। ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর হয়েছে, জেলহত্যা মামলা বিচারাধীন, যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার শুরু হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, প্রগতি, মানবাধিকার, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল, কিন্তু সফলকাম হতে পারেনি। বিশ্বাসঘাতক খুনিদের উদ্দেশ্য আজ জাতির সামনে পরিষ্কার।

আজ নতুন সূর্যের আলোর মতো প্রকাশিত হয়েছে সত্য, মূলত হত্যাকারীরা এবং তাদের সহযোগীরা চেয়েছিল পাকিস্তান ভাঙার প্রতিশোধ নিতে, মুক্তিযুদ্ধ ও অপরিসীম ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশটিকে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির আবর্তে নিক্ষেপ করতে। এখানেই শেষ হয়নি স্বাধীনতার শত্রুদের ষড়যন্ত্র। '৭৫-এর পর থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলব হিসেবে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ বেরিয়ে আসছে। ইতিহাসের পথকে যারা দুর্গম করে দিতে চেয়েছিল বাঙালি জাতি তা ব্যর্থ করে দিয়েছে।

জাতি এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ২০০৮ সালের আগস্টে উচ্চ আদালতের রায়ে আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রায় সবাই খালাস পাওয়ার পরও ন্যায়বিচারের দাবি থেকে জাতি সরে দাঁড়ায়নি। এবারের জেলহত্যা দিবসেও তাদের দাবি 'জেলহত্যার পুনর্বিচার ও খুনিদের ফাঁসি চাই'। এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দেশবাসীর প্রত্যাশা জেলহত্যারও অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে, দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে।

জাতীয় চার নেতা হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি সুনিশ্চিত করা ছাড়া জাতি কোনোভাবেই কলঙ্কমুক্ত হতে পারবে না। জাতীয় চার নেতার রক্তঋণ শোধ না করে জাতি তার ইপ্সিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারে না। অবিলম্বে জেল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তি হবে জনগণ এটাই কামনা করে। গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে, স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে এবং আওয়ামী লীগকে জনগণের প্রাণপ্রিয় দলে পরিণত করার কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অবদান অবিস্মরণীয়। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি ও গৌরবদীপ্ত অর্জনের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিতি করানো হোক আজকের এই শোকাবহ দিনের প্রতিজ্ঞা।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও আওয়ামী লীগ গোটা জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় এ দিবসটি পালন করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয়সহ দেশের সর্বত্র সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ। ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতার কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মুনাজাত। রাজশাহীতে শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মুনাজাত।

বিকাল সাড়ে ৩টায় আলোচনা সভা। স্থান : বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।